আগামী অর্থবছরের সময়টা অসাধারণ, আর এই অসাধারণ সময়ে সাধারণ বাজেট যেন না হয়। এবার ব্যতিক্রমী বাজেট চাই। এ জন্য বাজেট ঘোষণার আগেই আগামী বাজেটের নীতি কাঠামোর একটি খসড়া প্রকাশ করা উচিত। সেই খসড়ার ওপর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মতামত দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট কতটা বাস্তবায়িত হলো, তা-ও জনসমক্ষে প্রকাশ করা দরকার।
গতকাল রোববার আগামী বাজেট নিয়ে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। অনলাইনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় বিশেষ বক্তব্য দেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নয়, কর্মসংস্থান প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। চলতি অর্থবছরে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, বহির্বিশ্বের বাণিজ্য পরিস্থিতি ও যুদ্ধ অর্থনীতিকে নতুন চাপে ফেলেছে। তাই প্রথাগত বাজেট তৈরির ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে বলে তিনি মত দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা বাজেট কেন্দ্র করে তাদের প্রত্যাশা ও তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। সকলের মতামতের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনলাইন প্লাটফর্মে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিপিডির যুগ্ম পরিচালক (ডায়লগ অ্যান্ড আউটরিচ) অভ্র ভট্টাচার্য।
রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের প্রতিনিধি সুরাইয়া বেগম বলেন, জৈব কৃষিতে প্রণোদনা দেওয়া দরকার। পরিবেশ বাঁচাতে এ খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। এজন্য বীজ, প্রশিক্ষণ, বাজার ব্যবস্থাপনায় ব্যবস্থা দিতে হবে।
এডিডি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল হারুণ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দরকার। অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ দরকার।
নারী আন্দোলনের প্রতিনিধি শামীমা আফরিন বলেন, বাজেটে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ থাকে না। জেন্ডার সংবেদনশীলতার কথা মুখে বলা হলেও বাজেটে গুরুত্ব পায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নারীর স্বাস্থ্যগত যে ক্ষতি হচ্ছে তা প্রতিরোধে উদ্যোগ জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর রুবায়েত ফেরদৌস ট্রান্সজেন্ডার সমস্যা বিষয়ে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার নামক সংস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, হিজড়াদের সঠিক সংজ্ঞা প্রণয়ন হয়নি। ফলে বাজেটে কার জন্য কত বরাদ্দ হচ্ছে সেটা পরিষ্কার নয়। এ ধরনের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কত তা জানার জন্য একটি শুমারি হওয়া দরকার। ট্রান্সজেন্ডারদের এসএমই ঋণের ব্যবস্থা, বিকল্প আবাসন থাকা দরকার। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে অংশ নিশ্চিত করার জন্য তিনি উদ্যোগ আশা করেন।
খন্দকার জহিরুল আলম প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান। ইএসডিওর প্রতিনিধি সন্তোষ টিকার বলেন, আদিবাসী ও দলিতদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর জন্য বরাদ্দ দিতে হবে।
বিলসের পক্ষে আহসান হাবীব বুলবুল বলেন, পরিবহণ শ্রমিকদের জীবনমান অত্যন্ত খারাপ। পরিবহণ শ্রমিকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই, চাকরির নিশ্চয়তা নেই। দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করতে হয়। কিন্তু পরিবহন খাত অর্থনীতি ও জনজীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্মাণখাতের শ্রমিকদেরও একই অবস্থা। শ্রমিকদের পেশাগত রোগ বাড়ছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। খাদ্য নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা দরকার। বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ঘটনা বিমার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে হবে।
জাতীয় হকার ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, হকারদের জন্য একটি নীতিমালা হোক। হকাররা সড়কে বসে দোকানদারি করে, এজন্য টাকা দিতে হয়। এই টাকা সরকারের কোষাগারে দিতে চায় হকাররা। সরকার হকারদের পরিচয়পত্র দিয়ে এবং কোথায় বসতে কত ভাড়া দিতে হবে তার নীতিমালা করেও রাজস্ব আয় করতে পারে।
আদিবাসীদের পক্ষ থেকে খোকন মর্মুরু বলেন, আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ থাকে না। ফলে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর এগোনোর কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। করোনার সময়ে আদিবাসীদের ঋণ অনেক বেড়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক বৈষম্য প্রকট। আদিবাসীদের জন্য বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা পরিষ্কার করা হোক। বাজেটে আদিবাসীদের জন্য আলাদা অনুচ্ছেদ থাকুক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন