৩ উইকেট হারিয়ে আগের দিনই মহাবিপাকে ছিল বাংলাদেশ। সেই দুরবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাটারদের কাছ থেকে প্রত্যাশা ছিল নিবেদন ও ক্রিজে থাকার দৃঢ় মানসিকতা। কিন্তু লক্ষ্য তাড়ার পথে যাওয়া তো দূরে থাক, লড়াইয়ের ন্যূনতম ছাপও রাখতে পারল না টাইগাররা। একের পর এক বিলাসী শট খেলে একেকজন ছুঁড়ে দিলেন উইকেট! জায়গা বানিয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে আউট মুশফিকুর রহিম। সুইপ করার চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে দিলেন মুমিনুল হক। স্লগ সুইপে উড়িয়ে মেরে বিদায় ইয়াসির আলির, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে স্টাম্পড লিটন দাস। স্রেফ একের পর এক উইকেটের পতন নয়, আত্মসমর্পণের একেকটি দলিল যেন। যেখানে লেখা আছে, লড়াই না করেই মাথা নিচু করে পলায়ন।
দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। দেখার ছিল, চতুর্থ দিনে লড়াই কতটা করতে পারে বাংলাদেশ। সেটুকুও দেখা হলো না। চোখের পলকেই যেন বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ল ইনিংস। দিনের প্রথম ঘণ্টায় ১৫ ওভারের কম সময়ের মধ্যেই খেলা শেষ! পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের চতুর্থ দিনে ৮০ রানে অলআউট বাংলাদেশ। ৩৩২ রানের বিশাল হারে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।
আগের টেস্টের চতুর্থ ইনিংসের চেয়ে উন্নতির দাবি অবশ্য করতেই পারে বাংলাদেশ। ডারবানে তো ১৯ ওভারে ৫৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দল। এবার সাড়ে চার ওভার বেশি খেলে ২৭ রান বেশি, উন্নতি বটে! ২০০৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফরের পর এই প্রথম টানা দুই টেস্টে একশর নিচে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ব্যাপারটি ঠিক উল্টো। টানা দুই টেস্টে তারা গড়েছে গৌরবময় কীর্তি। ডারবানের চতুর্থ ইনিংসের মতো এখানেও স্রেফ দুই বোলার মিলেই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। সেই টেস্টের মতো এবারও কেশভ মহারাজের শিকার ৭ উইকেট, সাইমন হার্মারের ৩টি। মহারাজ নিজে গড়েছেন অনন্য এক কীর্তি। টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে টানা দুই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে নিয়েছেন ৭ উইকেট।
তবে মহারাজ ও হার্মারের কাজ সহজ করে দেন মূলত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই। দিনের দ্বিতীয় ওভার থেকেই ড্রেসিং রুমে ফেরার মিছিল শুরু। মুশফিককে ড্রাইভ করতে প্রলুব্ধ করছিলেন মহারাজ। ৮০ টেস্টের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সেই ফাঁদে পা দিয়ে ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় স্লিপে। প্রথম ইনিংসে অসময়ে রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টায় আউট হয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে থাকা ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন ১ রানে। মহারাজের পরের ওভারেই জোর করে টেনে সুইপ করার চেষ্টায় ক্যাচ দেন মুমিনুল। রানের দেখা পাওয়ার আগেই হার্মারকে স্লগ সুইপে উড়িয়ে মেরে ধরা পড়েন ইয়াসির। লিটন কয়েকটি নান্দনিক শট খেলেন যথারীতি। কিন্তু লড়াইয়ের চেষ্টা দেখা যায়নি তার ব্যাটিংয়েও। স্টাম্পড হন তিনি মহারাজকে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে। এরপর কেবল শেষ কয়েকটি উইকেটও হারিয়ে ইনিংস গুটিয়ে যাওয়ার পালা। শেষের আগে ২০ রান করে মিরাজ একটু বাড়ান দলের রান। তার পরও দল থমকে যায় তিন অঙ্ক থেকে ২০ রান দূরে। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশ শুরু করেছিল টেস্ট সিরিজ। কিন্তু সেই প্রত্যাশা মুখ থুবড়ে পড়ল বাজে ক্রিকেটের প্রদর্শনীতে। দক্ষিণ আফ্রিকা পায়নি সেরা একাদশের ৫-৬ জন ক্রিকেটারকে। তারাই দুই টেস্ট জিতে নিল বিশাল ব্যবধানে।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪৫৩ ও ২য় ইনিংস : ১৭৬/৬ (ডি.)। বাংলাদেশ : ২১৭ ও ২য় ইনিংস (লক্ষ্য ৪১৩) : (আগের দিন ২৭/৩) ২৩.৩ ওভারে ৮০ (মুমিনুল ৫, মুশফিক ১, লিটন ২৭, ইয়াসির ০, মিরাজ ২০, তাইজুল ০, খালেদ ০, ইবাদত ০*; মহারাজ ১২-৩-৪০-৭, হার্মার ১১.৩-১-৩৪-৩)। ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩২ রানে জয়ী। সিরিজ : দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ ব্যবধানে জয়ী। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা : কেশভ মহারাজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন