ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিলাসী এবং অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করার পর সতর্ক রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ভিত্তিক এ কাস্টম হাউস সিংহভাগ রাজস্ব আহরণ করে। দেশের মোট আমদানি-রফতানির প্রায় বেশিরভাগ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দর দিয়ে উল্লেখযোগ্য আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিলাসী এবং অপ্রয়োজনীঅয় পণ্য। আবার প্রতিনিয়তই মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চশুল্কের বিলাসী পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। চীন, থাইল্যান্ড, মিশর, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ টন ফলের পাশাপাশি ফার্নিচার, প্রসাধনী জাতীয় সামগ্রীও আসছে বন্দর দিয়ে। সরকার এসব বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি প্রবণতা কমাতে ও দেশীয় পণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি ১৩৫ পণ্যের ওপর উচ্চশুল্ক আরোপ করেছে।
এনবিআরের পক্ষ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বিদেশি ফল, ফুল, ফার্নিচার, কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান তিন শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন সব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বর্ধিত শুল্কহার ২৩ মে কার্যকর করা হয়েছে। মূলত ফল, ফুল, প্রসাধন সামগ্রী ও আসবাবপত্র এ চারটি খাতে বিভিন্ন পণ্যের বাড়তি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হলো। আপেলসহ সব ধরনের ফল আমদানিতে দিতে হবে উচ্চশুল্ক।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আপেল, কমলা, নাসপাতি, আঙ্গুর, মালটাসহ বিদেশি ফল আমদানি করা হয়। প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার ফল আমদানি হয়। এছাড়া এসব ফলের তৈরি জুস, জুস পাউডার, প্রক্রিয়াজাত করা ফলও আমদানি হয়। আমদানি হয় চিপস, চকলেটসহ আরও অনেক বিলাসী পণ্য। সাম্প্রতিককালে বিলাসী প্রসাধনী সামগ্রীর পাশাপাশি আসবাবপত্রও আমদানি হচ্ছে। অথচ এসব পণ্যের অভাব নেই দেশে। সব মওসুমেই দেশে ফল পাওয়া যাচ্ছে। অনেক বিদেশি ফলও দেশে চাষাবাদ হচ্ছে। বিশেষ করে তিন পার্বত্য জেলার বাগানগুলোতে হরেক রকমের বিদেশি ফল আবাদ হচ্ছে। দেশের ফার্নিচার শিল্পও এখন অনেক উচ্চতায় উঠেছে। এ অবস্থায় বিদেশি পণ্য আমদানির ফলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশিয় শিল্প মার খাচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, এনবিআরের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিলাসী এবং অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কাস্টম হাউস। এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানির প্রবণতা বাড়তে পারে। সেটা মাথায় রেখেই কাস্টম হাউসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা পণ্যের শুল্কায়ন এবং খালাসের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকবেন। সম্প্রতি কমশুল্কের পণ্যের ঘোষণা দিয়ে সিগারেট, প্রসাধনসামগ্রী এবং বিদেশি কাপড়ের মত উচ্চশুল্কের পণ্য আমদানির ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকটি বড় বড় চালান ধরাও পড়ে। জানা গেছে, সরকার যে ১৩৫টি পণ্যের ওপর উচ্চশুল্ক আরোপ করেছে এসব পণ্যেও যেসব চালান এখন পাইপলাইনে রয়েছে সেগুলো খালাসে তেমন কোন সমস্যা হবেনা। আগের শুল্কেই এসব পণ্য বন্দর থেকে খালাস করে নেয়া যাবে। তবে এখন থেকে এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চশুল্ক আরোপ করা হবে।
এদিকে বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করায় খুশি ব্যবসায়ী এবং দেশিয় শিল্প উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, দেশেই সব মওসুমে সব ধরনের ফল পাওয়া যাচ্ছে। দেশি ফলের সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠায় বিষমুক্ত সতেজ ফল বাজারজাত করা যাচ্ছে। এতে ভোক্তারা দেশি তাজা ফলের স্বাদ নিতে পারছেন। এতে করে দেশের বাগান মালিক, খামারি এবং ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। বিলাসী যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে তার প্রায় সবগুলোই দেশে পাওয়া যায়। এ দেশেই বিশ্বমানের ফার্নিচার এবং প্রসাধন সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য অবাধে আমদানির ফলে দেশিয় উদ্যোক্তারা মার খাচ্ছেন। বিলাসী পণ্যের ওপর উচ্চশুল্ক আরোপের ফলে দেশি পণ্যেও বাজার বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন