রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

তাইজুলের পাঁচের দশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

আগের ম্যাচে ব্যাটে-বলে বাংলাদেশকে ভোগানো কেশভ মহারাজ এবার খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম শতক তুলে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন এই স্পিন অলরাউন্ডার। কিন্তু শেষের দিকের ব্যাটসম্যান হলে যা হয়, ভালো খেলতে খেলতে একপর্যায়ে গিয়ে ধৈর্য থাকে না। মহারাজেরও তাই হলো। দ্বিতীয় সেশনে নবম ওভারে তাইজুল ইসলামকে অযথা সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড। সেন্ট জর্জেস পার্ক গ্যালারিও হতাশ। ৯৫ বলে ৮৪ রানের বিনোদনদায়ী ইনিংসটার কী অপচয়! তবে তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ভেস্তে গেল দক্ষিণ আফ্রিকাকে কম রানে থামানোর আশা। পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের দ্বিতীয় দিন ৪৫৩ রানে থামে স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস।
এদিন শেষ ৫ উইকেটে ১৭৫ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে সবচেয়ে বড় অবদান মহারাজের। আগের সেরা ৭৩ ছাড়িয়ে ৯৫ বলে ৩ ছক্কা ও ৯ চারে ৮৪ রান করেন তিনি। ১৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার তাইজুল। দেশের বাইরে এটাই তার সেরা বোলিং। গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় ৭২ রানে নিয়েছিলেন ৫টি। বড় রান তাড়ার জবাবে যেমনটা শুরু হওয়ার কথা তা করে দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। রিপোর্র্টটি লেখা পর্যন্ত (২২ ওভার) ৩ উইকেট খেয়ানো বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮৫। ক্রিজে আছেন দুই নতুন ব্যাটসম্যান অধিনায়ক মুমিনুল হক (১) ও মুশফিকুর রহিম (০)।
বাতাসে সুইং, অফ দ্য পিচ মুভমেন্ট, বাংলাদেশের গোটা ইনিংসে যা দেখা গেছে কমই, ডুয়ানে অলিভিয়ের তা আদায় করে নিলেন প্রথম ওভারেই। তাতেই সাফল্য। শূন্য রানে আউট আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয়। অলিভিয়েরের বলটি বাতাসে একটু সুইং করে পিচ করে মুভ করে বাইরে বেরিয়ে যায় অনেকটা। জয় সুইংয়ের অপেক্ষা না করেই পা বাড়িয়ে ড্রাইভ করেন। ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় প্রথম সিøপে। শুরুর সেই ধাক্কা অনেকটাই সামাল দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তামিম শুরু থেকেই ছিলেন বেশ আগ্রাসী। চতুর্থ ওভারে লিজাড উইলিয়ামসকে চার মারেন ওভারে তিনটি। ত্রয়োদশ ওভারে উইলিয়ামসের বলে তার নান্দনিক দুটি বাউন্ডারিতেই বাংলাদেশের রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ। আরেকপ্রান্তে শান্তও শুরুটা করেন ভালো। জুটির পঞ্চাশ চলে আসে ৮৩ বলে। তবে সেই সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ফিফটি থেকে মাত্র তিন রান দূরে থাকতে বিদায় নিতে হয় তামিমকে। ভিয়ান মুল্ডারের অফ স্ট্যাম্পের কিছুটা বাইরের এক বল ঝুঁকে ঠেকাতে গিয়ে প্যাডে আঘাত হানে তামিমের। জোরালে আবেদনের সাড়া না দিয়ে পারেননি আম্পায়ার। শান্তর সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নেয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাননি তারা। রিপ্লেতেও দেখা যায় মিডল স্ট্যাম্পে আঘাত হানতো বল। ভাঙে ১২০ বলে ৭৯ রানের জুটি। সেই আক্ষেপেই কি-না, শান্ত ফিরলেন সাথে সাথে। সেই মুল্ডারের বলে ৩৩ রানে এলবির ফাঁদে পড়েন এই টপ অর্ডার। দুই ওভারে পাওয়া মুল্ডারের দুটিই মেডেন উইকেট!
এর আগে গতকাল সেন্ট জর্জেস পার্কে ৫ উইকেটে ২৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কাইল ভেরেইনা ও মুল্ডার এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। দিনের পঞ্চম ওভারে ভেরেইনা শট খেলার পর জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপরও মেজাজ হারিয়েই কী-না সরাসরি তার দিকে থ্রো করে বসেন পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ। এ নিয়ে মাঠে ছড়ায় উত্তেজনা। পরের ওভারেই দারুণ এক ডেলিভারিতে ভেরেইনাকে বোল্ড করে দেন খালেদ। ৩০০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ক্রিজে গিয়েই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে রান বাড়াতে থাকেন মহারাজ। এলোমেলো ব্যাটিং নয়, ক্রিকেটীয় শট খেলেই মারতে থাকেন একের পর এক বাউন্ডারি। তাকে সঙ্গ দিয়ে যান মুল্ডার। তাদের ৮০ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল, দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন মুল্ডারকে। মহারাজ খেলে যাচ্ছিলেন নিজের মতো করে। যেভাবে খেলছিলেন তাতে সেঞ্চুরি মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তা হতে দেননি তাইজুল। চমৎকার এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে দিয়ে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
৬১ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থেকে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে গিয়েছিলেন মহারাজ। দ্বিতীয় সেশনেও ধরে রাখেন মারকুটে ব্যাটিং। এই সেশনে আরও ৩৪ বল খেলে তুলেছেন ২৯ রান। ৩ ছক্কা ও ৯ চারে সাজানো ইনিংসটি আরও বড় হতে পারত। তা না হওয়ায় স্বস্তি পেতেই পারে বাংলাদেশ। সেজন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদটা দিতে হবে তাইজুলকে।
প্রথম দিনে ৩ উইকেট নেওয়ার পর গতকাল সকালের সেশনে উইয়ান মুল্ডারকে তুলে নেন তাইজুল। দ্বিতীয় সেশনে মহারাজকেও আউট করে ইনিংসে ন্যুনতম ৫ উইকেটের দেখা পেলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে দশমবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৪৫৩ রানে অলআউট হওয়ার পর তাইজুলের বোলিং বিশ্লেষণ ৫০-১০-১৩৫-৬।
২০১৪ সালে নাথান লায়নের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নিলেন তাইজুল। সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে প্রোটিয়াদের মাটিতে ৫ উইকেট পেলেন তাইজুল। অর্জন আছে আরও। সাকিব আল হাসানের পর টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১৫০ উইকেট পেলেন তাইজুল।
বাংলাদেশের বিরক্তি বাড়িয়ে আবার ক্রিজে জমে গিয়েছিলেন সাইমন হার্মার। তাকে বিদায় করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে দেড়শ উইকেটের সীমানা স্পর্শ করেন তাইজুল। এই উইকেটে বড় অবদান আছে লিটন দাসের। একটু সময়ের জন্য পা তুলেছিলেন হার্মার। সেটাই কাজে লাগিয়ে স্টাম্পড করে দেন লিটন। লিজাড উইলিয়ামসকে ফিরিয়ে বাকিটা সারেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
১৩৬.২ ওভার ব্যাট করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে বাংলাদেশের তিন স্পিনার তাইজুল, মিরাজ ও নাজমুল হোসেন মিলে বল করেছেন ৭৯.২ ওভার। ২৬.২ ওভার বল করে ১ উইকেট নেন ডারবানে দুর্দান্ত বল করা মিরাজ। তার একমাত্র উইকেটটি এসেছে ৮৫ রান খরচায়। এছাড়া পেসারদের মধ্যে ১০০ রানে ৩ উইকেট নেন খালেদ। ২৮ ওভারে ১২১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ইবাদত হোসেন। ৩ ওভার বল করে উইকেট পাননি নাজমুলও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ১৩৬.২ ওভারে ৪৫৩ (এলগার ৭০, এরউইয়া ২৪, পিটারসেন ৬৪, বাভুমা ৬৭, রিকেলটন ৪২, ভেরেইনা ২২, মুল্ডার ৩৩, মহারাজ ৮৪, হার্মার ১৯, উইলিয়ামস ১৩, অলিভিয়ের ০*; খালেদ ৩/১০০, মিরাজ ১/৮৫, ইবাদত ০/১২১, তাইজুল ৬/১৩৫, শান্ত ০/৯)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৮৫/২ (২২ ওভারে) তামিম ৪৭, জয় ০, শান্ত ৩৩ ব্যাটিং, মুমিনুল ১ ব্যাটিং, মুশফিক ০ ব্যাটিং; অলিভিয়ের ১/১৫, মুল্ডার ২/০। অসমাপ্ত

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন