শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

একটি টেডি বিয়ারের আত্মকাহিনী

| প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শরতের আকাশ

সন্ধ্যায় পশ্চিম দিগন্তে সূর্য্যি মামার হেলে পড়ার মুহূর্তে প্রকৃতি চারদিকে রক্তিম আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। পাখিরা ফিরে চলেছে নিজ নিজ নীড়ে। আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে রয়েছে রাকিন। অনেকদিন পর কাজ থেকে ফিরে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পেল। বাইরের দিক থেকে চাউনি ফিরিয়ে বারান্দার কোনায় দৃষ্টি যেতেই চোখ পড়ল টেবিলের উপর থাকা ধূলোমাখা টেডি বিয়ারের দিকে। অনেকদিন ধরে অবহেলায় অযতেœ পড়ে রয়েছে। তাকে যতœ নেওয়ারমত মানুষ বা সময় এখন আর কোনটায় নেই। অথচ টেডি বিয়ার কত আদর-যতœ, ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকে মানুষের বুকে। এর তুলতুলে দেহ, মায়ামাখা চাহনি, কি যেন বলতে চায় সবসময়। এ অনুষঙ্গটি শিশুদের কাছে খেলনা, প্রেমিকার কাছে প্রেমিকের ভালোবাসার নিদর্শনসহ নানা উপমায় মানুষের কাছে অনেক আদর-যতেœ থাকে। থাকবেই না বা কেন! হাজার হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিয়োডোর রুজভেল্টের ডাকনাম টেডি অনুসারে এ খেলনার নাম টেডির বিয়ার বা টেডি বিয়ার।
সময়টা ১৯০২ সালের শরৎকাল। প্রেসিডেন্ট থিয়োডোর রুজভেল্টের একটু অবসরের প্রয়োজন হয়েছিল হোয়াইট হাউজের কাজ থেকে। তিনি তখন একটা ট্রেনে করে মিসিসিপি গেলেন কালো ভালুক শিকার করতে। জায়গাটা ছিল শহর থেকে একটু দূরে Ñনাম স্মিডস্। প্রথম দিনে কোনো শিকারের দেখা পেলেন না। সবার জন্য এটা খুব হতাশাজনক ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে কুকুরেরা একটা ভালুককে বাগে পেল, যদিও অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তখন হাল ছেড়ে দিয়ে ক্যাম্পে ফিরে গেছেন দুপুরের খাওয়া খেতে। তার শিকারের সহকারী ভালুকটাকে রাইফেলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে সেটাকে একটা গাছের সাথে বেঁধে ফেলে তারপর বিউগল বাজিয়ে রুজভেল্টকে আসার আহ্বান করলেন যাতে প্রাণীটাকে গুলি করার মর্যাদাটা প্রেসিডেন্ট পান। ভালুকটা মেয়ে। আহত ভালুকটা বিমূঢ় আর আর অনেক স্বল্প ওজনের ছিল আর দেখতে ছোটখাটো। রুজভেল্ট যখন ভালুকটাকে গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখলেন তিনি আর গুলি করতে পারলেন না। তার মনে হল এটা একটা অমর্যাদাকর কাজ হবে।
কিছুদিন পরে এই ঘটনা স্মরণযোগ্য করে রাখা হলো ওয়াশিংটনের একটা রাজনৈতিক কার্টুনের মাধ্যমে। শিরোনাম ‘মিসিসিপিতে অসমাপ্ত কাজ’। সেখানে আঁকা হলো রুজভেল্ট বন্দুক নামিয়ে দাঁড়িয়ে ভালুকটিকে জীবন দিলেন। ভালুকটা মাটিতে বসে। ভয়ার্ত খোলা দুটো চোখ আর মাথার সাথে ছোট্ট দুটো কান খাড়া। দেখে এতো অসহায় মনে হবে আমাদেরও মনে হবে একে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেই। সেই সময়ে এই কার্টুন এতো পরিচিত ছিল না। কিন্তু এখন যদি কেউ কার্টুনটার দিকে তাকায় এটাকে চিনতে এক মুহূর্ত দেরি হবে না। আরে এটা তো টেডি বিয়ার। আসলে এভাবেই টেডি বিয়ারের জন্ম। খেলনা প্রস্তুতকারকেরা কার্টুন থেকে টেডি বিয়ারের অবয়বটা গ্রহণ করেন। তারপর এর আদলে একটা মখমলের খেলনা বানান।
অতীতের দিকে না তাকালে এটা অবশ্যই মনে হবে ভালুক মানেই আদুরে তুলতুলে। আর কে না তার বাচ্চা এই গুলটুশ খেলনাটা নিয়ে খেলতে না দেয়। কিন্তু ১৯০২ সালের দিকে ভালুককে কেউ আদুরে তুলতুলে ভাবতেন না। অথচ ভালুকের চেহার কিন্তু সেই একই। কিন্তু তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এইরকম ছিল না। ১৯০২ সালে ভালুক মানেই কিম্ভূতকিমাকার একটা প্রাণী। ভালুককে ভীষণ ভয় পেত বাচ্চারা। সেই সময়কার দিনে ভালুকের কারণে মানুষেরা নানা বিপদে পড়তো। আর সকার ধারাবাহিকভাবে ভালুক ও তার সাথে অন্যান্য ভয়ানক প্রাণী যেমন নেকড়ে এসব ধারাবাহিকভাবে বিলীন করে দিচ্ছিল। এদেরকে খুব ভয়ানকভাবে অন্যদের কাছে পরিচিত করানো হতো। এদেরকে বলা হতো খুনি কেননা এরা মানুষের গৃহপালিত পশুদের খেয়ে ফেলতো। একজন সরকারি জীববিজ্ঞানী ভালুকের মতো প্রাণীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, এখনকার আধুনিকে বিশ্বে এসব প্রাণীদের কোনো দরকার নেই। এদেরকে সম্পূর্ণ সরানোর উদ্যোগ নেয়া হলো। দশ বছরে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ নেকড়ে হত্যা করা হলো। প্রকৃত বিচরণস্থান থেকে ৯৫ শতাংশ ভালুককে সরিয়ে দেয়া হলো। একসময় যেই জায়গা দিয়ে তিন কোটি বাইসন এই স্থলভাগ দিয়ে বিচরণ করতো। পালে পালে এই পশুদের রাস্তা দেয়ার জন্য ট্রেন আটকা পড়তো চার কি পাঁচ ঘণ্টার জন্য। ১৯০২ সালের দিকে মনে হয় শ’খানেক ভালুক আর অবশিষ্ট ছিল। এই টেডি বিয়ারের জন্ম এই ভয়ানক হত্যাযজ্ঞের সময়েই। এটা পরিষ্কার কিছু মানুষ মন থেকে এই হত্যাযজ্ঞ মেনে নিতে পারছিল না। আমেরিকা ভালুককে ভয় পায় আর ঘৃণা করে। কিন্তু হঠাৎ করে আমেরিকার শখ চাপলো ভালুককে একটা আলিঙ্গন করে জড়িয়ে ধরে।
এভাবে প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা আমূল পাল্টে যায়। আর সাথে সাথে এখনকার পৃথিবীতে আমাদের গল্প একইভাবে প্রকৃতিকে পাল্টে দেয়। প্রকৃতির হিংস্র এ প্রাণীর অবয়ব মানুষের মাঝে শক্ত ভাবেই স্থান করে নিয়েছে। যেকোন বিশেষ মানুষের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া এ অনুষঙ্গটির কদর এক শতাব্দী পরেও এতটুকু কমেনি বরং বেড়েছে বৈকি! একজনের হাত হয়ে অন্যজনের কাছে যাওয়া এ যেন তার জন্মগত বৈশিষ্ট্য। মাসের টিউশনির বেতন পেয়েই সোজা মার্কেটে গেল রাকিন। সারা মার্কেট ঘুরে ঘুরে গোলাপী সাদা রঙের একটি টেডি বিয়ার কিনল লাবণ্যর জন্য। গোলাপী লাবণ্যর প্রিয় রঙ। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল লাবণ্যর জন্য একটি টেডি বিয়ার কেনার। সময়, সুযোগের অভাবে এতদিন তা কেনা হয়ে ওঠেনি। হঠাৎ এ উপহার পেয়ে লাবণ্য চমকে উঠবে, মনে মনে সে কথাই ভেবে হেসে উঠল রাকিন। কিন্তু সারামাসের খরচের একটি অংশ চলে গেল উপহারটি কিনতে। কিভাবে মাসের দিনগুলো যাবে সে বিষয়ে তার কোন খেয়াল নেই। প্রিয়তমার হাসিমাখা মুখের কাছে সকল কষ্টই তুচ্ছ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিন। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সে। টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালায়।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লাবণ্য। রাকিনের মনের অধিকাংশ স্থানজুড়ে রয়েছে লাবণ্য। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সে। রাঙা চোখের বাঁকা চাহনি, ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা একটুকরো চিলতে মিষ্টি হাসি, হাস্যজ্জল চেহারার মেয়ে লাবণ্য। ঘোরাঘুরি অত্যন্ত প্রিয়। সময় পেলেই বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যায়। এরই মাঝে পাহাড়, সমুদ্র, প্রকৃতি মাঝে বেশ কয়েকবার বিলীন হয়েছে। আর সেই ভ্রমণের নানা রোমাঞ্চকর ঘটনা বলতে থাকে রাকিনকে, রাকিন তার দিকে চেয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনে তার কথাগুলো। কেউ যদি তাকে ঘোরাঘুরির চাকরি দিত তাহলে বিনা পয়সায় সে চাকরি করতেও তার কোন আপত্তি নেই। লাবণ্যর কথা শোনে আর মনে মনে হাসতে থাকে রাকিন। বিয়ের পর তারা একসাথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াবে। দুজনে দুজনার হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকত, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মেঠো পথ ধরে হেঁটে চলা অজানা কোন ঠিকানার উদ্দেশ্যে কিংবা কোন ঐতিহাসিক বা দর্শনীয় স্থানের পর্যটক হিসাবে সাক্ষী হয়ে থাকা, এমনি নানা কল্পনাই সুখেই দিন কেটে যাচ্ছিল তাদের।
লাবণ্য ক্যাম্পাসের হলেই থাকে। তারা চার বান্ধবী একই রুমের, হলের পঞ্চম তলার বাসিন্দা। উপর থেকে জানালা দিয়ে চারপাশের প্রকৃতি দেখা, রাত হলে ছাদে গিয়ে চাঁদ মামার সাথে আনমনে কথা বলা, এ বিষয়গুলোতে লাবণ্যর মন ছুঁয়ে যায়। দিনটি ২৭ জানুয়ারি ২০১৬। রাকিনের টেডি বিয়ারটি পেয়ে লাবণ্য আজ অনেক আনন্দিত, কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখল আদরের টেডি বিয়ারকে। টেডি বিয়ারটির স্থান হয় বিছানার বালিশের পাশে। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও পড়াশোনা শেষ করে টেডি বিয়ারটি কোলে নিয়ে ঘুমাতে যায় লাবণ্য। চারিদিকে নিস্তব্ধতা, সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রকৃতির নিস্তব্ধতার মাঝে বাইরে থেকে আসা আলোয় জ্বলজ্বল করতে থাকে টেডি বিয়ারটির দুটি চোখ। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে লাবণ্য হারিয়ে যায় অতীতের দিনগুলোতে। তার ভীষণভাবে মনে পড়তে থাকে আদরের মেয়ের কথা।
বাবা-মার একমাত্র সন্তান লাবণ্য। তার মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে নানা-নানীর বাড়িতেই বেড়ে ওঠা। বাবার দ্বিতীয় ঘরের সন্তান সে। বাবার প্রথম ঘরে তার সৎ মা, বড় দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। তাদের রেখেই দ্বিতীয় বিয়ে করে লাবণ্যর বাবা। বিয়ের কিছুদিন পরে লাবণ্যর বাবা তাদের ফেলে রেখে প্রথম ঘরের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতে শুরু করে। লাবণ্যর মা লাবণ্যকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করতে থাকে। নানার বাড়িতেই শৈশব, কৈশোর পেড়িয়ে যায়। লাবণ্যর বাবা কালেভদ্রে মেয়েকে দেখে যেত। বাবার স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত হয় লাবণ্য। পারিবারিক অভাব-অনটনের মধ্যে কিছুটা অনাদরে বড় হতে থাকে লাবণ্য। মায়ের ইচ্ছা ও নিজেদের দৃঢ়তায় সাংসারিক কষ্টের মধ্যেই সে তার পড়ালেখা চালিয়ে যায়। প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পায়। পড়ালেখা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে এই স্বপ্ন নিয়েই বড় হতে থাকে লাবণ্য। মাধ্যমিকে জেলার গার্লস স্কুল থেকে ভালো ফলাফল করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। ইতোমধ্যে বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে। কিন্তু লাবণ্য তখনো বিয়ের জন্য প্রস্তুত না। নিজের ইচ্ছা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েই বিয়ে করবে। সংসারের অভাব-অনটন, পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত মেয়ের সামাজিক অবস্থার কথা ভেবে মামা-খালাদের অনুরোধে একপ্রকার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়েতে বিয়েতে সম্মতি দেয় লাবণ্য। গ্রামের প্রভাবশালী এক মাতব্বরের ছেলে, পেশায় ব্যবসায়ী রইছ উদ্দিনের সাথে বিয়ে হয় লাবণ্যর। বিয়ের পর কিছুদিন ভালোভাবেই কাটছিল তাদের সংসার। বছর না পেরতেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে লাবণ্য।
এদিকে লাবণ্যর স্বামী অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। লাবণ্যকে রেখে আরেকটি বিয়ে করে তার স্বামী রইছ উদ্দিন। জীবনে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। লজ্জায়, অপমান ও ক্ষোভে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে মায়ের কাছে চলে যায়। জীবনের এই সংকটময় মুহূর্তে দিকশূন্য হয়ে পড়ে। চারিদিকের কালো মেঘ, জীবনে নেমে আসা অনাকাক্সিক্ষত দুঃখ ও হতাশায় বিহ্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু নিজের আগন্তুক সন্তানের কথা ভেবে সাহস খোঁজার চেষ্টা করে। এমনি দিনগুলোতে কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে আসে তার প্রথম কন্যা সন্তান। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা ও নিজের জীবনের দুর্গতির কথা ভেবে প্রতিনিয়তই সে হারিয়ে যায় বিস্তৃতির অতল গহ্বরে। জীবনের আঁকাবাঁকা পথে হোঁচট খেতে খেতে আজ সে ক্লান্ত, শ্রান্ত। কিন্তু জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর আকাক্সক্ষা ও বাসনা তাকে দমাতে পারেনি। সে তার পড়ালেখা চালিয়ে যায়। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে রাজধানীর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। নিজের আদরের মেয়েকে তার তার নানীর কাছে রেখে পড়ালেখা করার বাসনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। মেয়েকে রেখে আসতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল লাবণ্যর। মায়ার বাঁধন ছিড়ে সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় রাজধানীতে পাড়ি জমায় লাবণ্য। পড়ালেখা ভালোভাবেই শুরু হয় অনার্স লাইফে। প্রথম কিছুদিন নিয়মিত মা ও মেয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। যতই দিন যেতে থাকে তথাকথিত আধুনিক জীবনের মোহ ও বাসনায় বেমালুম ভুলতে থাকে তার রেখে আসা সন্তানকে, নিজস্ব সত্তাকে। শহরের অলিগলির বিভিন্ন নামিদামি মানুষের সাথে ধীরে ধীরে সখ্যতা গড়ে ওঠে। দুই চোখে এদের বেয়ে সমাজের উঁচু শ্রেণিতে ওঠার স্বপ্ন। ক্যাম্পাসের সকলের কাছেই সে তার সন্তান, অতীতকে গোপন করে তথাকথিত আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলা, এ যেন নিত্যদিনের অভ্যস্থতা। সকলের কাছে মিথ্যা আভিজাত্যে নিজেকে ফুটিয়ে তোলা, এমনি মোহনীয়তায় আচ্ছন্ন থাকে লাবণ্য। এরই মাঝে লাবণ্য রাকিনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। রাকিনের সাথে লাবণ্যর বোঝাপোড়াটও ভালো। লাবণ্যকে নিয়ে রঙিন রঙিন স্বপ্ন দেখে রাকিন। কিন্তু লাবণ্যর অতীত রাকিকেন কাছে অজানাই থাকে।
রাতের কালো আঁধারের নিস্তব্ধতার মাঝে নিজের অতীতের কথা, রঙিন শহরের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, সন্তানের প্রতি চরম অবহেলা লাবণ্যর অন্তরে ভীষণভাবে আঘাত হানে। নিজের মধ্যে পরিবর্তনের প্রেরণা অনুভব করতে করতে কখন যে রাত গড়িয়ে সকাল হয়েছে টেরই পায়নি লাবণ্য। চারিদিকে ভোরের আলোয় পাখপাখালির কিচিরমিচির, দক্ষিণা হাওয়ার মৃদু বাতাসে রুমটা কেমন জানি শীতল হয়ে ওঠে। বিছানা থেকে উঠে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে টেবিলের উপর তার অতীতের কথা, মেয়ের কথা, রাকিনের কাছে তার সত্য গোপনের কথা একটি কাগজে লিখে ফেলে। সকালেই বন্ধুর কাছেচিঠি ও টেডি বিয়ারটি রাকিনের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে সন্তানকে দেখতে বাড়িতে রওনা হয় লাবণ্য। ভালুক তার হিংস্র স্বভাব থেকে প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নিয়ে মানুষের মাঝে স্থান করে নিয়েছে নিজের আকৃতিতে পুতুলের মাধ্যমে। মানুষও তার নিজের পশুত্ব অনুভব করে বিভিন্ন উপমায়, বিভিন্ন উপায়ে। কেউ কেউ অনুভবের পর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে গুছিয়ে ফেলে। হয়তো বা সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের আত্মাকে পেতœীদের অন্ধকার রাজত্ব থেকে শিশুদের নির্মল মনের খেলাধুলা, দুষ্টমির বিস্তৃতিতে বিচরণ করাতে সক্ষম হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন