গায়ের জোরে মেরেছিলেন, বল ছুটেছেও বুলেট গতিতে। কিন্তু হতচ্ছাড়া বলটা সীমানা পেরোনোর আগেই নেমে এল মাটিতে। চার! বেশ সরবেই হতাশা প্রকাশ করলেন বেন স্টোকস। এ শটের কারণেই তো হলো না দুর্লভ সেই কীর্তিটা। ওভারে ছয় ছক্কা মারতে না পেরে ৩৪ রানেই সন্তুষ্ট হতে হলো স্টোকসকে। আগের বলেই ৬৪ বলে শতক পূর্ণ হয়েছে তার।
কাউন্টি ক্রিকেটের এ ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ ছিল স্টোকসের কারণেই। ইংল্যান্ডের নতুন টেস্ট অধিনায়কের মৌসুম শুরু হয়েছে আগের দিন। কিন্তু উস্টারশায়ারের বিপক্ষে বেন স্টোকসকে নামার সুযোগ দেননি দলের টপ ও মিডল অর্ডার। শন ডিকসন শতক পেয়েছেন, কিগান পিটারসেন, স্কট বর্থউইক ও ডেভিড বেডিংহাম পেয়েছেন অর্ধশতক। গতকাল সকালেও ব্যাট করতে নেমেছিলেন বর্থউইক ও বেডিংহাম। কিন্তু দিনের তৃতীয় ওভারে জুটিটা ভাঙে, এরপর ব্যাট করতে নেমেই মনের সব ঝাল মিটিয়েছেন স্টোকস। মাঠে নামার মাত্র ১৯ ওভারেই শতক পেয়েছেন!
স্টোকস-ঝড়টা সবচেয়ে বেশি টের পেয়েছেন জশ বেকার। ইনিংসের ১১৭তম ওভার করতে এসেছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। প্রথম বলটা স্টোকসের ব্যাটের সামনে পড়েছিল। মাথার ওপর দিয়ে তুলে মেরেছেন স্টোকস। পরের বলটা উড়েছে মিড উইকেট দিয়ে। তৃতীয় বলটার জন্য বেছে নিয়েছেন লং অফকে। পরের দুই বলও সীমানা ছাড়ার আগে মাটির স্পর্শ পায়নি। ৫৯ বলে ৭০ রান নিয়ে ওভার শুরু করেছিলেন স্টোকস, ওভারের পঞ্চম বলেই শতক পূর্ণ হয়ে গেল। ৬৪ বলের শতকে ৬টি চারের সঙ্গে ১০টি ছক্কা। কিন্তু শেষ বলে ছক্কা না হয়ে চার না হওয়াতে বুঝি আক্ষেপটাই বেশি হচ্ছে স্টোকসের!
৯৯তম ওভারে নেমেছিলেন স্টোকস। উল্টো দিকে তার সঙ্গী দারুণ ব্যাট করা বেডিংহাম। ৯০ বলে ৮১ রানে অপরাজিত এই ব্যাটসম্যান। প্রথম তিন বলে কোনো রান নেই, চতুর্থ বলে চার মেরে রানের দেখা পেলেন স্টোকস। তার দ্বিতীয় চার এসেছে ১৪তম বলে। তবু ৩০ বল শেষে স্টোকসের রান ছিল ১২। এড বার্নার্ডকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কায় ৩২ বলে ২২ রানে পৌঁছে গেলেন। পরের তিন ওভারে ফিঞ্চ ও বার্নার্ডের বলে আরও দুটি করে চার ছক্কা মারলেন। বার্নার্ডের ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে মারলেন দুই চার। পরের বলে সিঙ্গেল। ৪৭ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় পঞ্চাশ পূরণ স্টোকসের। অর্থাৎ প্রথম পঞ্চাশের পথে তার শেষ ৩৮ রান এসেছে ১৭ বল থেকে।
স্টোকস যখন ৫০ পূর্ণ করেছেন, বেডিংহামের রান তখন ১০৫। অর্থাৎ স্টোকসের প্রতি রানের বিপরীতে অর্ধেক রানও নিতে পারেননি বেডিংহাম। এই পার্থক্য একটু পরই আরও প্রকট হয়েছে। স্টোকস পরের ৫০ রান তুলেছেন ১৭ বলে। এর মাঝে নিজের নামের পাশে আর মাত্র ৬ রান যোগ করতে পেরেছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। পরের ওভারেই জ্যাক লিচকে টানা দুই ছয়ে বেডিংহামকে পার করে ফেলেছেন স্টোকস। পরের ওভারে লিচকে আবার টানা দুই ছয় মেরেছেন।
এর মাঝেই বেরসিকের মতো মধ্যাহ্নবিরতির ডাক এসেছে। ৪ উইকেটে ৫৪৯ রান ডারহামের। ১৪৮ বলের পঞ্চম উইকেট জুটিতে এসেছে ১৮৯ রান। ৮২ বলে ১৪৭ রানে অপরাজিত স্টোকসের সঙ্গে মাঠ ছেড়েছেন ১১৯ রানে থাকা বেডিংহাম।
ডারহামের হয়ে দ্রুততম শতকের রেকর্ড গড়া স্টোকসের সামনে এখন অন্য রেকর্ডের হাতছানি। ডারহামের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ছক্কা ১৯টি। স্টোকস দুই ঘণ্টার কম সময়ে সে রেকর্ডকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। বিরতির পর আবারও শুরু করেছিলেন। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আরু দুই ছক্কা মেরে বিদায় নিয়েছেন ৮৮ বলে ১৬১ রান করা স্টোকসের ইনিংস শেষ পর্যন্ত থেমেছে ব্রেট ডি’অলিভেইরার বলে। সিমানার কাছে ধরা পড়ার আগে ৮ চার ও ১৭ ছক্কা মেরেছেন স্টোকস। ১৭১ বল ও ২২০ রান যোগ করে থেমেছে পঞ্চম উইকেট জুটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন