রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

জাদুকরি বেনজেমার জাদুর রাত

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

কেউ বলছেন ‘কিং করিম’, কেউ আবার তাঁকে ‘স্পাইডারম্যান’ বলছেন। এমন প্রশংসায় তো করিম বেনজেমা ভাসবেনই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা তো আর সহজ কাজ নয়! গতপরশু রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে চেলসির মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ৩-১ ব্যবধানে জিতেছে রিয়াল। সফরকারীদের পক্ষে সবগুলো গোল করেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা বেনজেমা। প্রথমার্ধে জোড়া লক্ষ্যভেদের পর দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। প্রতিযোগিতার আগের ম্যাচে পিএসজির বিপক্ষেও হ্যাটট্রিকের স্বাদ নিয়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সী বেনজেমা। ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ ষোলো থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল রিয়াল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ১৭ মিনিটের মধ্যে তিনবার প্যারিসিয়ানদের জালে বল পাঠিয়ে দলকে শেষ আটে তোলেন বেনজেমা।

চেলসির বিপক্ষে ম্যাচের ২১তম মিনিটে প্রথম উল্লাসের মুহূর্ত আসে বেনজেমার জন্য। তার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিয়ুস। এরপর তিনি বাড়ান ক্রস। তাতে মাথা ছুঁইয়ে চেলসির গোলরক্ষক এদুয়ার্দ মেন্দিকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠান বেনজেমা। স্বাগতিকরা এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আরেকটি গোল খেয়ে বসে। এবার লুকা মদ্রিচের ক্রসে হেড করে নিশানা ভেদ করেন বেনজেমা। কাই হাভার্টজ ৪০তম মিনিটে ব্যবধান কমালেও বিরতির পর ফের খেলা শুরু হলে অমার্জনীয় এক ভুল করে বসেন মেন্দি। গোলপোস্ট ছেড়ে অনেকখানি বেরিয়ে গিয়ে কাসেমিরোর শট বুক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। কিন্তু বেনজেমার চাপে পড়ে তিনি তড়িঘড়ি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন আন্টোনিও রুডিগারকে। ওই দুর্বল পাস ডেকে আনে বিপদ। মাঝপথে বল কেড়ে বেনজেমা অনায়াসে পাঠিয়ে দেন জালে।
এই হ্যাটট্রিক দিয়েই রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরাসি স্ট্রাইকার ঢুকে গেলেন এক বিরল তালিকায়। ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরে টানা দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করা চতুর্থ ফুটবলার তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবার আগে টানা দুই হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েছিলেন শাখতার দোনেস্কের লুইজ আদ্রিয়ানো, ২০১৪ সালে। এরপর বার্সেলোনার লিওনেল মেসি তালিকায় নাম লেখান ২০১৬ সালে। পরের বছর রিয়ালের হয়েই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গড়েন এই নজির। সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে বেনজেমার গোলসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১। আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৩৬ ম্যাচে ৩৭ গোল রয়েছে তার নামের পাশে। গোলের হিসাবে এটি তার ক্লাব ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম। এর আগে ২০১১-১২ মৌসুমে ৩২ গোল করেছিলেন তিনি।
এমন একটি কীর্তি গড়ার পরও বেনজেমা হাওয়ায় উড়ছেন না। পা মাটিতেই রাখছেন রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের পর কাল কোয়ার্টার ফাইনালে স্টামফোর্ড ব্রিজে চেলসির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক- নিজের এই পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন বেনজেমা? উত্তরটা সংক্ষেপেই দিলেন তিনি, ‘এগুলো জাদুকরী রাত!’
ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদের ওয়েবসাইটে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন বেনজেমা। সেখানে দলের জয় আর দল হিসেবে ভালো খেলতে পারার বিষয়টিই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে, ‘এগুলো জাদুকরী রাত। বার্নাব্যুতে পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচে যেমন একটি রাত কেটেছিল আমাদের। আমরা ম্যাচটি জিততে চেয়েছিলাম। দেখাতে চেয়েছিলাম, রিয়াল মাদ্রিদ আসলে কী। এরপর সবকিছু আমাদের পক্ষেই ছিল। কারণ, আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো খেলেছি।’
চেলসির মাঠ থেকে ৩-১ গোলে জিতে এলেও এখনই সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি বলেই মনে করেন বেনজেমা। সতীর্থদের তাগিদ দিতেই হয়তো কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের কথা মনে করিয়ে দিলেন সবাইকে। একই সঙ্গে চেলসিকে একটা হুমকিও হয়তো দিয়ে রাখলেন বেনজেমা, ‘আমরা ভালো অবস্থায় আছি এবং শেষ বাঁশি বাজার আগপর্যন্ত লড়াই করেছি। আমরা ম্যাচটি জিততে চেয়েছি এবং মাদ্রিদ যখন কিছু করতে চায়, সেটার ফল ভালোই হয়। আমরা এখন ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে খেলব। ম্যাচটি জিততে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেব। আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজের হ্যাটট্রিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বেনজেমার কণ্ঠে উঠে এসেছে একটি গোল মিসের আক্ষেপ, ‘তিন গোল করাটা সত্যিই খুব দারুণ ব্যাপার। তৃতীয় গোলটি নিয়ে আমি বেশি খুশি। কারণ, প্রথমার্ধে আমি একটি গোল মিস করেছি। মিসটা আমাকে খুব খোঁচাচ্ছিল। গোল করাটা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এরপর আরেকটু সুযোগ পেলাম এবং গোল করলাম। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারায় আমি খুব খুশি।’ বেনজেমা এরপর প্রশংসা ভাসিয়েছেন কোচ কার্লো আনচেলত্তিকেও, ‘আমি সব সময়ই বলি, তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ। তার ওপর অগাধ আস্থা আমাদের। তিনি যখন ভালভার্দে বা অন্য কাউকে ডান পাশে খেলতে বলেন, তারা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন