টানা দু’দিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে রাজধানীর নিউমার্কেটের বেশিরভাগ দোকানপাট। তবে নেই পুরোনো আমেজে কেনা-বেচা। সকাল গড়িয়ে দুপুর আসার সাথে ধীরে ধীরে বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। বিক্রেতারা বলছে, সাধারণ দিনে যেমন লোকসমাগম হয় তেমনটিও নেই! সামনে ঈদ, তবে দু’একদিনের মধ্যে জমজমাট হবে ঈদের বাজার বলে মনে করেন বিক্রেতারা। এদিকে নিউমার্কেট-মিরপুর সড়কেও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নিউমার্কেট এলাকায় ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মেলে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাস্তার দুপাশেই যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান। তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কথা বলেননি। নিউমার্কেটের দুই নাম্বার গেটের নিরাপত্তাকর্মী মো. মামুন বলেন, সকাল ৯টা থেকে মার্কেটের দোকান মালিকরা দোকান খুলেছেন।
নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন বলেন, ভোরে দোকান খোলার ঘোষণা শুনে দোকান খুললাম। ছাত্ররা বিভিন্ন দাবি জানাচ্ছে, সেগুলোর কিছু মেনেও নিয়েছে। তবে এখনও শঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। শঙ্কা নিয়েই দোকান খুলেছি। দাবি-দাওয়া নিয়ে আবার কী হয়, বোঝা যাচ্ছে না। তিনদিন দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। ক্রেতা নাই, বেচাকেনার অবস্থা খুব খারাপ।
ফুটপাতের দোকানি ওমর ফারুক বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। ঈদ ঘিরে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে চাই। দোকান খুললাম। এখন যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। নুর ম্যানশনের ‘দাদু ওয়ান’ নামের জুতার দোকানের স্বত্বাধিকারী নেসার উদ্দিন বলেন, আমরা যে দোকান খুলতে পারছি, এটাই আনন্দ লাগছে। ক্ষতি যা হইছে ওটা তো আর কেউ দেবে না। এখন আমাদের কাছে একটি দিন এক মাসের সমান।
এর আগে গত বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে অবস্থিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে গতকাল সকাল থেকে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হয়।
নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দোকান কর্মচারী মো. মুরসালিন (২৪)। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে নাহিদ (১৮) নামে এক কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী ঢামেক হাসপাতালে মারা যান।
তিনদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়ে ঢামেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ পুলিশ সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। দুই মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ে এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিউ মার্কেট থানা সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরক আইনে ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা দুটি করা হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন-ঢাকা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নাসিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লিটন ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের আবদুল্লাহ আল মাসউদ। চিহ্নিত তিনজনই ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগকর্মী বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মধ্যরাতে সংঘর্ষ থামলেও গত মঙ্গলবার সকাল থেকে নিউমার্কেট এলাকা অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এরপর সোয়া ১০টার দিকে আবারও শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে নিউমার্কেটের সকল দোকানপাট বন্ধের সঙ্গে সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। বেলা গড়াতেই সংঘর্ষ রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন