অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পাওয়া একাদশ। সেরা পেসাররা বাইরে, দল ঘোষনার পর মিরাজকে হারানো, সিরিজ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানকে হারিয়ে পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার সামিলই। তারপরও চট্টগ্রামে টেস্টের দল নিয়ে ছিল দোলাচল। তার প্রভাব পড়ল প্রথম দিনেই। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৫৮। দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরিতে ২১৩ বলে ১৪ চার ও এক ছক্কায় ১১৪ রানে খেলছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ৭৭ বলে দুই ছক্কায় দিনেশ চান্দিমালের রান ৩৪।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে পারিশ্রমিক কমিয়ে দেওয়ার পর গত বছর অবসর নিতে চেয়েছিলেন ম্যাথিউস। পরে মত বদলে আবার নিজেকে দলে বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি। ফেরার পর চার টেস্ট খেলে ফিফটি ছিল স্রেফ একটি। এই সেঞ্চুরিতে জানান দিলেন, এখনও দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তিনি। একটি সুযোগ অবশ্য এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। ৬৯ রানে তাইজুলের বলে সিøপে ক্যাচ নিতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়। তার বদলে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাত টেস্টে তুলে নিয়েছেন নিজের প্রথম শতকটি।
নিখাদ ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের বোলিং ছিল ভালো-মন্দের মিশেল। ইবাদত হোসেনকে বাইরে রেখে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। কিন্তু দুই পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম প্রভাব ফেলতে পারেননি একটুও। মেহেদী হাসান মিরাজ চোটের কারণে না থাকায় টেস্ট দলে ফেরা নাঈম হাসান প্রথম সেশনে দারুণ বোলিংয়ে দুটি উইকেট নিলেও পরে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। ১৬ ওভারে রান দিয়েছেন ৭১। চমৎকার কিছু ডেলাভারির সঙ্গে বেশ কিছু আলগা বোলিং করে ওভার প্রতি প্রায় সাড়ে চার করে রান দিয়েছেন তিনি। আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৩১ ওভারে ৭৩ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট।
ব্যতিক্রম কেবল সাকিব। কোভিডমুক্ত হয়ে টেস্টের আগে একদিনের অনুশীলনে একটি বলও তিনি করেননি। অথচ টেস্টের প্রথম দিনে হাত ঘোরালেন ১৯ ওভার। এমন উইকেটে কেমন বল করা উচিত, সেটির প্রামাণ্যচিত্রও মেলে ধরলেন। খুব দ্রুতই উইকেট পড়ে নিয়ে তিনি নিজের সহজাত গতির চেয়ে একটু ধীরে বোলিং করলেন। ফ্লাইট দিলেন বেশি। উইকেট থেকে কিছুটা সহায়তা আদায় করতে পারলেন কেবল তিনিই। লাইন-লেংথ তো তার বরাবরই আঁটসাঁট। কেবল তাকে সামলাতেই একটু ভোগান্তি হলো লঙ্কানদের।
দিনের শুরুতে যদিও আশার ঝিলিক দেখা গিয়েছিল নাঈমের বোলিংয়ে। টস হেরে বোলিংয়ে নামার পর ম্যাচের প্রথম বলটিই শরিফুল করেন লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে। সেই শুরু, পেসাররা কোনো চাপই তৈরি করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অষ্টম ওভারেই আনতে হয় স্পিন, মেলে সাফল্য। লঙ্কান দলপতি দিমুথ করুনারত্নেকে ফেরান নাঈম। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজে করুনারত্নের রান ছিল ২৪৪, ১১৮ ও ৬৬। এবার তাকে ৯ রানে ফেরাতে পারা বড় স্বস্তির অবশ্যই। প্রথম সেশনে নাঈম আরেকটি উইকেট এনে দেন থিতু হয়ে যাওয়া ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে।
তবে এর পর বাকি দিনটায় আর সুবিধা নিতে পারল না বাংলাদেশ। লড়াকু সেঞ্চুরিতে দলকে এগিয়ে নেন ম্যাথিউস। প্রথম সেশনে দুই ওপেনারকে বিদায় করে দেওয়া বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সেশনে হতাশ করেন ম্যাথিউস ও কুসল মেন্ডিস। তৃতীয় সেশনের প্রথম বলেই মেন্ডিসকে আউট করার পর দ্রুত ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফিরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ। তবে চান্দিমালকে নিয়ে স্বাগতিকদের হতাশায় ডুবিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন ম্যাথিউস। এই কন্ডিশনে কেমন ব্যাটিং প্রয়োজন তার প্রামাণ্য যেন ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিটি। বাজে বলে মেরেছেন, ভালো বল হলে ঠেকিয়ে গেছেন। তবে সব সময়ই চেষ্টা করেছেন রানের চাকাটা সচল রাখতে। অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নেননি খুব একটা। চান্দিমাল দুই ছক্কায় চাপ সরিয়ে নেওয়ার পর এগিয়ে যাচ্ছেন সাবলীলভাবে। এরই মধ্যে ম্যাথিউসের সঙ্গে ১৪৮ বলে গড়েছেন ৭৫ রানের জুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ২৫৮/৪ (ওশাদা ৩৬, করুনারত্নে ৯, কুসল মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথিউস ১১৪*, ধনাঞ্জয়া ৬, চান্দিমাল ৩৪*; শরিফুল ১৩-১-৩৮-০, খালেদ ১১-১-৪৫-০, নাঈম ১৬-২-৭০-২, তাইজুল ৩১-৮-৭৩-১, সাকিব ১৯-৭-২৭-১)। প্রথম দিন শেষে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন