রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বাধা উপেক্ষা করেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বালু লুট

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২২, ৬:৪৮ পিএম | আপডেট : ১০:৫৭ এএম, ২৬ মে, ২০২২

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলকে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে গত প্রায় এক বছর ধরে ৪ কোটি ৮৩ লক্ষ ঘনফুটের এ বালু নেওয়া শুরু করলে স্থানীয় প্রশাসন ছাড়াও স্থানীয় এমপির’র বাধার পরেও থামছে না ওই বালু লুট পাট। গত রবিবার ওই স্থান থেকে ছয়জন শ্রমিককে আটক ছাড়াও বালু বহনকারী ট্রাক্টর গুলি অচল করে দেওয়া হলেও ফের বালু নেওয়া কার্যক্রম চলছে।

জানা যায়, আগামী ১৫ বছরে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করা সরকারী সংস্থা বাংলাদেশ অথনৈতিক অঞ্চল(বেজা) নতুন করে ৯টি অর্থনৈতিক স্থান চুড়ান্ত করেছে। তার মধ্যে সরকারি ভাবে পাঁচটির মধ্যে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ও রাজিবপুর ইউনিয়নের চররামমোহন মৌজায় ৪২৩ একর জমিতে একটি। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটির ফলে উপকৃত হবে ঈশ্বরগঞ্জ , নান্দাইল, ত্রিশাল, গৌরীপুর, ও কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর অঞ্চলের মানুষের। জেগে উঠা বালুচরে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন হওয়ায় উল্লেসিত এলাকাবাসী। অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পকারখানায় কাজ করে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পাল্টাবে বলে আশা করছেন সাধারন মানুষ।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রস্তাবিত ওই অর্থনৈতিক জুনে বিআইডব্লিওটিসি পাশের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ৪ কোটি ৮৩ লক্ষ ঘনফুট বালু উঠিয়ে রেখে কার্যক্রম শুরু করে। এ অবস্থায় সেখান থেকে শতশত ট্রাক ভর্তি করে বালু নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। তাদের দেখাদেখি পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে স্থানীয় আরেকটি চক্র। এতে নদের পাড় ভেঙ্গে হুমকীর মুখে পড়ছে গ্রামবাসি। দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মকান্ড অব্যাহত থাকায় বিলীন হয়েছে অনেক গ্রাম। অন্যদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বালু শতশত ট্রাক ভর্তি করে নেওয়ায় অর্থনৈতিক জুনের কর্মকান্ডে মারাত্বক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এ সব ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে অভিযান চালিয়ে বালু বহন করা যানবাহন জব্ধ করলেও কোনো কাজে আসছে না। দুই একদিন বন্ধ থাকলেও ফের আগের মতোই বালু নেওয়া শুরু করে ওই প্রভাবশালী মহলটি। তাই বিষয়টি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকে যায় ক্ষমতা বলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বালু নিয়ে যাচ্ছে কেই এই প্রভাবশালী?

এরই মাঝে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুর রহমান সার্ভিয়ার ও স্থানীয় ভূমি অফিসের নায়েবসহ একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে বালু নেওয়া ও উত্তোলনের সত্যতা পান। পরে সেখান থেকে দুইটি ট্রাক জব্দ ও ছয় শ্রমিককে আটক করলেও ওইদিন রাতেই মুচিলেখা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ নিয়েও তখন ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। চররামমোহনপুর এলাকায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে যারা বালু নিয়ে যাচ্ছেন তাদের দেখভাল করেন হামিদুর রহমান ঢালি নামে একজন। তিনি জানান, ময়মনসিংহের সাফা নামের একজনের চাকরি করেন তিনি। এর বেশী কিছু আর বলতে চাননি। এছাড়াও এখানকার বালু নিয়ে যাওয়ার পাশপাশি পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে আরেকটি চক্র। উপস্থিত স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ঈশারায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। সেখান থেকেই ক্রেতারা বালু নিয়ে যাচ্ছে ট্রাক্টর ভর্তি করে।

তবে এব্যাপারে উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক খান সেলিম বলেন, এলাকার মানুষের প্রয়োজনে কিছু খেটে খাওয়া শ্রমিক সামন্য কিছু বালু উত্তোলন করছেন এবং তারাই বিক্রি করছেন এটার সাথে আমি জড়িত নই। এ সময় তিনি আরো বলেন এই চোট্ট বিষয়টি না দেখে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কোটি কোটি ঘনফুট বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তা দেখেন।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ-৮ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাতীয় সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমাম বলেন, আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যা এই অঞ্চলের জন্য আর্শিবাদ স্বরুপ। আর এখানে কাজ হচ্ছে দ্রুত গতিতে। ৪ কোটি ৮৩ লক্ষ ঘনফুট বালু রাখা হয়েছে কাজের জন্য। আর তা প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। প্রভাবশালী মহল কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা খোঁজ করুন। আমি তো বিভিন্ন জায়গায় বলে যাচ্ছি লাভ হচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন