বৈশ্বিক অর্থনীতির ঝুঁকি বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম বৃদ্ধিকে দেশের ব্যাংক খাতের মূল চ্যালেঞ্জ বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডলার সহায়তা দেয়া হলেও সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যাংক খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে শনিবার (২৮ মে) আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের বৃত্তি প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের চেয়ারম্যান সেলিম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরমান আর চৌধুরী।
দেশে ক্রমশ বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ যে তথ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) গত মার্চ মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। ১৭ মাস পর মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠে। এই মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
অন্যদিকে দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রতিনিয়ত কমছে। সবশেষ ২৩ মে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৪০ পয়সা কমিয়ে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে মে মাসেই তৃতীয়বারের মতো কমানো হলো এই মান। তিন দফায় ডলারের দাম বাড়ল ১ টাকা ৪৫ পয়সা, তবে ব্যাংকগুলোকে ৮৮ টাকায় আমদানি বিল আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
৯ মে ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এরপর গত ১৬ মে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দিনে সবচেয়ে বড় অবমূল্যায়ন হয় টাকার। সেদিন টাকার মান ৮০ পয়সা কমিয়ে ডলারের বিপরীতে করা হয় ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। অবশ্য খোলাবাজারে ডলার কিনতে গেলে এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
এমন বাস্তবতায় গভর্নর বলেন, ‘করোনার সময়ে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যাংকাররা সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। কোভিডে ১৮৯ জন ব্যাংকার মারা গেছেন। এখন ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের দর বৃদ্ধি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
‘ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিলাসপণ্যের আমদানিতে ব্যাংকগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে সরকারি, বেসরকারি সব ব্যাংককে সম্মিলিতভাবে সঙ্কট মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছে উল্লেখ করে ফজলে কবির বলেন, করোনাকালে সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) আওতায় বরাদ্দকৃত টাকা স্বাস্থ্য খাতে বেশি ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে, তবে শিক্ষা খাতে ব্যাংকগুলো এগিয়ে এসেছে। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকটি এককালীন ৮ হাজার টাকা দিচ্ছে।
এটাকে ১০ হাজার করার প্রস্তাব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর। পাশাপাশি প্রতি মাসে সাড়ে ৩ হাজারের পরিবর্তে একটা রাউন্ড ফিগার (যেমন: চার হাজার, পাঁচ হাজার) করার তাগিদ দেন তিনি।
গভর্নর বলেন, দারিদ্র্য ও নানাবিধ প্রতিকূলতায় আমাদের অনেক মেধাবী অকালেই ঝরে যায়। আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে ঝরে না পড়ে, সে জন্য আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তি নিঃসন্দেহে একটি যথার্থ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
আল-আরাফাহ্র এমডি ও সিইও ফরমান আর চৌধুরী বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশ ও জাতির উন্নতিতে নিজেদের নিয়োজিত করবে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান সেলিম রহমান বলেন, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকা- পালন করে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) আওতায় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দিয়ে আসছে। স্নাতক পর্যায়ে চার বছরের জন্য এ বৃত্তি দেয়া হয়। ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়। আর নতুন ও পুরোনো মিলে প্রতি বছর আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রমের আওতায় ৮০০ শিক্ষার্থীকে প্রায় ৪ কোটি টাকার বৃত্তি প্রদান করা হয়।
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার এবং এককালীন ৮ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা পাবেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, পরিচালক আব্দুস সামাদ লাবু, মো. আব্দুস সালাম, বদিউর রহমান, মাহবুবুল আলম, নাজমুল আহসান খালেদ, আব্দুল মালেক মোল্লা, হাফেজ মো. এনায়েত উল্লা, আহামেদুল হক, মোহাম্মদ এমাদুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ হারুন, মো. লিয়াকত আলী চৌধুরী, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. হারুন-অর-রশিদ খান, মো. আমির উদ্দিন এবং এম কামাল উদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন