বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষায় শত শত কৃষকের প্রাণান্তকর চেষ্টা

নেত্রকোণায় কির্তনখলা বাঁধের ফাটল : ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা চরম ঝুঁকিতে দিরাইয়ের হাওর রক্ষা বাঁধ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে দিরাই হাওর রক্ষা বাঁধ চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১০৪টি বাঁধের মধ্যে ৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং নেত্রকোণায় কির্তনকলা বাঁধের ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যে রয়েছে। আমাদের সংবাদাতার তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন।

দিরাই (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দিরাইয়ের নদ-নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির সাথে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে দিরাইয়ের হাওর রক্ষা বাঁধ। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন বেশ কয়েকটি বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১০৪টি বাঁধের মধ্যে ৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮৫, ৮৬ ও ৮৭ নং পিআইসি অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা যায়। তাছাড়া সাধারণ ঝুঁকিতে রয়েছে ৮০ নং পটাইখালী, ৩২ নং জারলিয়া, ৭ নং খাকসিরা, ৮৭ নং কেজাউড়া ও ৯৩ নং জয়পুর বাঁধ।

সরেজমিন বেশ কয়েকটি বাঁধ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নিম্নমানের কাজের কারণে এবং ড্রেসিং ঠিকমতো না হওয়ায় নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে বাঁধ দিয়ে পানি ছুঁইয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে, এতে অনেক বাঁধই ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট পিআইসির সভাপতিরা বলছেন, বাঁধ ভালো আছে, কোনো বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু এলাকার লোকজনকে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করতে দেখা গেছে। দিরাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম মাছুম প্রদীপের নেতৃত্বে পূর্বদিরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের খাল দিয়ে বরাম হাওরে পানি প্রবেশের পথ বন্ধ করতে দেখা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ১১ নং পিআইসির সাকিতপুর গ্রামের নয়াবাড়ির সামনের অংশে বাঁধের ভেতর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। গ্রামের লোকজন তাই বাধ্য হয়েই বাঁশ ও মাটি দিয়ে সেটি মেরামতের কাজ করছেন। গ্রামবাসী জানান, এ হাওরে সাকিতপুর, চান্দপুর, করিমপুর, মাটিয়াপুর ও শ্রীনারায়ণপুর গ্রামের প্রায় ১ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। এ বাঁধ ভেঙ্গে গেলে সবগুলো জমি তলিয়ে যাবে নিমিষেই। জানতে চাইলে পিআইসির সভাপতি জ্যোতির্ময় তালুকদার জানান, আমি এখন বাড়ির কাজে আছি, বাঁধে কোন সমস্যা হচ্ছে না বলেও তিনি জানান। সূত্র মতে, ০.০৬৪ কিলোমিটার বাঁধের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৮১ টাকা ৬৪ পয়সা।

এদিকে বরাম হাওরের তুফানখালীতে তিনটি পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এই তিনটি বাঁধকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে ৮৫নং পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৩৪৯ টাকা ৩৯ পয়সা, ৮৬নং পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ ২৯ হাজার ১২৬ টাকা ৮৪ পয়সা ও ৮৭ নং পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২১ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৬ টাকা ৩৪ পয়সা।
অন্যদিকে সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকায় রয়েছে চাপতির হাওরের ৭নং খাকসিরা পিআইসিতে বরাদ্ধের পরিমাণ ১০ লাখ ৪২ হাজার ১১৭ টাকা ২১ পয়সা, টাংনী হাওরের ৩২নং জারলিয়া পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ ২ হাজার ৪১২ টাকা ৮৫ পয়সা, বরাম হাওরের ৮০নং পটাইখালী পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২০ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৭ টাকা ৮৮ পয়সা, উদগল বিল হাওরের ৯৩নং জয়পুর পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫ টাকা ৪৮ পয়সা।

বরাম হাওরের ৭৭নং পিআইসির সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান জানান, এ বছর আমাকে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার না দিয়েই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা অনুসারে কাজ করেছি। আমাদেরকে অন্ধকারে রেখেই তারা কাজ করিয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কাজের পূর্ণ টাকা পাননি বলেও তিনি জানান।
দিরাই উপজেলার হাওর রক্ষা বাঁধের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা (এসও) এ.টি.এম. মোনায়েম হোসেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তিনটি বাঁধ চিহ্নিত করেছি, আর সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে আরও ৫টি। তবে বাঁধের সার্বিক অবস্থা ভালো আছে, আমরা মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক পরিদর্শন ও কাজ করে যাচ্ছি।

নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ী ঢলে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশংকায় বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় হাওরের কৃষকরা উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধনু নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ি উপজেলার কীর্তনখোলা বাঁধের ফাটল ধরেছে। ফসল রক্ষায় ফাটল সারাতে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ হাওর অঞ্চলের শত শত কৃষকরা সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষায় দিনরাত কাজ করছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, গত সোমবার সন্ধার দিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খালিয়াজুড়ি উপজেলার কির্তনখলার বাঁধের ফাটল ধরেছে। এছাড়াও কয়েকটি ফসলরক্ষা বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমানের নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান জুয়েল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফদতরের উপ-পরিচালক এফ এম মোবারক আলী, খালিয়াজুড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এইচ এম আরিফুল ইসলামসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শত শত কৃষক বাঁশ, চাটি, বালির বস্তাসহ বাঁধ রক্ষার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বাঁধ রক্ষার প্রানপন চেষ্টা করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, কির্তনখোলা ও নাউটানা এলাকায় আশা বাঁধের ফাটল দেখা দিয়েছিল, তা আমরা মেরামত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ধনু নদির পানির বৃদ্ধি এখনও অব্যাহত রয়েছে, তবে বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন খবর পেয়ে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বাঁধের ফাটল মেরামত করা হয়েছে। আশা করছি বাঁধ আর ভাঙ্গবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন