বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে মনু নদের পানি, ফলে বাঁধ উপচে মৌলভীবাজার শহর তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি বেড়ে শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় সমান হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। মূল শহর ও তার আশপাশের অন্তত ৩০ টি স্থানে বাঁধ চুইয়ে পানি প্রবেশ করছে। এ অবস্থায় শহর জুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ ফেইসবুকের মাধ্যমে বাধ ভাঙার গুছবও ছড়াচ্ছেন। ফলে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। তাই মসজিদ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে গুজবে কান না দিতে পৌরবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। এদিকে মেজর মুয়াইমিনের নেতৃত্বে সিলেট সেনানিবাস থেকে আসা সেনাবাহিনীরর ২১ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটেলিয়ানের ৬০ সদস্য প্রতিরক্ষা বাধ রক্ষায় কাজ করছেন। ইতিমধ্যে প্রচুর বালুর বস্থা ফেলা হয়েছে। বাধের উপরে বালুর বস্থা ফেলে উচু করা হয়েছে। পানিতে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় শ্রীমঙ্গল ছাড়া সব উপজেলার সাথে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মৌলভীবাজার শহর। মনু নদের প্রতিরক্ষা বাধে ফাটল দেখা দেওয়ায় ফাটল আরো বাড়ার আশংকায় হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। সদর উপজেলার শাহবন্দর থকে শেরপুর পর্যন্ত অন্তত ৩০ টি স্থানে স্থানীয়ররা স্বেচ্ছায় বাধ রক্ষায় কাজ করছেন। ফেলছেন বালুর বস্তা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পানি এভাবে বাড়তে থাকলে প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে পানি শহর প্লাবিত হতে পারে। সর্বশেষ মনু পানি বিপদসীমার ১৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু শহরে নয় উপজেলাগুলোতেও প্রায় ২০ হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে ভাঙন ঠেকাতে। ইতিমধ্যে হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ থেকে আরো বস্তা নিয়ে আসা হচ্ছে। এ দিকে সরজিনে প্রতিরক্ষাবাধ ঘুরে দেখা গেছে, বাধের ভিতরের অংশে শহর থেকে অতন্ত ৫ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।জেলা চেম্বার্স এন্ড কমার্সের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের নিরাপদে মালামাল স্থানান্তরের জন্য মাইকিং করা হয়েছে। সাইফুর রহমান রোডের সব ব্যবসা প্রতিষ্টান তাদের মালামাল নিরাপদে রেখেছে। শহরের এই রোডের কিছু প্রতিষ্ঠানে বাধ চুইয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে দোকানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এমন অবস্থার মাঝে পানি দ্রুত বাড়ায় তাদের মধ্যে আরো ভয় তৈরি করেছে। গত দু দিন থেকে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে সময় কাটাচ্ছে শহরবাসী। উদ্বিগ্ন মানুষজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। বাড়ির ছাদে মহিলারা অবস্থান করছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা বাধের পাশে অবস্থান করছেন। কোথায় ও নেই ঈদের আনন্দ। শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ । দুদিন ধরে সাইফুর রহমান সড়কে বন্ধ আছে যান চলাচল তবে আজ সকাল থেকে সাধারণ জনগণকেও পায়ে হেটে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছেনা নিরাপত্তার জন্য। পৌর মেয়র ফজলুর রহমান জানান, মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাধ অন্যন্য এলাকা থেকে শহর এলাকায় সব থেকে মজবুত। তবুও প্রকৃতির উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই তাই সবাইকে নিরাপধে এবং সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। এদিকে উজানের পানি নিচ দিয়ে দ্রুত বেগে নামার ফলে শহর ও শহরতলীর আরো ২০ টির বেশি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সব থেকে ঝঁকিতে রয়েছে সদর উপজেলার চাদনীঘাট এলাকা, কনকপুর দুর্লভপুর ও কসবা এলাকা। এছাড়া উপজেলার কামালপুর থেকে মোমরুজপুর পর্যন্ত কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। পাউবার কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে মনু নদে সর্বোচ্চ বিপদসীমা ১৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে। যা বিগত ১১ বছরের সর্বোচ্চ পানি প্রবাহ ছিল। তবে শহরের অংশে পানি কম ছিল। মনুর কয়েকটি ভাঙ্গন দিয়ে পানি গ্রামাঞ্চল প্রবাহিত হওয়ার পর সে পানি পুনরায় নদে পড়ছে। যার ফলে নদীর পানি উজান থেকে নেমে নিম্নাঞ্চলে প্রভাব ফেলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, আমরা উদ্বিগ্ন পানি আরো বাড়লে কি হবে বলা যাচ্ছেনা। তবে সবার সাথে মিলে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে শহরকে বিপদমুক্ত রাখার। জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান, সারা জেলায় ২ লাখ লোক পানিবন্দি। প্রশাসনের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাই আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। সারা জেলায় পর্যাপ্ত ত্রান দেওয়া হচ্চে। তিনি , গুজবে কান না দিতে শহরবাসীকে আহ্বান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন