ইনকিলাব ডেস্ক : শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে পুঁজিবাজার মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। আসামিরা হলেন- সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসপিএম) চেয়ারম্যান শেলী রহমান এবং গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমান। গতকাল রোববার বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক আকবর আলী শেখ এ আদেশ দেন। রমনা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং নোয়াখালীর এসপি বরাবর এ আদেশ জারি করা হয়। আদেশে, আগামী ১৫ জানুয়ারি ২০১৭’র মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, আসামিদের বর্তমান ঠিকানা মগবাজার, রমনা ঢাকা এবং স্থায়ী ঠিকানা চাটখিল নোয়াখালী।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল এ মামলায় দুই আসামিকে ২ বছর করে কারাদÐ ও ১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক জরিমানা করেছিলেন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবির। তবে তারা মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। ওই রায়ে বলা হয়েছিল, আসামিদের গ্রেফতার বা তাদের আত্মসমর্পণের দিন থেকে সাজা কার্যকর শুরু হবে। এছাড়া আর্থিক জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আসামিদের অতিরিক্ত ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, সিকিউরিটিজ প্রমোশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০০৪ সালে বিএসইসির তৎকালীন সদস্য মোহাম্মদ আলী খান ও পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে বিএসইসির পক্ষে মামলা দায়ের করেন। মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, সিকিউরিটিজ প্রমোশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমানের অস্বাভাবিক লেনদেন তদন্তে কমিশন ১৯৯৮ সালের ৩ নবেম্বর দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা হলেন খায়রুল আনাম খান ও শুভ্র কান্তি চৌধুরী। খায়রুল আনাম খানের মৃত্যুতে তার স্থলে ফরহাদ খানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তদন্তে কাশেম সিল্ক মিলসের শেয়ার অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি ধরা পড়ে। ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বরে ২০ লাখ শেয়ারের এ কোম্পানির ১ কোটি ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০টি ১৬.১৪ শতাংশ বেশি দরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়। এ লেনদেন ও দর বৃদ্ধি ছিল অস্বাভাবিক।
১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বরে এসপিএম কাশেম সিল্কের ৩৮ লাখ ৫ হাজার ৮০০টি শেয়ার ক্রয় ও ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ১০০টি শেয়ার বিক্রয় করে। যা কাশেম সিল্কের ওইদিনের শেয়ার লেনদেনের ৩৬.৪৬ শতাংশ ও ৩৫.৩০ শতাংশ। কমিটির তদন্তে উঠে আসে মোঃ মহিবুর রহমান ২৪.২৭ টাকা দরে ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন ও ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রয় করেন। তিনি দুপুর ১২টা থেকে ১.৩৫ মিনিট পর্যন্ত সময়ে টানা ২২ লাখ ৫৮ হাজার শেয়ার ক্রয় করেন। এরপর ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে আরও ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয় করেন। তিনি ২১.৫০ টাকা দিয়ে শুরু করে এবং সর্বোচ্চ ২৫.৯০ টাকা দরে শেয়ার ক্রয় করেন। এতে একই দিনে নিষ্পত্তি ব্যর্থতা এড়াতে বিক্রেতারা সৈয়দ মহিবুর রহমানের কাছ থেকে শেয়ার পুনঃক্রয় করতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতিতে মহিবুর রহমান ডিকটেটেড মূল্য ২৬ টাকা করে বিক্রয় শুরু করেন এবং ২৫.৯০ টাকা দরে ৩৪ লাখ ২৪ হাজার শেয়ার বিক্রয় করেন। এর মাধ্যমে মহিবুর রহমান ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৯ টাকা ও বাকি থাকা ৯২ হাজার ৩০০ শেয়ার মুনাফা করেন। মহিবুর রহমান প্রাথমিকভাবে ২৫ লাখ টাকা ডিপোজিট করেন, যা প্রকৃতপক্ষে শেলী রহমানের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে তার স্বামী লুৎফর রহমান চেকের মাধ্যমে ডিপোজিট করেন। যা ৩৫ লাখ ১৬ হাজার ৩০০টি শেয়ার ক্রয়ে ব্যবহার করা হয় না। মহিবুর রহমান এই শেয়ার ক্রয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকার রেমিটেন্স ব্যবহার করেন। এখান থেকে তদন্ত কমিটি বুঝতে পারে যে, ডিপোজিটকৃত টাকা অর্থায়ন করেন শেলী রহমান।
মহিবুর রহমান ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৮০ টাকা অর্থায়ন করে ৮ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ টাকার শেয়ার ক্রয় করেন, যা ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশের ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারায় জালিয়াতি। এক্ষেত্রে এসপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফর রহমান, চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও মহিবুর রহমান যোগসাজশের মাধ্যমে এ অনিয়ম করেছেন বলে তদন্তে বলা হয়। -ওয়েবসাইট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন