সদ্য ভারত থেকে ঘুরে গিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সেই সফরে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার কী কথা হল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থান নিয়েই বা বরিস কী ভেবেছেন— এ সব প্রশ্নে বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধীদের প্রশ্নবাণের মুখে পড়ল বরিস প্রশাসন।
তবে এক ঘণ্টার ওই প্রশ্নোত্তর পর্বে বরিস নিজে পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন না। তার তরফে হাজির ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ভিকি ফোর্ড। বরিসের অনুপস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের বেঞ্চে অবশ্য কম চর্চা হয়নি। শুরুতেই স্পিকারের অনুমতি নিয়ে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রথম প্রশ্নটি তোলেন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির এমপি ইয়েন ব্ল্যাকফোর্ড। কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মোদী-বরিসের কী কথা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি ভিকির কাছে জানতে চান।
ব্ল্যাকফোর্ড বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ইউরোপে ভ্লাদিমির পুতিনের ক্রিয়াকলাপ আমাদের আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও বিশ্বের অন্য প্রান্তে সহিংসতা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে সমস্ত ঘটনাগুলি ঘটে চলেছে, সেগুলি থেকে নজর সরানো উচিত নয়।’’ ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসাবে কিছু দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন তিনি।
বিরোধী লেবার দলের সদস্য নিক টমাস-সাইমন্ডস আরও এক ধাপ সুর চড়িয়ে দিল্লির জহাঙ্গিরপুরীতে বুলডোজারের মুখে উচ্ছেদের প্রসঙ্গটি তোলেন। সেই সূত্রে একটি জেসিবি কারখানায় প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বরিসের ‘নড়বড়ে’ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দেন তিনি। পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ প্রসঙ্গে বরিসকে বিঁধেছেন নিক। তার মতে, এমন সুযোগ পেয়েও বরিস তার সদ্বব্যহার করতে পারলেন না।
তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ থাকার অধিকার নিশ্চয়ই ভারতের রয়েছে। কিন্তু সুযোগ পেয়েও ভারতকে ইউরোপের পক্ষে, পুতিনের আগ্রাসনের বিরোধী জোটে শামিল করতে পারলেন না বরিস।’’ লেবার পার্টির নেতা খালিদ মহম্মদ বলেন, ‘‘শুধু কাশ্মীর নয়, ভারতের সর্বত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। শিখ, মুসলিম, খ্রিস্টানদের পাশাপাশি কাশ্মীরিরাও তার শিকার।’’
ব্রিটেন-সহ ইউরোপের নানা দেশ যখন রাশিয়ার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তখন উল্টো পথে হেঁটে মস্কোর থেকে তেল কেনার ভাবনা-চিন্তা করছে ভারত। বিষয়টি উল্লেখ করে ভিকির উদ্দেশে লিবারাল ডেমোক্র্যাট নেত্রী ক্রিস্টিন জার্ডিন বলেন, ‘‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়ে বরিস ভারতের সঙ্গে কী কথা বলেছেন, সে বিষয়ে উনি আলোকপাত করতে পারবেন কি?’’
বরিসের মুখপাত্র ভিকি উত্তরে বলেন, ‘‘বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। দু’দেশের মধ্যে গভীর ও দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে। ... রাজধানী দিল্লির জহাঙ্গিরপুরীতে উচ্ছেদ এবং অন্যান্য রাজ্যে নানা উদ্বেগপূর্ণ ঘটনার রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা আমরা সরাসরি ভারত সরকারকেই জানাব।’’ প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ভারতে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা যে ‘উল্লেখযোগ্য’ ভাবে হ্রাস পেয়েছে, সে বিষয়ে মঙ্গলবারই রিপোর্ট করেছে একটি মার্কিন কমিশন। সূত্র: এবিপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন