মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

আরেকটি ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে মুশফিক-লিটন

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০২২, ১২:৩১ এএম

যারা শেষ বিকেলে একটু আয়েশ করে টিভির সামনে বসেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং উপভোগ করতে, তাদের অনেকেই হয়তো বুঝে উঠতে পারছিলেন না ম্যাচটি সরাসরি না আগের ইনিংসের পুনঃপ্রচার! তাদের দোষ দিয়েও তো উপায় নেই! ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট, এবার সংখ্যাটা ‘এক’ কামিয়ে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে- ২৩ রানে ৪ উইকেটে! আউট হওয়া চার ব্যাটসম্যানের একজন কেবল যেতে পেরেছেন দুই অঙ্কে, দুইবার বেঁচে যাওয়া মাহমুদুল হাসান জয়। রানের খাতা খুলতেই পারেননি তাি মম ইকবাল ও মুমিনুল হক। ক্যারিয়ারে প্রথম জোড়া শূন্য নিয়ে ফেরেন তামিম। লঙ্কানদের বদান্যতায় ‘সুযোগ নষ্ট’ না করলে সেই একই ভাগ্য বরণ করতে হতো জয়কেও। তাতে যেন প্রথম ইনিংসের সেই ভয়ঙ্কর সূচনার শঙ্কা পেয়ে বসে টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত ততোটা না হলেও যা হয়েছে তাতে বড় অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ। সিরিজ হারের শঙ্কায় পড়েছে স্বাগতিকরা।
শ্রীলঙ্কার লিড আরও বড় হতে না দেওয়ার যে স্বস্তি নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ, তা উবে যায় দ্রুতই। ২৩ রানেই শুরুর চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ইনিংস হারের শঙ্কায় স্বাগতিকরা। গতকাল মিরপুর টেস্টে চতুর্থ দিন লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস ৫০৬ রানে থামিয়ে শেষ বেলায় ব্যাটিংয়ে নেমে রীতিমত কাঁপছে বাংলাদেশ। ১৩ ওভার ব্যাটিং করে দিন শেষ করেছে তারা ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান নিয়ে। সফরকারীদের চেয়ে এখনও পিছিয়ে আছে ১০৭ রানে। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দলকে কক্ষপথে ফেরান মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস। দ্বিতীয় ইনিংসেও এখন তাদের দিকেই তাকিয়ে দল। আরও একবার বিভীষিকার শুরুর পর তারাই লড়ছেন। ১৬ বলে ২ চারে ১৪ রান নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন আগের ইনিংসে ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকে মুশফিক। ওই ইনিংসে ১৪১ রান করা লিটন খেলছেন ১ রানে।
প্রথম ইনিংসের মতো এবার বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছেন লঙ্কান দুই পেসারই। কাসুন রাজিথা নিয়েছেন একটি, আসিথা ফার্নান্দোর শিকার দুটি। শেষ সেশনে দুই দল মিলিয়ে খেলা হয়েছে ২৩.১ বল। এই সময়ে বাংলাদেশের চারটির সঙ্গে পড়েছে শ্রীলঙ্কার পাঁচ উইকেট। মোট ৯ উইকেট পতনের সেশনে রান এসেছে ৮১।
এদিন ১৩ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। আর উইকেট হারাতে পারতো দ্বিতীয় ওভারেই। জয় ফিরতে পারতেন খালি হাতেই। আসিথা ফার্নান্ডোর বলে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গিয়েছিল তার। কিন্তু বুঝতেই পারেননি ফিল্ডাররা। তাতে বেঁচে যান এ ওপেনার। এরপর ব্যক্তিগত ৯ রানেও পেলেন জীবন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। আর ৬ রান করার পর তাকে ঠিকই থামিয়েছেন সেই ফার্নান্ডো। আনাড়ির মতো ব্যাট চালিয়ে সিøপে কুশল মেন্ডিসের ক্যাচে পরিণত হয়েছেন এ ওপেনার।
এর আগে ক্যারিয়ারের প্রথম ‘পেয়ার’ নিয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। ফার্নান্ডোর বলে রক্ষণাত্মক ঢঙ্গে খেলতে চেয়েছিলেন। তবে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় সিøপে। নাজমুল হোসেন শান্ত রানআউটে কাটা পড়েছেন নিজের দোষেই। নিজেই কল দিয়ে দুই দুই বার থামলেন রান নিতে গিয়ে। তৃতীয়বারে দিলেন দৌড়। ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। জয়াবিক্রমের সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙলে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ব্যর্থতার বৃত্তে আবদ্ধ মুমিনুল হক তো দলকে ঠেলে দেন আরও বিপদের মধ্যে। অফ স্টাম্পের বাইরে রাখা কাসুন রাজিথার ফুল লেংথ বলে ড্রাইভ করতে যান মুমিনুল। এমন পরিস্থিতিতে চাইলেই ছেড়ে দিতে পারতেন। তবে কিপারের গ্লাভসে যাওয়ার আগে গেল আলতো চুমু খেয়ে। যদিও লঙ্কানদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় সফরকারীরা।
২৩ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন রীতিমতো যেন কাঁপছিল। তাই সাকিব আল হাসানকে থামিয়ে ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমোশন নিয়ে মাঠে নামেন লিটন। প্রথম ইনিংসে মুশফিকের সঙ্গে তার অসাধারণ জুটিই ম্যাচে রেখেছিল বাংলাদেশকে। এদিনও এমন কিছুর আশায় টাইগাররা। এখন পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ১১ রানের জুটি গড়ে উইকেট আছেন এ দুই ব্যাটার। চট্টগ্রামে এ দুই ব্যাটার গড়েছিলেন ১৬৫ রানের জুটি। আর প্রথম ইনিংসে তাদের জুটিতে আসে ২৭২ রান।
এর আগে সকালে আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৮২ রান নিয়ে খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়ে যোগ করে ২২৪ রান। ফলে প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের লিড পেয়েছে তারা। দিনের প্রথম দুই সেশনে লঙ্কানদের তেমন কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারেননি টাইগাররা। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ও দিনেশ চান্দিমাল খেলেছেন সাবলীলভাবে। দুইজনই তুলে নেন সেঞ্চুরি।
দিনের শেষ সেশনে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। যার নেতৃত্ব দেন সাকিব ও ইবাদত হোসেন। দিনভর টাইগারদের ভোগানোর পর ইবাদতের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে কভারে তামিম ইকবালের হাতে ধরা পড়েন চান্দিমাল। ভাঙেন ১৯৯ রানের জুটি। তবে চান্দিমাল ঠিকই তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি। যার পাঁচটিই আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে। তবে চার বছর অপেক্ষার পর মিলে এ সেঞ্চুরি। ২১৯ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় খেলেন ১২৪ রানের ইনিংস। এরপর বাকি ব্যাটাররা আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। তবে অপর প্রান্তে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন ম্যাথিউস। টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়া এ ব্যাটার খেলেছেন ১৪৫ রানের ইনিংস। ৩৪২ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। অথচ এই সিরিজের আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ছয় টেস্টে খেলেও কোনো সেঞ্চুরি ছিল না তার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৩৬৫ ও ২য় ইনিংস : ১৩ ওভারে ৩৪/৪ (জয় ১৫, তামিম ০, শান্ত ২, মুমিনুল ০, মুশফিক ১৪*, লিটন ১*; রাজিথা ১/১২, আসিথা ২/১২, জয়াবিক্রমা ০/৯)। শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ১৬৫.১ ওভারে ৫০৬ (ম্যাথিউস ১৪৫*, চান্দিমাল ১২৪, ডিকভেলা ৯, জয়াবিক্রমা ০; খালেদ ০/৮৫, ইবাদত ৪/১৪৮, সাকিব ৫/৯৬, তাইজুল ০/১২৪)। চতুর্থ দিন শেষে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
আহমদ ২৭ মে, ২০২২, ৫:৫৮ এএম says : 0
আমাদের এখনো আশা বাংলাদেশই এ খেলায় জয়ী হবে।
Total Reply(0)
মো:শাহআলম ২৭ মে, ২০২২, ৮:৪৫ এএম says : 0
এই আউট হওয়া ৪ জনকে ব‍্যাাটিৎ এ না
Total Reply(0)
মো:শাহআলম ২৭ মে, ২০২২, ৮:৪৬ এএম says : 0
এই আউট হওয়া ৪ জনকে ব‍্যাাটিৎ এ নামার আগে মুশফিক ও লিটন থেকে পরামর্শ নেওয়া।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন