ভারতের বিপক্ষে জোহানেসবার্গ ও কেপটাউন টেস্টে চার ইনিংসে তিনটি অর্ধশতক পেয়েছিলেন কিগান পিটারসেন। শতক পেয়েছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বশেষ ইনিংসেও। এমন ফর্মে থাকা এক ব্যাটসম্যানকে আউট করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন পিটারসেন। আবেদন করলেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। নিজেদের আবেদনে নিজেরাই আস্থা রাখতে না পারা বাংলাদেশ রিভিউ নেয়নি। সে যাত্রায় বেঁচে যান পিটারসেন।
হারানো সুযোগ অবশ্য একটু পর নিজ থেকেই ধরা দিল বাংলাদেশের কাছে। চার ওভার পর সেই তাসকিনের বল পয়েন্টে খেলে দৌড় দিয়েছিলেন টেম্বা বাভুমা। সেখানে ফিল্ডিংয়ে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের কাজটা খুব কঠিন ছিল। যেখানে ছিলেন, একটা মাত্র স্টাম্পই দেখা যাচ্ছিল। সেই অবস্থায় ডাইভ দিয়ে বল ধরলেন, শরীরটা শূন্যে রেখেই থ্রো করলেন। সরাসরি থ্রো যখন স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প ভাঙছে, ১৯ রানে থাকা পিটারসেন তখনো পৌঁছাতে পারেননি। তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই সেশনে তৃতীয়বারের মতো উৎসবে মাতে বাংলাদেশ। গতকাল শুরু হওয়া বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ডারবান টেস্টের দিনের হাইলাইটস বলতে গেলে এটিই। শুরুটাই যে হয়েছে হতাশার এক সিদ্ধান্তে।
কিংসমিডের উইকেটে কিছুটা ঘাস দেখতে পেয়েছেন, আর্দ্রতাও আছে তাই টস জিতে বোলিং বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। অথচ টস হেরেও যেন অখুশি নন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ডিন এলগার। তখনই জানিয়েছেন, টস জিতলেও যে আগে ব্যাটই করতেন তারাও। কেন তেমন সিদ্ধান্ত নিতেন প্রথম সেশনে বুঝিয়েও দিয়েছেন এলগার। ডারবানে গতকাল সাইট-স্ক্রিন জটিলতায় আধঘন্টা পর শুরু হওয়া টেস্টের প্রথম সেশন স্বাগতিকদের। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ২৫ ওভারে বিনা উইকেট ৯৫ রান। এতে যদিও অবদান আছে বাংলাদেশেরও। প্রথম সেশনেও যে সুযোগ হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ। সারেল এরউই ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। মিরাজের বলে দেওয়া ক্যাচটাকে কঠিন বলার উপায় নেই। কিন্তু উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্বে থাকা লিটন ঠিকমতো বলটা গ্লাভসে রাখতে পারেননি। তাতে ৩২ রানে জীবন পেয়েছেন এরউই।
তবে ৩৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে দ্বিতীয় সেশনে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। পুরো সকাল দাপটে খেলা দক্ষিণ আফ্রিকার এরপরই ছোট একটা ধসের মধ্যে দিয়ে গেছে। পিটারসেনের রানআউটের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ১৪৬। সেখান থেকে স্বাগতিকরা প্রথম চা-বিরতির যায় ৩ উইকেটে ১৬৫ রান নিয়ে। আর মাত্র ৯ রান যোগ করে মিরাজের বলেই ফিরেছেন এরউই (৪১)। বলের কাছে না গিয়ে অফ স্পিনারের বলে অফসাইডে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল গেল স্টাম্পে। এর ৫ বল আগেই অবশ্য বড় শিকারটা তুলে নেয় বাংলাদেশ। দিনের শুরু থেকেই বেশ আক্রমণাত্মক খেলছিলেন ডিন এলগার। দ্বিতীয় সেশনে রানের গতি কমে এলেও বেশ স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। খালেদ আহমেদের বাড়তি বাউন্স হঠাৎ তার রক্ষণ নাড়িয়ে দিল। গ্লাভসের ছোঁয়া নিয়ে বল লিটন দাসের কাছে। এবার আর কোনো ভুল হয়নি। ১১৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে যাকে নিয়ে ছিল বেশি আশা সেই ইবাদত হোসেনের ‘স্যাল্যুট’ উদযাপন দেখতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৫৭.২ ওভার পর্যন্ত। অভিষেক ইনিংসে দারুণ শুরু করেছিলেন রায়ান রিকলটন। নিজের প্রতিভার জানান দেন দুর্দান্ত কয়েকটি শটে। তবে শট খেলার তাড়নাই কাল হলো তার জন্য। দিনজুড়ে খুব ভালো বোলিং করতে ইবাদতের এই বলটি খুব বিপজ্জনক কিছু ছিল না। অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বল। সেটিই পুল করার চেষ্টা করেন রিকলটন। একটু বাড়তি লাফানো বল টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক। মিড অনে সহজ ক্যাচ নেন মুমিনল। এরপর আর কোনো বিপদ ছাড়াই দলের দুইশ পেরোয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম একশ এসেছিল অনায়াসেই, কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৭ ওভারে। দ্বিতীয় একশ হতে লাগল ৩৮.৫ ওভার, ৪ উইকেট হারিয়ে। রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত (৬৯ ওভার) প্রথম ইনিংসে ঐ ৪ উইকেট হারানো প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ২১৬।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন