বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

শেষ ওভার হিরো মাহমুদউল্লাহ!

প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী
৬ বলে ৭-রাজশাহী কিংসের লক্ষ্যটা যখন এতো সহজ, তখন তাদের বাড়া ভাতে ছাই ছিটিয়ে দিয়েছেন মাহামুদুল্লাহ! অবিশ্বাস্যভাবে শেষ ওভারে লং অফে আবুল হাসান রাজুকে ক্যাচে বাধ্য করে শুরু তার ম্যাজিক ওভার, পরের লো বাউন্সি ডেলিভারীতে ড্যারেন স্যামী বোল্ড! শেষ বলে লক্ষ্যটা যখন ৪ রান, তখন ডাউন দ্য উইকেটে নাজমুল অপুকে খেলতে প্রলুব্ধ করে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ৩ রানের অবিশ্বাস্য জয়ে খুলনা কিংসকে ভাসিয়েছেন উৎসবে। ৭২ ঘণ্টার আগে অবিশ্বাস্য ওই কৃতি নিয়ে  অবচেনতমনে হাসি পায় যার, সেই অফ স্পিনার মাহামুদুল্লাহ গতকাল হাসলেন আরো একবার! লো স্কোরিং ম্যাচে ১৩৪ চেজ করতে এসে রাজশাহী  কিংসকে ৩ রানে হারিয়ে দেয়া শেষ ওভার থ্রিলারটিই পেলেন ফিরে গতকাল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে! ১৮ এবং ১৯তম ওভারে চিটাগাং ভাইকিংস ২৩ রান যোগ করায় ম্যাচের আশা ছেড়ে দেয়াটাই স্বাভাবিক খুলনা টাইটান্সের। উইন্ডিজ পেস বোলার কেভন কুপার, পাকিস্তানী বাঁ হাতি পেসার জুনায়েদ খান, ফর্মে ফেরা পেসার শফিউল এবং বাঁ হাতি স্পিনার মোশারফ রুবেলের বোলিং কোটা শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ ওভারে পছন্দের বোলার ছিল না হাতে খুলনা টাইটান্স অধিনায়কের। ৬ বলে ৬ রান, হাতে চার চারটি উইকেট যাদের, তাদের কাছে কি এমন টার্গেট এটা? অথচ, তিন দিন আগের ঘটনা পুনরাবৃত্তিকে খুলনা টাইটান্স অধিনায়ক মাহামুদুল্লাহ নিজেই নিয়েছিলেন ঝুঁকি, তাতেই বাজিমাত! আর একটি শেষ ওভার থ্রিলার দিয়েছেন উপহার, ১ রানে তিন উইকেট শিকারে এই অফ স্পিনার আর একবার জন্ম দিয়েছেন বিস্ময়ের! অবিশ্বাস্যভাবে ৪ রানে জিতে খুলনা টাইটান্সকে ভাসিছেন উৎসবে।
শেষ ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ নবী সিঙ্গল নিয়ে যখন বাঁ হাতি চাতুরঙ্গা সিলভাকে দিয়েছেন স্ট্রাইক, তাতেই ম্যাচে ফেরার উপায় পেয়েছেন মাহামুদুল্লাহ। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ওয়াইড ডেলিভারী দিয়ে চাতুরঙ্গাকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছেন, সেই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ সঁপে দিয়েছেন এই শ্রীলংকান। বাঁ হাতি টেল এন্ডার রাজ এসে নিতে পারেননি পরের বলে রান। মাহামুদুল্লাহ’র চতুর্থ ডেলিভারীতে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ওই বাঁ হাতি! শেষ ২ বলে চিটাগাং ভাইকিংসের যখন দরকার ৫, তখন পঞ্চম বলে বাউন্ডারি ছাড়া উপায় ছিল না মোহাম্মদ নবীর। মাহামুদুল্লাহ’র কৌশলে সে যাত্রায় বিফল নবী। জিততে হলে শেষ বলে চাই ছক্কা, টাই’র জন্য দরকার বাউন্ডারির শট-অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে পুল শটে সে চেষ্টাই করেছেন নবী। কিন্তু মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে রাখা ফিল্ডার অলক কাপালীর হাতে সোপর্দ হতে হলো মোহাম্মদ নবীকে!
অথচ, শেষ ওভারে নিজে বল হাতে তুলে নিয়ে অবিশ্বাস্য কিছু’র স্বপ্ন দেখেননি খুলনা টাইটান্স অধিনায়ক মাহামুদুল্লাহÑ ‘৬ বলে ৬ রান, উইকেটে তখন যে  দুইজন ছিলেন, তারা দু’জনই সেট ব্যাটসম্যান। তাই ওই সময়ে খুব নার্ভাস লাগছিল। আমার এখনো হাত ঘামছে! নবীকে যতটা কম স্ট্রাইক দেয়া যায়, সেই চেষ্টা করেছি। চাতুরঙ্গার উইকেটটা ওই সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথম বলটা ডট হওয়ার পর আস্তে আস্তে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।’ হয়ে যাওয়া ৩ ম্যাচের ২টিতে শেষ ওভার থ্রিলারে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে জিতেছেন মাহামুদুল্লাহ। তারপরও  এটাকে মেন্টাল গেম মনে করছেন না মাহামুদুল্লাহÑ ‘কোন মেন্টাল গেম ছিল না। আমি শুধু ভালো জায়গায় বোলিং করার চেষ্টা করেছি। এর বাইরে কিছুই না। ধরেই নিয়েছিলাম, ম্যাচটা হেরে গেছি।’
শেষ ওভারে বিকল্প বোলার হাতে না থাকায় নিজেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন মাহামুদুল্লাহÑ ‘এছাড়া অন্য কোন বিকল্প ছিল না। ম্যাচটা যেহেতু লো স্কোরিং, তাই সেরা বোলারদের বলগুলো যদি আমি রেখে দেই, পরবর্তীতে তাদেরকে  ব্যবহার করা যাবে না। তাই সেরা বোলারদের আগে-ভাগে ব্যবহার করেছি। শফিউলের স্পেলটা অসাধারণ ছিল। কুপার-জুনাইদ, মোশারফ রুবেল মাঝখানে বেশ টাইট কয়েকটা ওভার করেছে।’
টি-২০ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ভারতকে হারানোর সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন, ৩ বলে ২ রানের সহজ টার্গেটে দাঁড়িয়ে মুশফিকুরের দেখাদেখি পরের বলে লং অনে ক্যাচ দিয়েছেন ক্যাচ। সেই অপরাধবোধ এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মাহামুদুল্লাহকে। নিজের ওই ভুল ক্ষমা করতে পারছেন না মাহামুদুল্লাহ। নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কালিমা লেপে যাওয়া ওই ক্ষত শুকাতে প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দিতে চান মাহামুদুল্লাহÑ ‘ওই হার ভোলার মতো নয়। ওই ম্যাচে অনেক বড় সুযোগ ছিল। ওই ম্যাচটার কাছে এই ম্যাচ কিছুই না। ওই হারের ক্ষত আমি জানি না কিভাবে পূরণ হবে। ওটা সারাজীবন দাগ কেটে থাকবে। যদি কখনো সেরকম সুযোগ হয়, যদি আমি তখন দলে  থাকি, চেষ্টা করবো আমার সেরাটা দেওয়ার। প্রয়োজন হলে জীবন দিয়ে চেষ্টা করবো।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন