ম্যাচ জুড়ে গ্যালারি থেকে ভেসে এলো ‘মেসি, মেসি, মেসি...’ গর্জন। ৫০ হাজার কণ্ঠের সেই গর্জনে প্রকম্পিত বোকা জুনিয়র্সের মাঠ। দর্শকের এমন আবেগ-ভালোবাসা স্পর্শ করে স্বয়ং লিওনেল মেসিকেও। দলের দাপুটে জয়ে গোল করার পাশাপাশি দুর্দান্ত খেলে আর্জেন্টিাইন মহাতারকা মাঠেই দিলেন তার প্রতিদান। পরে ভক্ত-সমর্থকদের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে দলনেতা জানালেন কৃতজ্ঞতা। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে দারুণ জয়ের পর দল নিয়ে মাঠে ‘ল্যাপ অব অনার’ দিয়ে দর্শকের অভিনন্দনের জবাবও দেন তিনি। এ সব কিছুর মাঝেই যেন লুকিয়ে অপ্রত্যাশিত এক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত; মিলল মেসির ক্যারিয়ারের ইতি টানার আভাস। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সামনে নিজের অনুভুতি জানাতে গিয়ে আর্জেন্টিনা অধিনায়কও দিলেন তার আন্তর্জাতিক ফুটবলের সম্ভাব্য শেষের ইঙ্গিত। তবে নিশ্চিত করে বলেননি কিছ্।ু
কাতার বিশ্বকাপের টিকেট আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করেছে আগেই। তাই বাছাইয়ের বাকি ম্যাচগুলো তাদের কাছে বিশ্বকাপের জন্য দল গুছিয়ে নেওয়ার উপলক্ষই বলা যায়। সেই লক্ষ্যে বোকা জুনিয়র্সের মাঠে বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোরে মাঠে নেমে দাপুটে পারফরম্যান্সে ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় স্বাগতিকরা।
সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন লিওনেল মেসি দেশের মানুষের কাছে সবসময়ই অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছেন। যদিও মাঝে এমন একটা সময় এসেছিল যখন তার দেশেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, বার্সেলোনায় যতটা নিজেকে উজাড় করে দেন মেসি, জাতীয় দলেও কি দেন ততটা। ২০১৪ বিশ্বকাপ ও পরের দুই বছরের কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও আর্জেন্টিনা শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়েছিল। ওই তিন ফাইনালে মেসি ব্যবধান গড়ে দিতে ব্যর্থ হওয়াতেও সমালোচকরা পেয়েছিল বাড়তি রসদ। একসময় তাদের শিরোপা খরা দীর্ঘ হয় ২৮ বছরে। অবশেষে সেই খরা কাটে গত বছর। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে তাদের মাঠেই হারিয়ে উৎসবে মাতে আর্জেন্টিনা। এরপর থেকে আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকদের উল্লাসের যেন শেষ নেই। গত জুনের পর দেশের মাঠে মেসিরা খেলতে নামলেই দারুণ সমর্থন পায় পুরো দল। তবে ভেনেজুয়েলার ম্যাচটি যেন ছিল মেসি-ময়।
সর্বকালের সেরাদের একজন হলেও মেসির প্রতি আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকদের ভালোবাসা কতটা তীব্র, সেটি নিয়ে একসময় সংশয়ে কিছু আলোচনা শোনা যেত। তবে গতবছর কোপা আমেরিকা জয়ের পর থেকে সংশয়ের লেশমাত্র নেই। ভেনেজুয়েলাকে হারানোর পর মেসি অবশ্য বললেন, তার নিজের মনে সংশয় ছিল না কখনোই, ‘এই মানুষগুলোর কাছ থেকে এর চেয়ে কম কিছু আমি আশা করিনি। আর্জেন্টিনার মানুষ ও এই দলের বন্ধন সবসময়ই দারুণ। আমি এখানে খুশি দীর্ঘদিন ধরেই, কোপা আমেরিকা জয়ের আগ থেকেই। লোকে সবসময়ই দেখিয়েছে, তারা আমাকে ভালোবাসেন এবং আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। এই ভালোবাসা সহজাতভাবেই আসে এবং তাতে মাঠের ভেতরে ও বাইরে আমাকে তা অনুপ্রাণিত করে।’
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের আগে এটিই হতে পারে দেশের মাঠে আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচ। সেক্ষেত্রে এটি হতে পারে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ঘরের মাঠে মেসির শেষ ম্যাচ। দর্শকদের বাড়তি ভালোবাসার এটাই কি তাহলে কারণ? জবাবটা অজানা রয়ে গেলেও ম্যাচ শেষে ভবিষ্যত প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কিছুটা হলেও তেমন আভাস দিলেন গত অগাস্টে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেওয়া মেসি, ‘বিশ্বকাপের পর কী করব, আমি জানি না। এরপর কী হতে পারে, তা নিয়ে ভাবছি আমি। কাতার (বিশ্বকাপের) পর অনেক কিছু নিয়েই আমাকে ভালোমতো ভাবতে হবে। (জাতীয় দলের হয়ে) খেলা চালিয়ে যাব কি-না, আমি জানি না। বিশ্বকাপের পর কী হবে বা কী করব, ভেবে দেখব। এই মুহূর্তে আমার ভাবনায় কেবল ইকুয়েডর ম্যাচ(আগামী মঙ্গলবার) এবং তারপর জুন ও সেপ্টেম্বরের প্রস্তুতিমূলক ম্যাচগুলো। আশা করি, সবকিছু ভালোমতো এগিয়ে যাবে। তবে এটা নিশ্চিত, বিশ্বকাপের পর অনেক কিছু বদলে যাবে।’
গত ১২ বছরে মেসি যেসব ম্যাচে গোল করেছেন তার কোনোটিই হারেনি আর্জেন্টিনা। সবশেষ ম্যাচে সেই রেকর্ডটা আরও দীর্ঘ হয়েছে। প্রথমার্ধে নিকোলাস গনসালেস ভেনেজুয়েলার জালে বল পাঠানোর পর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ান অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। শেষ গোলটি করেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন