‘সাকিব আল হাসানকে নিশ্চয়ই মিস করবেন?’ টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে মাঝে-মধ্যেই প্রশ্নটা শুনতে হয় মুমিনুল হককে। মুমিনুলও প্রায় সময় একই উত্তর দেন। সাকিবের মতো অলরাউন্ডার থাকলে দলের সমন্বয় ভালো হয়। বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান, নাহয় একজন বোলার রেখে একাদশ সাজানো যায়। গতকাল ক্রিকেটীয় কথাবার্তার সঙ্গে একটু হতাশাও জুড়ে দিলেন টেস্ট অধিনায়ক, ‘উনি প্রায় সময়ই তো থাকেন না। তার থাকাটাই বরং সৌভাগ্যের মনে হয়। উনি থাকলে টিম কম্বিনেশন অনেক সহজ হয়। একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান বা বোলার খেলানো যায়। এখন যেহেতু নেই, যারা আছে, যে অস্ত্র আছে, তাদের কাজে লাগিয়েই ম্যাচ জেতার চেষ্টা করতে হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ খেলে দেশে ফেরা সাকিব এখন পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের সময় দিচ্ছেন। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে প্রথম ম্যাচে সাকিবের না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সাকিবের দ্বিতীয় টেস্ট খেলার ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে। টেস্ট ক্রিকেট ও সাকিবের এই টানাপোড়েন অবশ্য নতুন নয়। দেশের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন গত বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে। গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ দুটি টেস্ট খেলেছে। ব্যক্তিগত কারণে সেই সিরিজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন সাকিব।
শুধু সাকিব নন, টেস্ট ক্রিকেটে অনিয়মিত দলের আরেক অভিজ্ঞ তামিম ইকবালও। তামিম সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন গত বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। চোটের কারণে এর পর থেকে টেস্টে তিনি নিয়মিত ছিলেন না। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ দিয়ে তামিম লাল বলের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করবেন। টপ অর্ডারে একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ফেরায় টেস্ট অধিনায়ক স্বস্তিতে আছেন। মুমিনুল বললেন, ‘নিউজিল্যান্ডে তামিম ভাইও ছিলেন না, সাকিব ভাইও ছিলেন না। শুধু মুশফিক ভাই ছিলেন। অনেককে হয়তো পাব না, তবে আমি সব সময় আশাবাদী থাকতে পছন্দ করি। এখন তামিম ভাই আছেন। তার ভূমিকা আমার দলে খুব গুরুত্বপূর্ণ। দলের কাজ সহজ হলো। তামিম ভাই এলে টপ অর্ডারের কাজটা সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে দেশের বাইরের টেস্টগুলোতে।’
এ ছাড়া লিটন দাস ও তাসকিন আহমেদের ফর্মও মুমিনুলকে টেস্ট সিরিজের আগে আশাবাদী করছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডেতে ভালো করার আত্মবিশ্বাস টেস্টেও কাজে লাগবে বলে বিশ্বাস মুমিনুলের, ‘তামিম ভাই, সাকিব ভাই, লিটনের ব্যাটিং, তাসকিনের বোলিং-গত কয়েক দিন খুব উপভোগ করেছি। এটা অবশ্যই টেস্ট দলকে আত্মবিশ্বাস দেবে। কেউ এক ফরম্যাটে ভালো করে অন্য ফরম্যাটে গেলে, সেখানে তা দলের জন্য আত্মবিশ্বাস হিসেবে কাজে দেয়। যদিও ফরম্যাট ভিন্ন, কন্ডিশনও একটু অন্য রকম হতে পারে। দিন শেষে এই আত্মবিশ্বাস আর প্রেরণাগুলো কাজে লাগে।’
মুমিনুলের কথায় সতর্কবার্তাও ছিল। ধারাবাহিকভাবে ভালো করে আসায় তৈরি হওয়া প্রত্যাশার চাপের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণ কেমন করবে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় আছেন টেস্ট অধিনায়ক, ‘এটা আমার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। সবাই জানে, আমাদের পেস বোলিং এখন ভালো। একই সঙ্গে ওদের চ্যালেঞ্জটাও নিতে হবে। এটার জন্য অনেক সময় লেগেছে আমাদের, লম্বা সময় লেগেছে। খেলতে খেলতে আরও অভিজ্ঞ হবে ওরা, তখন আরও সহজ হবে।’ টেস্ট দল যে এখনো ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেটি মুমিনুলের কথাতেই বোঝা যায়। তবে আরও কয়েক বছরের সংগ্রামের পর হয়তো টেস্ট দলেরও স্থিতিশীলতা আসবে। মুমিনুল বলছিলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে আরও দু-তিন বছর সংগ্রাম করতে হবে। ওয়ানডেতে আমরা খুব ভালো দল। কিন্তু টেস্টে আরেকটু সময় লাগবে, আরেকটু কষ্ট করতে হবে।’
চেষ্টার অবশ্য কমতি নেই টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটারদের। ওয়ানডে দলের সঙ্গেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছেন মুমিনুলরা। কিন্তু ওয়ানডে দল যখন সাদা বলে ব্যস্ত, সে সময় গ্যারি কারস্টেনের একাডেমিতে বিশেষ অনুশীলন ক্যাম্প করেছেন টেস্ট দলের ক্রিকেটাররা। দেশ ছাড়ার আগে বগুড়াতেও বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্প ছিল টেস্ট দলের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে। মুমিনুল এ ব্যাপারে বলছিলেন, ‘ক্যাম্প খুবই ভালো ছিল। পাঁচ-ছয়জন ছিলাম, খুবই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি। কীভাবে কন্ডিশন কাজে লাগানো যায়, কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য শেখা যায়... কারস্টেন দু-তিন দিন ছিল, দু-তিন দিনে কেউ কোনো ব্যাটসম্যানের খুব বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারবে না। কন্ডিশন অনুযায়ী কীভাবে খেলতে হবে, বোলাররা কোন লেংথে বল করবে, ব্যাটসম্যানরা কীভাবে ব্যাটিং করবে—এসব ছোট ছোট জিনিস ভাগাভাগি করেছে।’
প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে জয় আসবেই। এখন পর্যন্ত টেস্ট সিরিজের আগে মুমিনুলের প্রস্তুতির প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল খুঁজে পাওয়া যাবে না। মুমিনুল তাই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেন না, ‘জয়ের ব্যাপারে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী। অধিনায়ক হিসেবে সব সময় জয় চাই। আগে যা হয়েছে, এসব নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। প্রথম ম্যাচ থেকেই আমি অনেক মনোযোগী। পাঁচ দিন কীভাবে অনেক দাপট দেখিয়ে খেলতে পারি, এই চিন্তা করছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন