রোমাঞ্চের খানিকটা আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছে চট্টগ্রাম টেস্ট। শেষ দিনে এক ঘণ্টা বাকি থাকতেই ড্র মেনে নিল দুই দল। এই টেস্ট ড্র হলেও বাংলাদেশ দলের সাফল্য রয়েছে অনেক। করোনার কারণে সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে পাওয়া না পাওয়া দোদুল্যমান থাকা, পেসার তাসকিন আহমেদ ও অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে পড়া বাংলাদেশ দল সেরা একাদশ গঠন করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সাকিবকে পাওয়ায় দলে এসেছিল স্বস্তি। এ স্বস্তির মাঝে চট্টগ্রামের দুই সন্তান দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি, অফ স্পিনার নাঈম হাসানের ছয় উইকেট এবং বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
গত বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ব্যর্থতার কারণে দলে জায়গা হয়নি নাঈম হাসানের। কোনভাবেই সুযোগ মিলছিলনা দলে ফেরার। মেহেদী হাসান মিরাজের ইনজুরি কারণে দলে ফেরার সুযোগ পান তিনি। নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ করলেন এ সিরিজে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিলেন ছয়টি উইকেট। তার মধ্যে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেননি নাঈম হাসান। ১৯৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট নিয়ে লঙ্কান ইনিংস মুড়িয়ে দেন এ তরুণ অফ স্পিনার। টেস্টে নাঈমের এটি তৃতীয় পাঁচ উইকেট। যার দুটি এলো বাংলাদেশে লাকি ভেন্যু তার হোম গ্রাউন্ড জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে। এ ভেন্যুতে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নাঈমের হয়েছিল অভিষেক। তখন পাঁচ উইকেট ছিল তার বোলিং ফিগার।
ওপেনার তামিম ইকবালের ব্যাট জ¦লে উঠছিলনা অনেকদিন। এজন্য সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না। সবশেষ সেঞ্চুরিটি করেছিলেন প্রায় তিন বছর আগে। মাঝে কয়েকবার খুব কাছে গিয়েও পুড়তে হয়েছে আক্ষেপে। এবার ‘নিজ ঘরেই’ সেই ক্ষতে প্রলেপ দিলেন তামিম ইকবাল। তুলে নিলেন টেস্টে নিজের দশম সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন দেশসেরা এই ওপেনার। এবারের আগে সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি ১৬ ইনিংস আগে। সেটিও ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ১২৬ রানের ইনিংস। তার মাপের ব্যাটসম্যানের জন্য খুব আদর্শ নয়, তবে সাধারণ হিসেবে খুব বড় কোনো বিরতি পড়েনি মাঝে। তারপরও এই সেঞ্চুরি তার কাছে কাক্ষিত হতে পারে দুটি কারণে। প্রথমত, ইনিংস খুব বেশি না খেললেও সময় গড়িয়েছে অনেক। সবশেষ টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল তার তিন বছরেরও বেশি সময় আগে। এরপর কোভিড বিরতি, নিজের চোট-বিশ্রাম-ছুটি মিলিয়ে কিছু টেস্টে তিনি খেলতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, এই ১৬ ইনিংসে সেঞ্চুরির হাতছানি তার ছিল বেশ কবার। এই সময়ে দুইবার আউট হয়েছেন ৯০ ছুঁয়ে। ৭০ ছোঁয়া ইনিংস আছে আরও তিনটি। তামিমের ভেতর তাই তিন অঙ্কের তাড়না তীব্র হচ্ছিল নিশ্চয়ই। এবার তিনি মেটালেন সেই তৃষ্ণা।
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে এখন সবার উপরে মুশফিকুর রহিম। গত কয়েক ম্যাচ ধরে ব্যাটে রান আসছিলনা মুশফিকের। শেষ পর্যন্ত ফিরলেন একেবারে রাজকীয়ভাবে। প্রমাণ করলেন দলে তিনি এখনো অপরিহার্য। ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুশফিক। যদিও সেটি এসেছে দীর্ঘ ২৭ মাস পর। সেঞ্চুরির চাইতেও যে বড় কীর্তিটি গড়েছেন তা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে সবার আগে পূরণ করেছেন পাঁচ হাজার রান। যদিও সে মাইলফলকটি মুশফিকের আগেই পেরিয়ে যেতে পারতেন তামিম। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে ইনজুরিতে পড়ে অবসরে চলে যাওয়ায় সেটি আর পূরণ হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন