শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

জেগে থাকো পূর্ণিমা :

প্রেম ও সামাজিক বিভ্রমের আয়না

আমিনুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৮ এএম

‘জেগে থাকো পূর্ণিমা’ মুহাম্মদ শামীম রেজার গল্পের বই। দীর্ঘ সময় ধরে লিখলেও এটিই তার প্রকাশ হওয়া প্রথম বই। পড়ে উপলব্ধি হলো, গল্পগুলোর আকার ছোট এবং অধিকাংশ চরিত্র বয়সে তরুণ বা কিশোর-কিশোরী। শৈশব-কৈশোর এবং নতুন যৌবনের উন্মাদনায় তার গল্প প্রতিবাদী, স্মৃতিকাতর ও আবেগাশ্রয়ী।

প্রথম গল্প ‘বাঁশি’তে আমরা দেখি, এক মাঝরাতে ফয়সালের আপন মনে বাজানো বাঁশি পড়শিকে টেনে নিয়ে গেছে নদীর অন্য পাড়েÑ ফয়সালের মুখোমুখি। তারা একে অপরকে ভালোবাসে কি না, তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু আমারা দেখবো যে নায়ক-নায়িকা সহজাত আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে পারেনি। পরিণতি হিসেবে পড়শির চেয়ারম্যান বাবার অত্যাচারে ফয়সালের জীবনশঙ্কা আমাদের আহত ও ব্যথিত করে।

মানসিক দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়েনের গল্প ‘টান’। নিটোল বাস্তবতাকে স্পর্শ করা গল্পটিতে বীথি-আহাদের বৈবাহিক বন্ধনের মাঝখানে প্রভাবখাটানো চরিত্র ইউনুস তালুকদার কপট ভালোবাসার জালে মেয়ে এবং জামাইকে নিজের কাছে বেঁধে রাখতে চাইলেও গ্রামে একা পড়ে থাকা পিতা-মাতার বিপন্ন মুখ কল্পনা করে আহাদ একসময় ছেড়ে যেতে চায় সবকিছু। মেকি ভালোবাসাকে পরাজিত করে গল্পটি সার্থক হয়ে ওঠে।

চতুর্বাক প্রেমের ‘মোহ’মায়ায় বন্দি রায়হান ও সাগর জাহান। রায়হানের ক্ষণিক কল্পনাসঙ্গী মিলার উপস্থিতি তেমন উজ্জ্বলতা পায়নি। মোহিনীর রূপমোহই পেয়ে বসে দুজন পরষ্পর পরিচিত প্রেমিককে। সে প্রতারিত ও বঞ্চিত। জীবনে সে আর কাউকে জড়াতে চায় না। এ গল্প মূলত চকচকে আয়নার ভেতরে কঠিন কাচের কান্নাকে প্রতিভাত করতে উদ্যোগী।

‘বেগমজান অথবা সরল আখ্যান’ গল্পে গ্রামীন বাঙালি বউ-শাশুড়ির চিরকালীন দ্বন্দ খুব মুন্সিয়ানায় তুলে এনেছেন গল্পকার। নানামুখি দ্বন্দে¦র ভেতর দিয়ে গেলেও মাতৃত্বগুণের কারণে সাধারণ এক নারী বেগমজান হয়ে উঠেছেন অসাধারণ।

‘কারিগর’ এবং ‘পরিবার’ এর প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও বিষয়-ভাবনার দিক থেকে প্রায় অভিন্ন। উভয় গল্পই মানবিকতা ও মহত্বকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। কারিগর গল্পের নায়ক মূলত একজন শিক্ষক। তাঁর মানবিক, শিক্ষকসুলভ ভূমিকাই অত্যন্ত সচেতনভাবে তুলে এনেছেন লেখক।

‘একজন রূপবানের গল্প’ এবং ‘দ্বিতীয় জীবন’ মূলত একই গল্প। বাড়ির আদরের রূপবান মিথ্যা অপবাদ নিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেও সুখি হতে পারে না। সবকিছ ুছেড়ে গ্রামে এসে বিপদে পড়লে নাটকীয়ভাবে উদয় হয় স্বামী বিল্লাল।

গ্রন্থের শেষে থাকা ‘বঙ্গবন্ধু ও ভালোবাসার গল্প’টিতে এক নেতার ত্যাগী মনোভাব এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি অগাধ ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। গল্পে আমরা দেখতে পাই, অতি এবং পাতি নেতাদের প্রায় সবাই যখন খাইখাই আর নেইনেই করছে, তখন নিজের একনিষ্ঠ ভক্তকে জোর করেও কিছু দিতে পারেন না বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু তার সততা এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ হন। এ রকম ত্যাগীদের নিয়েই তিনি স্বদেশ গড়ার আশায় বুক বাঁধেন।
প্রেমের পাশাপাশি গল্পগুলোতে সমাজের নানারকম অন্যায়, অনাচার ও ব্যাধি উন্মোচিত হয়েছে সাবলীল, সহজ-সুন্দর বর্ণনায়। শামীমের গল্পের ভাষা প্রাঞ্জল ও গতিশীল। বর্ণনা আকর্ষণীয়। এক ধরণের সরল যাদুময়তা আছে প্রতিটি গল্পে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন