বাছাইয়ের বৈতরণী পার হওয়ার পর্ব শেষ। কিন্তু আসল কাজ তো বাকি। কাতার বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর আগে তাই প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি প্রস্তুতি ম্যাচকে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে আর্জেন্টিনা। ইতালির বিপক্ষে ‘ফিনালিসিমা’ ম্যাচ সামনে রেখে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাউতারো মার্তিনেস বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া, শক্তি-দুর্বলতা পরখ করা থেকে শুরু করে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেন টিওয়াইসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আগামী ১ জুন মুখোমুখি হবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইতালি ও কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ১৯৮৫ ও ১৯৯৩ সালের পর এবার ফের হতে যাচ্ছে দুই মহাদেশের চ্যাম্পিয়নের মধ্যে এই বিশেষ লড়াইটি। গত বছরের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ইতালি। কিন্তু তারপরও পথ হারিয়ে ফেলে দলটি। ছিটকে যায় বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে। মার্তিনেসের চোখে অবশ্য ইতালি ইতালিই; ইউরোপের সেরা দলগুলোর একটি। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ মানছেন ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার, ‘বিশ্বকাপে তারা যেতে পারছে না, এ বিষয়টি বাদ দিলে... প্রতিপক্ষ ইতালি বলেই এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ। আমরা তাদের বৈশিষ্ট্য, তাদের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে জানি... তারা উঁচু মানের প্রতিপক্ষ। বর্তমানে আমরা কী অবস্থায় আছি, সেটা দেখতে ম্যাচটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। ইতালির বিপক্ষে আমরা নিজেদের পরখ করব। মাহামারীর কঠিন সময়ে আমরা ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে পারিনি, এখন খেলব এবং এটা আমাদের জন্য, সমর্থকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে, আমরা যে কাজগুলো করছি, তাতে আমাদের আস্থা আছে। কয়েক বছর ধরে একই কোচের কোচিংয়ে খেলছি, নির্দিষ্ট একটা ধরন দাঁড় করানোর চেষ্টায় আছি এবং সেটা মাঠের অনুশীলনে প্রয়োগও করছি। তার ফলও মিলছে, আমরা খুব ভালো ফুটবল খেলছি এবং গোল করছি।’
কিছুদিন আগে ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপে খোঁচা দিয়েছিলেন লাতিন আমেরিকার বাছাই নিয়ে। ‘এ অঞ্চলের বাছাই ইউরোপের মতো গোছালো নয়, লাতিনের চেয়ে ইউরোপের বাছাই ভালো’- করেছিলেন এমন বাঁকা মন্তব্যও। তবে পিএসজি তারকার মত মানতে পারছেন না মার্তিনেস, ‘হ্যাঁ, এমবাপে যেটা বলেছে, আমি শুনেছি। কিন্তু আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দুর্দান্ত সব খেলোয়াড় আছে, উঁচু মানের খেলোয়াড় আছে। আমাদের মতো ব্রাজিলেরও অধিকাংশ খেলোয়াড় ইউরোপে খেলে। আমার মনে হয়, এমবাপের মন্তব্য অন্যায্য।’ কাতারের আসরে গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ সউদী আরব, মেক্সিকো ও পোল্যান্ড। অনেকের দৃষ্টিতে, দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা গ্রুপ পর্বে মসৃণ পথ পেয়েছে। মার্তিনেস তা মনে করেন না মোটেও, ‘বিশ্বকাপে তারা খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ হবে। আমার জন্য এটা প্রথম বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। সর্বোত্তম উপায়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, যতক্ষণ আমরা একসঙ্গে আছি, ততক্ষণ প্রতিটি মিনিট কাজে লাগাতে হবে, যেন নিজেদের সর্বোচ্চটুকু বের করে আনতে পারি এবং কাতার বিশ্বকাপে আমাদের ভালো অবস্থায় যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’
কাতার বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর এখনও ঢের দেরি। শুরু হবে আগামী ২১ নভেম্বর। কিন্তু প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক ফুটবলের সর্বোচ্চ আঙিনায় খেলায় অপেক্ষায় মার্তিনেস এখনই স্নায়ুর চাপ অনুভব করতে শুরু করেছেন, ‘হ্যাঁ, কিছুটা উদ্বিগ্ন। বিশ্বকাপে খেলা আমার শৈশবের স্বপ্ন। এটা নিয়ে নিয়মিত আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। তারা সবাই ফুটবলপ্রেমী। এখনই যদি ভাবতে থাকি, কী হতে পারে, তাহলে উদ্বিগ্নতা আসবেই। আশা করি, ভালো ভাবমূর্তি নিয়ে আমরা যেতে পারব। সবসময় সবারই এই স্বপ্নগুলো থাকে। প্রথমত, স্বপ্ন থাকে পেশাদার ফুটবলার হওয়ার, এরপর সেগুলো বাড়তে থাকে। এখন আমি স্বপ্ন পূরণ থেকে কয়েক মাস দূরে, আশা করি এটা পূর্ণ হবে এবং আমি আমার সতীর্থদের সাহায্য করতে পারব।’
১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের পর আর এই স্বাদ পায়নি আর্জেন্টিনা। সবশেষ ২০১৪ সালে ফাইনালে উঠলেও জার্মানির কাছে হেরে হয় রানার্সআপ। কোপা আমেরিকাতেও দুঃসময় পিছু ছাড়ছিল না, তবে গত বছর হতাশার সে বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসে আর্জেন্টিনা। মার্তিনেসের চাওয়া এই পথ, কৌশল ধরে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাওয়া, ‘আমরা বল পায়ে মূল চরিত্র হতে চাই, রক্ষণে ও আক্রমণে আধিপত্য করতে চাই। এরপরও ম্যাচে এমন সময় আসে, যখন ভুগতে হয়; তখন আমরা সবাই একসঙ্গে লড়ব। কোচ আমাদের কাছে চান, বল হারালে তা দ্রুত যেন ফিরে পাই, প্রথম ধাপের চাপ মুক্ত হওয়া গেলে আবারও মাঠের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন