কে জি মোস্তফা একজন নন্দিত ও জনপ্রিয় গীতিকার হিসেবে সমাজে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন মূলত একজন আধুনিক কবি। কবিতা দিয়েই তার সাহিত্য জীবনে প্রবেশ এবং এই কবিতার পেছেনেই তার সারাজীবন অতিবাহিত হয়েছে। তিনি আজীবন কবিতার সেবা করে কাটিয়েছেন।
তিনি সবসময় সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এই সৃজনশীলতার অংশ হিসেবে তিনি দুই দশকের কিছু বেশী সময় সিনেমার গান রচনায় ব্যস্ত ছিলেন। আর এই গানই তাকে দিয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা আর ঢেকে ফেলেছে তার আধুনিক কবি পরিচয়।
তিনি কবিতা, ছড়া, গান প্রবন্ধ, নিবন্ধ আর আত্মজীবনী যেমন লিখেছেন তেমনি নানা সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন জীবনভর। এ দেশের বহু কবি সাহিত্যিক তাঁর হাত ধরে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
১৯৩৭ সালের ১ জুলাই নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮ মে ২০২২ রবিবার রাতে ঢাকায় শেষ নি:শ্বাষ ত্যাগ করেন।
তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে/ আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে/ এমন দুটিসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা কবি ও গীতিকার কে জি মোস্তফা। তিনি মূলতঃ কবি। কিন্তু গানের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে তার কবি পরিচিতি অনেকটা ঢাকা পড়ে গেছে। কারণ কে জি মোস্তফার নাম শোনার সাথে সাথে সবার ঐ জনপ্রিয় গান দুটির কথা মনে পড়ে যায়।
তিনি প্রথমে কবিতা লেখা দিয়েই সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেছিলেন এবং সারা জীবন এই কবিতার পেছনেই ব্যয় করেছেন। মাঝখানে দুই দশক ধরে সিনেমার স্বর্ণযুগে গান লিখে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার গান মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে। তার গানের সংখ্যা হাজারের উপরে। বিশেষ করে বেশীর ভাগ বাংলা রোমান্টিক গানের রচয়িতা তিনি। ফলে তাকে খুব কম মানুষই একজন আধুনিক কবি হিসেবে চেনে।
কে জি মোস্তফা ছিলেন আপাদমস্তদক ভালো কবি। শুধু তাই নয় অত্যন্ত ছন্দ সচেতন।
একটি কবিতায় তিনি বলছেন,--সময় তুমি যতই বিশৃঙ্খল হওনা কেন/ কবিতাই আমার জয়লাভের প্রধান অস্ত্র/ আমরা বুঝে নিতে পারি তিনি কবিতা দিয়েই সময়কে জয় করতে চেয়েছেন। কারণ শেষ পর্যন্ত কবিতাই টিকে থাকে। আর সব কালের গর্ভে হারিয়ে যায়।
জীবন এখন এক নোংরা জলের নর্দমা/ সেখানে কেবল মরা ব্যাঙ আর ইঁদুরের হাড়/ গিজগিজ পোকাদের উৎসব, বুনো জঙ্গলে বিষাক্ত/ সাপের হিসহিসানি; এ বিশ্বে এখন অবাঞ্ছিতা বলে/ ফুরিয়ে গেছে আমার সব দাবী সব প্রয়োজন।/ বিমুঢ় যুগের বিভ্রান্ত পথিক আমি যেন আজ/ হাত থেকে হাতে ঘোরা শুধু এক উড়ন্ত রুমাল/কতটা আধুনিক হলে সময়কে নিয়ে এমন উচ্চারণ করা যায়? আর একটি কবিতায় তিনি বলছেন, শব্দের পেছনে আছে বিশৃঙ্খলা, তবু শব্দ আমি/ সাজাবোই; আমার নিয়মিত ভালোবাসা ও সৌন্দর্য/ আধুনিক মানুষ বেশীর ভাগ নগরবাসী। তারপরও তারা খুবই নি:সঙ্গ আর এই নি:সঙ্গতা বোধকে তিনি তুলে ধরেছেন এভাবে-- মানুষের অরণ্যের মাঝে কখনো কখনো/ নিজেকে সম্পূর্ণ একা মনে হয়/তখন বন্ধু বলতে কেবল ঐ রাস্তাগুলি/তার কয়েকটি ছড়ার বই রয়েছে। শেষের দিকে তিনি কিছু হামদ ও নাত রচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ গোড়ামিমুক্ত উদার আধুনিক মনষ্ক একজন মানুষ।
তিনি সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে যখন কাজ করেছেন তখনও নবারুণ, সচিত্র বাংলাদেশের মত সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘদিন।
২০০৭ সালে তিতাশ চৌধুরীর সম্পাদনায় কে জি মোস্তফা’র উপর একটি সংকলন বের হয় যার নাম ছিল একজন কে জি মোস্তফা। সেখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় কবি সাহিত্যিকগণ তাঁর স্মৃতিচারণ করেছেন এবং তাঁর লিখিত গান ও কবিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
কে জি মোস্তফার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, ১.কাছে থাকো ছুয়ে থাকো ২ উড়ন্ত রুমাল ৩. চক্ষুহীন প্রজাপতি ৪. সাতনরী প্রাণ ৫. এক মুঠো ভালোবাসা ৬. যে কথা মনের কথা৭. প্রেম শোনে না মানা ৮. আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন। ছড়ার বই ১. শিশু তুমি যিশু ২. কন্যা তুমি অনন্যা ৩. হাজার ছড়া শিশুর পড়া
গদ্যগ্রন্থ ১. কোথায় চলেছি আমি (আত্মকাহিনি ২. যেতে হবে কত দূর (আত্ম কাহিনি। গানের সিডি ১. তোমারে লেগেছে এত যে ভালো ২. তৃষ্না আমার হারিয়ে গেছে ৩. হারানো গান হারানো স্মৃতি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন