শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় ৪ দফা প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২২, ১১:০২ এএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও আর্থিক সংকট মোকাবেলায় সু-সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ৪টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন তিনি। যার জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।শুক্রবার (২০ মে) প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ (জিসিআরজি) এর প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধ এমন এক সময় শুরু হয়েছে যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ধার পেতে লড়াই করছে। এ যুদ্ধ ইতিমধ্যে নাজুক বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুতর চাপ যুক্ত করেছে।’প্রধানমন্ত্রী কার্যকরভাবে সংকট মোকাবিলায় উন্নত অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন।জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে এই গ্রুপটি গঠন করেছেন।শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে, যেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের স্বল্প সরবরাহ এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে।এ বিষয়ে তিনি উন্নত দেশসমূহ ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চারটি প্রস্তাব রেখেছেন।প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সু-সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’তিনি বলেন, আমরা সংকট মোকাবেলায় কার্যকর সুপারিশ প্রণয়নের জন্য তাদের প্রচেষ্টায় আমাদের পূর্ণ সমর্থন দেব।দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবেলা করা প্রয়োজন।তিনি আরো বলেন, এ প্রয়াস পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির বৈশ্বিক বাণিজ্য ও রপ্তানি আয় পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমর্থনও থাকতে হবে।তিনি বলেন, উন্নত অর্থনীতি এবং বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং শুল্ক-মুক্ত-কোটা-মুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়ন প্রদান করতে হবে।তৃতীয় প্রস্তাবে, শেখ হাসিনা বলেন, কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষি খাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের উপর আরও বেশি গুরুত্ব প্রদান করা অপরিহার্য।তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে বিশেষ করে এলডিসিতে অনেক সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ রয়েছে।তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, ‘এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমরা বিদ্যমান উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার সুবিধা নিতে পারি। এই বিষয়ে বেসরকারি খাতের সাথে সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে।’পরিশেষে, তিনি ৪৮-সদস্যের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করেন, আমরা অনেক এসআইডি এবং নিন্মাঞ্চলীয় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।এসব দেশে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে।বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ় বিশ্বাসী।তিনি বলেন ‘আমরা সর্বদা বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। এই গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি সেই প্রত্যয় থেকে উদ্ভূত।’জাতি হিসাবে আমরা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতার জন্য পরিচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী তার সর্বশেষ উদাহরণ।তিনি বলেন, মহামারী কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টায় জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার মধ্যে সতর্ক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে।তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদান করেছি। যারা সবচেয়ে পিছনে রয়েছে তাদের সহায়তা দেয়ার আমরা সামাজিক সুরক্ষার কভারেজ প্রসারিত করেছি।তিনি উল্লেখ করেন, ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সময়মত ব্যবস্থা গ্রহণ আমাদের একটি বড় স্বাস্থ্য সঙ্কট এড়াতে এবং জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে।তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের রপ্তানি খাত এবং এসএমইকে সমর্থন করার জন্য বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছি। ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। আর এই পদক্ষেপগুলি আমাদের গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে সহায়তা করেছে।বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।’গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি বলেন, ‘আমি এই সঙ্কটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের কণ্ঠস্বর টেবিলে নিয়ে এসেছি।আমরা অন্যদের সুবিধার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবনতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের জ্ঞান, বোঝাপড়া এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই।’কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসিচব জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।শেখ হাসিনা বলেন, মহামারী থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে সামাজিক-নিরাপত্তা-নেট কর্মসূচির প্রসাার এবং নিয়মিতভাবে ১ কোটিরও বেশি মানুষের কাছে খাদ্য ও নগদ অর্থ সাহায্য পৌঁছে দেওয়া।প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, কার্ড ইস্যু করার মাধ্যমে ১ কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে (৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য কমিয়ে) ভোজ্যতেল, ডাল এবং চিনির মতো ভোগ্যপণ্য বিক্রি করার কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।এছাড়া , তিনি বলেন, তাঁর সরকার একাধিক উৎস অনুসন্ধান করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশীয় খাদ্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার করেছে। সূত্র : বাসস

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ২১ মে, ২০২২, ১১:৫০ এএম says : 0
বিশ্বের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খাদ‍্য জ্বালানি সংকট কভিট মহামারী ভয়ানক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কে নগদ অর্থ খাদ‍্য সামগ্রী প্রদানকারী আটার কোটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্যে হাজার হাজারো কোটি টাকার ফ্রি টিকার ব‍্যবস্থা করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আপনি পকৃত অর্থেই মানবতার মা প্রমাণিত হলেন। বিশ্ব অর্থনীতি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধ ইউরোপ ল‍্যাটিন আমেরিকা এশিয়া সহ পৃথিবীর অর্থনৈতিক নাজুক পরিস্থিতি জন‍্য। একমাত্র দায়ী আমেরিকা। দক্ষিণ এশিয়াই বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির রুপকার আপনি উন্নয়নশীল বাংলাদেশ যখন শক্তিশালী মজবুত অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছেন। দেশীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ কে কিভাবে কোন পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কা বানানো যায়। তাদের নকশা আকা হচ্ছে। শক্ত মজবুত হাতে বাংলাদেশ কে উদ্ধার করুন।আপনি বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের একজন এবং দক্ষিণ এশিয়ার ক‍্যারেশ ম‍্যাটিক নেতা। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের প্রতিষ্টাতা আপনার ভীশনারি লিডারশিপ বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে থেকে এগিয়ে যাবে বহুদুরে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব অর্থনীতির চ‍্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব আপনার হাতে নিরা পদ। প্রযোজন ঐক্যবদ্ধ জাতির আন্তরিক সহযোগিতা। দেশের সাধারণ মানুষের দোয়া এগিয়ে যাবেন এগিয়ে যাবেন আশাবাদী। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র যুবকের কর্মসংস্থানের ব‍্যবস্থা হবে।শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরাশক্তি বাংলাদেশ হবে। আপনার দীর্ঘায়ু সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। মহান আল্লাহর পবিত্র দরবারে আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন