॥কুয়াকাটায় সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে আবাসিক হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে। বরিশাল থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক পরিচয়ে ফজলুল করিম ফারুক নামে এক ব্যক্তি কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত “এ আর খান” নামে একটি হোটেল ভাড়া নেয়। নি¤œমানের টিন সেট আবাসিক হোটেলটি ভাড়া নিয়ে আবাসিকের আড়ালে নারী ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে গত দুই বছর ধরে। শুধু ব্যবসাই নয় নিজেও ভোগ করেছেন একাধিক নারীকে। এ আর খান হোটেল থেকে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে সাপ্লাই দেয়া হতো নারীদের। রয়েছে কতিপয় অসাধু পুলিশের সাথে তার গোপন সখ্যতা। নারী ও মাদক ব্যবসায় কেউ বাধা হয়ে দাড়ালে তাকেই পুলিশি হয়রানীসহ মামলার হুমকী দেয়া হতো। একাধিকবার স্থানীয় যুবকদের সাথে ঝগড়া ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় যুবকদের মামলা দিয়ে জেলও খাটিয়েছেন সাংবাদিক নামধারী এই ফারুক। তার কথার অবাধ্য হলে পতিতাদেরও টাকা না দিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার নজিরও রয়েছে তার এমন অভিযোগ এক ভূক্তভোগির।
গত ৯ মে রাতে মহিপুর থানা পুলিশের এস আই মান্নানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে আবাসিক হোটেল এ আর খান থেকে দুই পতিতা, স্থানীয় আলীপুর বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্য সোহরাফ হোসেনের পুত্র বজলুর রহমান, খদ্দের মাহমুদ ফরাজী এবং হোটেলটির ভাড়াটিয়া মালিক ফজলুল করিম ফারুককে আটক করা হয়। অভিযোগ রয়েছে আটকের পর গনমাধ্যম কর্মীদের সামনেই ইউপি সদস্যের পুত্র বজলুর রহমানকে কৌশলে সরিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের হাতে আটকের পর পতিতা মুক্তা ফারুকের বিরুদ্ধে চল্লিশ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করলেও পুলিশ তা কর্নপাত করেনি এমন অভিযোগ মুক্তার। আটককৃতদের সাধারণ ধারা দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় আদালতে। সেখান থেকে মুচলেকা দিয়ে ফেরত এসে আবারও পতিতা বৃত্তি পুনরায় শুরু করে এরা। অভিযোগ রয়েছে আটককৃতদের মধ্যে দুইজনকে গনমাধ্যমের সামনে আনলেও ফারুককে আনা হয়নি। এই হোটেলটিতে এর আগেও দুইবার অভিযান চালিয়ে গদ্দেরসহ পতিতা আটক করা হয়েছে। তখন পতিতা ব্যবসার মুল হোতা ফারুকের বিরুদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ না নেওয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে ফারুক।
একতলা বিশিষ্ট টিনসেট বিল্ডিং। নেই কোন হোটেলের পরিবেশ। বাসাবাড়ির মত করে তৈরী করা হয়েছে। কুয়াকাটায় রুম সংকটকে পুজিঁ করে টিনসেট ঘরটিকেই আবাসিক হোটেল বানিয়েছে এর মালিক আবুল কালাম আজাদ ওরফে আইয়ুব খান। নাম দিয়েছে এ আর খান। নেই হোটেলটির কোন নিবন্ধন। নি¤œমানের এই হোটেলটি গত দুই বছর আগে ৫ বছরের জন্য ৫০ লাখ টাকায় ভাড়া নেয় সাংবাদিক পরিচয়দারী এই ফজলুল করিম ফারুক। ভাড়া নেওয়ার পর ওই হোটেলের পরিবেশ দেখে কোন পর্যটকই সেখানে ওঠতে চান না। পরে তিনি ব্যবসার ধরণ পরিবর্তন করে ফিরে যায় তার পুরোনো ব্যবসায়। ধরন পরিবর্তনের পর কুয়াকাটায় প্রথম শ্রেনীর আবাসিক হোটেলে রুম খালি থাকলেও এ আর খান হোটেলের কক্ষ কখনও খালি থাকেনি। পতিতা মাদকসহ অসামাজিক কার্যকলাপ বীরধর্পে চালিয়ে আসছিলো ফারুক। নিজেও সার্বক্ষনিক নারী ও মাদকে ভেসে বেড়িয়েছে। পতিতার সাথে রঙ্গ লিলার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেইসবুকে। এরপর পুলিশ নিজেদের মান রক্ষায় গত ৯ই মে ২০২২ রাতে অভিযান চালায় এ আর খান হোটেলে। আটক করে হোটেলের ভাড়াটিয়া মালিক ফারুকসহ কয়েকজনকে। সেখানেও পুলিশের নানা নাটকীয়তা।
কে এই ফারুক ?
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২ নং ওয়ার্ডের কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা মৃত হাতেম আলীর পুত্র ফজলুল করিম ফারুক। বরিশালে থাকতেও তিনি পতিতা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। প্যারাডাইস নামক একটি আবাসিক হোটেল পরিচালনা করতো ফারুক। ওই হোটেলে তিনি পতিতা ব্যবসা করতেন। পতিতাসহ কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরাও পরে। নিজেকে প্রভাবশালী পরিবারের লোক হিসেবে উপাস্থাপন করতে কুন্ঠাবোধ করতো না তিনি। এ ব্যবসায় নিজেকে আরও পাকাঁপোক্ত করতে সম্পাদক ও প্রকাশককে ম্যানেজ করে বরিশাল থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়। এ পরিচয়ের আড়ালে কুয়াকাটায় নতুন ভাবে শুরু করে পতিতা ব্যবসা। পতিতা ব্যবসায়ী ফারুক বরিশাল থেকে প্রকাশিত ওই পত্রিকাটির নামে মাত্র ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছে কুয়াকাটায় বসেই। যদিও ওই পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশ এ ঘটনার পর থেকে ফারুককে চেনেন না বলে এড়িয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক কুয়াকাটা ৩ নং ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা জানান, ফারুক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কুয়াকাটায় একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানীর সাথে শেয়ার হয়। বনিবনা না হওয়ায় সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। স্থানীয়রা আরও জানান, এ আর খান হোটেলটি পতিতাদের আড্ডা খানায় পরিনত ছিল। দিনে দুপুরেও নারী ও মদ নিয়ে ট্রলারের মাঝি,পর্যটকসহ স্থানীয় যুবকরা আমোদ ফুর্তি করতো। গত ৯ মে পতিতাসহ ফারুকের কু-রুচি সম্পন্ন কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে ফারুকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বরিশাল থেকে প্রকাশিত ওই পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এ্যাড. এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীসহ ফারুকের ছবি তিনি নিজেও দেখেছেন। ফজলুল করিম ফারুক একজন প্রতারক ও নারী ব্যবসায়ী। ফারুকের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তাকে চিনিও না। মানব পাচার আইনে ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল পুলিশের।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মাদ আবুল খায়ের বলেন, এ আর খান হোটেলের ভাড়াটিয়া মালিক ফজলুল করিম ফারুককে পতিতাসহ আমরা আদালতে সোপর্দ করেছি। সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এই ফারুক আদালত থেকে মুচলেকা দিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। বাদী না থাকায় মানব পাচার আইনে মামলা দেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, নি¤œমানের আবাসিক হোটেলে যারা পতিতা ব্যবসা করে তাদের ব্যাপারে তথ্য দিলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অসামাজিক ব্যবসার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন