দীর্ঘ নির্বাসিত জীবনের গভীর বেদনার ধুপশিখায় কবি মাহমুদ দারবিশ প্রথমে আরবি ধ্রুপদী সাহিত্যেরের ভাবধারায় লেখালেখি শুরু করেন, পর্র্বতীতে মুক্তছন্দের মায়াজালে স্থিতু হন। তাঁর কবিতায় যেমন খুঁজে পাওয়া যায় হারানো প্রেমের বেদনা ও আক্ষেপ , তেমনি খুঁজে পাওয়া যায় প্রতিবাদের চিৎকার। মাহমুদ দারবিশ বেশ কয়েক বার প্রেমে পড়েছেন। তিনি ছিলে আমাদের নজরুলের মতো কখনো প্রেমিক, কখনো বিদ্রোহী। কবিতার জন্যে দারবিশ ১৬ বছর বয়সেই কারা ভোগ করেছিলেন। তিনি কবিতার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও সম্যবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কমিউনিস্ট আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন এবং রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। আধুনিক আরবি সাহিত্যের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র ফিলিস্তিনি জনগণের প্রাণের মানুষ হয়ে ওঠেছিলেন।
মাহমুদ দারবিশ ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০০৭ সালে একটি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। কবির ইচ্ছা অনুযায়ী ফিলিস্তিনির রামাল্লার প্যালেস অব কালচারে একটি পাহাড়ের চূড়ায় সমাহিত করা হয় যেখান থেকে জেরুজালেম স্পষ্টই দেখা যায়।
কবি নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি অনেক বার প্রেমে পড়েছেন। তবে বিয়ে করেছিলেন মাত্র দুটি। দু’জনই লেখিকা ছিলেন। কাউকে তিনি ধরে রাখতে পারেন নি। সাংসারিক জীবন তাঁর তেমন একটা সুখময় হয় নি এবং তিনি কোনো সন্তানের জনকও হতে পারেন নি।
মাহমুদ দারবিশ মোট ৩৮ টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখা এখন পর্যন্ত ২২ ভাষায় অনূদিত হয়েছে বলে জানা যায়। লেখক জীবনের প্রাপ্তি হিসাবে তিনি পেয়েছেন নানা পুরস্কার। তিনি ২০০৭ সালে পেয়েছেন গোল্ডেন রিদ পুরস্কার। ২০০৪ সালে পেয়েছেন প্রিন্স ক্লাউস পুরস্কার, ২০০১ সালে পেয়য়েছেন লেনান ফাউন্ডেশন প্রাইজ, ১৯৯৩ সালে ফ্রান্স থেকে দেওয়া হয় দ্য নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস এন্ড লেটারস সম্মাননা।
কবির একটি কবিতা-
বিস্মৃতির স্মৃতি
এই সেই রাস্তা,
আর এখন ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা।
দিগন্ত যেন ইস্পাতের বলয়।
আমার নিশ্বাস আবেগের কথা
আমি এখন কাকে বলব
এই রাস্তায় এমন আস্তে হাঁটছি
যেন একটা জেট বিমানও
আমাকে বোমার লক্ষ্য হিসাবে ভুল না করে।
শূন্যতা কার করাল বিস্তৃত করেছে,
কিন্তু তাও আমাকে গ্রাস করল না।
লক্ষ্যহীনভাবে এগিয়ে চলছি,
যেন এই রাস্তাগুলোকে আমি
প্রথমবার চেনার চেষ্টা করছি
এবং শেষবারের মতো হেঁটে চলছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন