শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

অস্ট্রেলিয়ায় প্রটিয়াদের ‘হ্যাটট্রিক’

প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলকে বিশেষ কৃতিত্ব দিতেই হবে। একমাস আগে তারা অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছিল তাদের অধিনায়ক ও দলের সেরা ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ছাড়া। প্রথম টেস্ট শুরু না হতেই ৬ মাসের জন্য হারাতে হলো দলের সেরা বোলার ডেল স্টেইনকে। আর এই দলটিই কিনা উল্টো অস্ট্রেলিয়াকে একের পর এক ঘোল খাইয়েই যাচ্ছে! ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর তৃতীয় দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টানা তিনটি সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন বাকি কেবল হোয়াইটওয়াশ!
এ যেন অস্ট্রেলিয়া নয়, অচেনা কোনো দল। হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল বিশ্বসেরাদের সেই প্রতাপ? টানা ৫ টেস্টে হার। ওয়ানডেতেও শেষ ৫ ম্যাচে জয় নেই। পার্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসে বিনা উইকেটে ১৫৮ থেকে ২৪৮ রানে অলআউট। হোবার্ট টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮৫ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ রানে নেই শেষ ৮ উইকেট! ২ উইকেটে ১২১ রান নিয়ে খেলতে নামা দলটি লাঞ্চের আগেই গুটিয়ে গেল ১৬১ রানে। ফিল্যান্ডার-অ্যাবোট-রাবাদার বল যেন তাদের কাছে মনে হচ্ছিল একেকটা গোলা। সুইং, সিম এবং বাউন্সের সামনে দাঁড়াতেই পারল না তারা। দুই ইনিংস মিলে ১৬ জন ব্যাটসম্যান আউট হলেন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই। ঘরের মাটিতে এমন ঘটনা অজিদের এই প্রথম। পার্থে ১৭৭ রানে হারের পর এবার হোবার্টে ইনিংস ও ৮০ রানের লজ্জা। সবকিছুই ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ারই ঘরের মাটিতে! হোবার্টে দুই ইনিংস মিলে তারা খেলল মাত্র ৫৫৮ বল। ঘরের মাঠে যা তাদের চতুর্থ সর্বনি¤œ।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে লজ্জা ঢাকতে পারলেন না অজি অধিনায়ক স্মিথ। চেয়ারে বসে তার প্রথম কথায় হলো, ‘বিশ্বাস করুন মন থেকে বলছি এখানে বসতে আমি একেবারেই অপ্রস্তুত।’ বললেন, ‘আমার এমন খেলোয়াড় দরকার যারা লড়াইয়ের মানসিকতা রাখে ও লড়াই করতে যানে।’ দলের এমন দশায় ক্ষেপেছেন সাবেকরাও। অনেকে নির্বাচক কমিটির গলা কাটছেন। সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং অবশ্য খেলোয়াড়দেরই দায়ী করলেন, ‘ব্যাটসম্যানরা বুঝতেই পারছেন না তারা কি করবে, কীভাবে খেলবে। তারা খেলছে খুবই রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে, কিন্তু রক্ষণাত্মক খেলতে যে ধরনের টেকনিক দরকার সেটি তাদের নেই। আমরা আবারো আস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের কাছ থেকে বাজে পারফর্ম্যান্স দেখলাম।’
কিন্তু গল্পটা কি শুধুই অজিদের ব্যর্থতার? ডি ভিলিয়ার্সের ইনজুরির সুবাদে দলের দায়িত্ব পড়ল ফাফ ডু প্লেসিসের কাঁধে। কি দুর্দান্তভাবেই না সেটা বয়ে চলেছেন তিনি। হার নেই একটিও, জয় শেষ ৯ ম্যাচের সবকটিতে। এবি ফিরে এলে তার কাঁধেই আবার দায়িত্ব তুলে দেয়া হবে নাকি ডু প্লেসিসই দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন এই নিয়েও আড়ালে শুরু হয়েছে আলোচনা। ব্যাট হাতেও এবি’র অভাবটা বুঝতে দিচ্ছেন না ডু প্লেসিস। দলের বাকি সদস্যের কাছ থেকেও ব্যাটিংটা আদায় করে নিচ্ছেন নিয়মিতই। স্টেইনের দায়িত্বটাও যেন ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তিন পেসার ফিল্যান্ডার-অ্যাবোট-রাবাদা। প্রথম ইনিংসে ভারনন ফিল্যান্ডারের সহকারী হিসেবে ছিলেন কাইল অ্যাবোট। দ্বিতীয় ইনিংসে একাই ৬ উইকেট নিয়ে অ্যাবোট এবার নায়কের ভূমিকায়। রাবাদাও বা পিছিয়ে থাকবেন কেন, বাকি ৪ উইকেটের সবকটিই নিলেন তিনি।
সাকুল্যে চতুর্থ দিনে ২৪.১ ওভারে স্টিভেন স্মিথরা যোগ করেন ৪০ রান। ইনিংস হার এড়াতে করতে হত ১২০ রান। প্রথম উইকেটের ৫ উইকেট শিকারি এবার কোন উইকেট পাননি তবে অস্ট্রেলিয়া কাল সকালে তার বল থেকে প্রথম রান পেল ৩০টা ডট দেয়ার পর। প্রথম রানের দেখা পেতে স্মিথকে অপেক্ষা করতে হয় ৪০ মিনিট। ব্যক্তিগত ৬৪ রানে খাজাকে হারিয়ে শুরু, শেষ হয় দলীয় ১৬১ রানে নাথান লিওনকে হারানোর মধ্য দিয়ে। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে রাবাদার বলে উইকেটের পিছনে ডি ককের হাতে ধরা পড়েন স্মিথ। অ্যাবোট ৬ উইকেট নেন ৭৭ রানের খরচায়, ৩৪ রানে ৪টি নেন রাবাদা। অ্যাডিলেড টেস্টের আগে নিজেদের ভুল শুধরাতে ৯ দিন সময় পাচ্ছেন স্মিথরা। ওদিকে প্রটিয়া অধিনায়ক ডু প্লেসিসও দিয়ে রেখেছেন ‘হোয়াইটওয়াশের’ হুমকি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ৮৫ (স্মিথ ৪৮*; ফিল্যান্ডার ৫/২১, অ্যাবোট ৩/৪১) ও ১৬১ (ওয়ার্নার ৪৫, খাজা ৬৪, স্মিথ ৩১; অ্যাবোট ৬/৭৭, রাবাদা ৪/৩৪)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩২৬ (ডি কক ১০৪, বাভুমা ৭৪, হ্যাজেলউড ৬/৮৯, স্টার্ক ৩/৭৯)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ৮০ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: কাইল অ্যাবোট (দক্ষিণ আফ্রিকা)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন