বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সফরকারী শ্রীলঙ্কা ৩৯৭ রানে অলআউট হলেও মাত্র ১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন লঙ্কান ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৯ চার ও এক ছয়ের মারে ১৯৯ রান করে অফ স্পিনার নাঈম হাসানের বলে সাকিব আল হাসানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। ম্যাথিউস আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই থেমে যায় লঙ্কান ইনিংস। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও তামিম ইকবালের দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ বিনা উইকেটে ৭৬ রান তুলে দিন শেষ করে। তামিম ৩৫ ও জয় ৩১ রানে অপরাজিত আছেন।
দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে অফ স্পিন ঘূর্ণিতে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করে নিজের প্রত্যাবর্তনটা রাঙিয়েছেন নাঈম হাসান। অফ ফর্ম আর ইনজুরিতে থাকায় জাতীয় দল থেকে এক প্রকার হারাতে বসেছিলেন নাঈম। ছিলেন না ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান সিরিজের দলেও। শেষ মুহূর্তে মেহেদী হাসান মিরাজের চোট তাকে জায়গা করে দেয় বাংলাদেশ স্কোয়াডে। প্রায় ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে নাঈম নিজের জাত চিনিয়েছেন। তার অসাধারণ ঘূর্ণি যাদুতে লঙ্কানরা চারশ’র আগেই গুটিয়ে যায়। চট্টগ্রাম টেস্টে ফিরেই রোববার ম্যাচের প্রথম দিনের সকালে নাঈম নেন ২ উইকেট। এরপর নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন তিনি। সুবিধা করতে পারছিলেন না, বল হাতে বিলাচ্ছিলেন রান। এরপর তিনি কথা বলেন সাকিব আর অধিনায়ক মুমিনুল হকের সঙ্গে। টোটকা নেন দলের লঙ্কান স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথের। পরে কিপটে বোলিংয়ে কাল শ্রীলঙ্কার আরও ৪ ব্যাটারকে আউট করে ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট শিকার করেন। দারুণ সাফল্য পেলেও দ্বিতীয় দিনের খেলা নাঈম প্রশংসায় ভাসালেন সাকিব আর মুমিনুলকে,‘উইকেটটা খুব ভালো। ওখানে রান ছাড়া বল করার পরিকল্পনা ছিল ভালো জায়গায়। সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার। গতকালকে (রোববার) সাকিব ভাই, কোচ ও মুমিনুল ভাইদের সঙ্গে কথা বলেছি উইকেট কি ডিমান্ড করছে। সেই অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমতে সাফল্য এসেছে।’ নাঈম যোগ করেন, ‘আসলে সাকিব ভাই তো আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। মুমিনুল ভাইও বলেন। উনাদের কাছে তো পুরো টিমের দায়িত্ব। তো সাকিব ভাই ছোট ছোট বিষয়গুলো বলে দেন, মানে এখন এরকম করতে হবে, যেটা অনেক উপকার হয়।’
প্রায় সাড়ে ৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এর আগে নাঈম খেলেছেন মাত্র ৭টি টেস্ট। এতেই গায়ে সেঁটে গেছে টেস্ট ক্রিকেটারের তকমা। এর মধ্যেও অফ ফর্ম আর ইনজুরি তাকে প্রায় ১৫ মাস রাখে জাতীয় দলের বাইরে। ফেরার পর কী ভাবনা ছিল নাঈমের? জবাবে তিনি বলেন,‘আসলে আমার ওরকম কোনো কিছু চিন্তা ছিল না। আমার চিন্তা ছিল যখন মিরাজ ভাই ইনজুরিতে পড়ছেন তখন খারাপ লাগছে। যখন খেলেছি, চিন্তা ছিল আমি শতভাগ এফোর্ট দেব। দিনশেষে ফল যাই আসুক যেন বলতে পারি শতভাগ এফোর্ট দিয়েছি।’ নাঈম ক্যারিয়ারে এর আগে বেশ কয়েকবার ৫ উইকেট নিলেও ৬ উইকেটের স্বাদ তার এটাই প্রথম। এই পারফরম্যান্সকে কোথায় রাখবেন তিনি? নাঈম বলেন, ‘আসলে এটা এগিয়ে রাখা বলতে সব ৫ উইকেটই তো অন্যরকম। বিশেষত এটা খুব ভালো উইকেটে ছয় উইকেট পেয়েছি, এজন্য একটু এগিয়ে রাখব।’
এদিকে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার অর্ধেকের বেশি রান একাই করেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে পুড়তে হয়েছে মাত্র ১ রানের আক্ষেপে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতে আউট হন তিনি। তার ১৯৯ রানের ইনিংসের সুবাদে চারশ ছুঁইছুঁই স্কোর পেয়েছে লঙ্কানরা। তবে ম্যাথিউস মনে করেন অন্তত ৫০-৬০ রান কম হয়ে গেছে লঙ্কানদের। শ্রীলঙ্কা ১৫৩ ওভারে করেছে ৩৯৭ রান। ওভার প্রতি যা দাঁড়ায় ২.৫৯ রানে। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে এতো ধীরগতিতে রান তোলার কারণ হিসেবে বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংকে কৃতিত্ব দিয়েছেন ম্যাথিউস। বাংলাদেশের বোলাররা কোনো সুযোগই দেয়নি বলে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি। ম্যাথিউস বলেন, ‘এই উইকেটে এটি পার স্কোর। এটি খুবই ভালো উইকেট। বাংলাদেশ অনেক ভালো বোলিং করেছে। তারা আমাদের কোন সুযোগ দেয়নি, কোনো সহজ রান করতে দেয়নি।’ তিনি যোগ করেন, ‘বাংলাদেশের সবাই ভালো বল করেছে। আমাদের ওপর অনেক চাপ সৃষ্টি করেছে। আমাদেরকে কষ্ট করে রান নিতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা ফলও পেয়েছে। আমরা মাঝপথে দ্রুত কিছু উইকেট হারিয়ে পথ থেকে ছিটকে যাই। আমার মনে হয় আমরা ৫০-৬০ রান কম করেছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন