মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে সতর্ক হোন

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে শংকিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে আমাদের সবার সচেতন হতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এর ব্যবহার কমানো সম্ভব না হওয়ায় এখানে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে। দেশের অ্যান্টিবায়োটিক পরিস্থিতি নিয়ে পরিচালিত গবেষণা সম্প্রতি ‘প্লাস ওয়ান’ নামে আন্তর্জাতিক একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অপ্রয়োজনীয় ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সেবনে কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। করোনাকালে এ সমস্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।

জাতীয় রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা সংক্রমিত রোগীদের ৮০ শতাংশকে প্রয়োজন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক, মূলত এক ধরনের অণুজীবনাশী পদার্থ; যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু চিকিৎসক ও রোগী- উভয়ের অসচেতনতা, অবহেলা ও অজ্ঞতায় দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রমেই কার্যকারিতা হারাচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদের শরীরেও অকার্যকর হয়ে পড়ছে। একটি জাতীয় দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দু’টি আলাদা গবেষণায় দেখা গেছে- ৯ শতাংশ শিশুর মধ্যে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। ৭০ শতাংশ নিউমোনিয়া রোগীর শরীরে কার্যকারিতা হারিয়েছে চার ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না, এমন রোগীর সংখ্যা ৭ শতাংশ। বয়ষ্ক ও শিশুদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারানোর বিষয়টিকে অশনিসঙ্কেত বলে মনে করেন গবেষকরা। তাদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে শরীরে সেই ওষুধের প্রতিরোধ তৈরি হয়। তখন সেই ওষুধ আর কাজ করতে চায় না। শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া তখন ওষুধের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অথচ ব্যাকটেরিয়াজনিত কিছু রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক অপরিহার্য। কিন্তু আগে থেকে এটি কার্যকারিতা হারালে তা হবে ভয়াবহ।

এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে আড়াই লাখের মতো ওষুধের দোকান আছে। এর মধ্যে এক লাখের বেশি অননুমোদিত। এসব দোকান মালিক চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ বিক্রি করে থাকেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ বিক্রেতার পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। লক্ষণীয়, প্রতিদিন জ¦র, সর্দি, কাশি, শরীর ব্যথা, আমাশয়ে আক্রান্ত কয়েক লাখ মানুষ ওষুধের দোকানদার, অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তির পরামর্শে অথবা নিজের ইচ্ছায় অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করেন। তাদের বেশির ভাগই ওষুধ ব্যবহারে কোনো নীতিমালা মানেন না। এভাবে অনিরাপদ ব্যবহার অ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে তুলছে। দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত সেবনের ব্যাপারে ওষুধ বিক্রেতারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী হলেও চিকিৎসকরাও কম দায়ী নন। এসব কারণে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে। গত বছর জুলাইয়ে আইসিডিডিআর-বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল (এমজিএইচ) পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। রোগীর শরীরে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার অর্থ- সুপারবাগ তৈরি হওয়া। প্রতি চারজন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পুরুষের মধ্যে তিনজনের শরীরেই তিনটি বা তার বেশি অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর দেখা যাচ্ছে। ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অন্তত একটি অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারিয়েছে।

এখনই যদি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে সচেতন না হই আমরা; তাহলে সবাইকেই চরম মূল্য দিতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে মানবদেহে ক্রমেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় এর অপব্যবহার রোধ জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার রোধে চিকিৎসক এবং রোগী উভয়কেই সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি ওষুধ বিক্রেতারা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনোভাবেই যাতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করতে না পারেন, সে জন্য ওষুধ প্রশাসনকে ওষুধের বাজারে তীক্ষ্ম নজরদারি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো অনুমোদিত দোকান থেকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা হোক না কেন, সেসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল করতে হবে। একই সাথে কেউ যাতে সরকারি অনুমোদন ছাড়া ওষুধের দোকান খুলতে না পারে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই সম্ভব দেশে ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা। এ ব্যাপারে দ্রুত কিছু না করলে সামনে সমূহ বিপদ।

মো. লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট।
মোবাইল: ০১৭১৬-২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন