ব্যাট হাতে সম্প্রতি ফর্মটা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশ দলের টেস্ট ফরম্যাটের অধিনায়ক মুমিনুল হকের। জল্পনা চারিদিক, অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে না থাকলে হয়তো একাদশে জায়গা পেতেই কষ্ট হয়ে যেতে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। সর্বশেষ ১৪ ইনিংসে একটি মাত্র অর্ধশতক বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের। সর্বশেষ ৯ ইনিংসে তার সর্বোচ্চ স্কোর ৩৭। দস্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ৪ ইনিংসে করেছেন মোটে ৬২ রান। কোনো ম্যাচেই ২০ রানের গণ্ডি টপকাতে পারেননি। সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ৪ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ রান। দুই অঙ্কের কোটার দেখা পাননি। জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ ৭ ইনিংসে তার ব্যাটে ফিফটি নেই। সেঞ্চুরি বঞ্চিত ১৬ ইনিংস ধরে। সময়ের হিসেবে সেটি ১৫ মাস ছাড়িয়েছে।
গত বছর নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে ব্যর্থতার এই মিছিল শুরু তার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের ম্যাচেই কেবল ৮৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। বাকি ১২ ইনিংসের মধ্যে মাত্র দুবার দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন! আশা করা হচ্ছিল, লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসবেন। অথচ দেখা গেলো একই পরিণতি! গতকাল ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নয় রান করে আউট হয়েছেন।
এদিন অবশ্য বাংলাদেশের টপ অর্ডারের সব ব্যাটসম্যানই ব্যর্থ হয়েছেন, তবে মুমিনুল হককে আলাদাভাবে চোখে পড়ছে যিনি চট্টগ্রামের মতো ব্যাটিং স্বর্গেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। আরো মোটা দাগে যেটি বেশি দুষ্টিকটু লেগেছে তা হচ্ছে- পছন্দের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে পেয়েও নিজের উজ্জ্বীবনি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কেননা পরিসংখ্যান বলছে, টেস্ট ক্যারিয়ারে যে ১১টি সেঞ্চুরির ৪টি-ই লঙ্কানদের বিপক্ষে। মজার ব্যাপার হলো সেগুলোর ৩টি আবার এসেছে লঙ্কান সিরিজের প্রথম টেস্টের ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এবার সেখানেও মাত্র এক ইনিংস সুযোগ পেয়েও ছিলেন ব্যর্থ। মাত্র দুই রানে বোল্ড হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে!
গতকাল শুরু হওয়া ঢাকা টেস্টেও দলের বিপদ বাড়িয়ে এলেন উইকেট বিলিয়ে। আসিথা ফার্নান্দোর যে বলে আউট হলেন, ব্যাটের অবস্থান দেখে মনে হয়েছে খেলবেন কি না সেটা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না মুমিনুল। আগাগোড়া নিজের ছাত্রকে খেয়াল করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট মেন্টর ও বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনিও মুমিনুলের এমন আচরণে অবাক, ‘মুমিনুলের আউট হওয়া বা রান না পাওয়ার চেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় তার সিদ্ধান্তহীনতা। তাকে কোনও ভাবেই নির্ভার লাগছে না। মনে হচ্ছে তিনি নিশ্চিত না কী করতে চান তিনি।’
মুমিনুলের মাঠের খেলার ব্যাখ্যা যাই থাকুক পরিসংখ্যান এখন তার বিরুদ্ধেই কথা বলছে। গত ১৪ ইনিংস ব্যাট করে মাত্র একটি ফিফটি করেছেন মুমিনুল। সর্বশেষ চৌদ্দ ইনিংসে মাত্র তিনবার পৌঁছাতে পেরেছেন দুই অঙ্কে। ইনিংসপ্রতি রান দেখুন- ৬, ০, ১, ৭, ৮৮, ১৩*, ০, ৩৭, ০, ২, ৬, ৫, ২ এবং গতকাল ৯। একবারই তিনি অর্ধশতক পার করতে পেরেছেন। অথচ তিনি এখন টেস্ট দলের অধিনায়ক এবং এমন এক জায়গায় ব্যাট করতে নামেন যেখানে দায়িত্ব নিয়ে না খেললে গোটা দলের ওপরই পাল্টা চাপ পড়ে। নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বললেন, অধিনায়কত্ব একটা চাপ বটে, ‘এটা থাকবেই। টেস্টে বাংলাদেশ এতো অধারাবাহিক একটা দল যে অধিনায়কের মাথায় ব্যাপারটা থাকে। বিশেষত বারবার পরাজিত দলের অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা এবং একই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ায় মুমিনুল হককে অপ্রস্তত হতে হয়েছে।’
তবে মুমিনুল চেষ্টা করেন বাস্তবতা মেনে উত্তর দিতে। কিন্তু তার ব্যাট হাতে পারফরম্যান্স তাকে আরও বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় যার পুরো দায়ভার একান্তই তার। অর্থাৎ অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থতার পাশাপাশি টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে যে একটা সুনাম ছিল সেটাও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এই বিষয়টা মুমিনুল হককে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে মুমিনুল হকের রান ছিল ৩৬ ম্যাচে ২৬১৩। একচল্লিশ গড়ে এই রান তুলেছিলেন তিনি। টানা অর্ধশতকের রেকর্ডসহ ১৩টি ফিফটি এবং ৮টি শতক ছিল সেই সময়ে। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পরে ১৭ ম্যাচে গড় নেমে হয়েছে ৩২। দুইটি অর্ধশতক ও দুইটি শতক মোটে তিনি করেছেন অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর।
এটা সত্যি যে দলে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ এবং আগে অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটার থাকার পরেও তাদের অনীহার কারণেই মুমিনুল হককে টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে এবং তিনি যে চাপে থাকেন সংবাদ সম্মেলনে কখনো কখনো ফুটে ওঠে। এই যেমন শেষ টেস্টে মুমিনুলের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সবাই সেঞ্চুরি করলে তো ১১০০ রান হয়ে যাবে।’ পাশাপাশি ব্যাটিং নিয়ে তিনি ‘চিন্তিত নন’, এই কথাটাও বেশ ‘চিন্তা করেই’ বলতে হয় তাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন