বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

স্রোতে ভাসা

বিন্দুগল্প

জোবায়ের রাজু | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২২, ১২:০৫ এএম

শেষ বিকেলে সাদেক এসেছে তার বন্ধু অর্ণবদের বাড়িতে। অন্যান্যদিনের মত আড্ডার ছলে নয়, সে এসেছে একমাত্র বোন তামান্নার বিয়ের দাওয়াত নিয়ে। সাদেক বিয়ের কার্ডটি রাবেয়ার হাতে তুলে দিয়ে বলল, আপা, বিয়েতে পুরো পরিবার নিয়ে কিন্তু আসতে হবে। খুব খুশি হবো। রাবেয়া হাত বাড়িয়ে কার্ডটি নিলো। মিষ্টি হেসে বলল, তামান্নার হবু বর কি করে সাদেক জবাব দেয়, জার্মান প্রবাসি। ওদের নিজস্ব বিজনেস। চলে যাচ্ছি আপা। এই যে দেখেন আরো বিয়ের কার্ড। অতিথিদের বাড়ি গিয়ে গিয়ে দিয়ে আসতে হবে। যাবার বেলায় বন্ধু অর্ণবকে বলল, দোস্ত, গায়ে হলুদে তোকে নাচতে হবে কিন্তু। রেডি থাকিস। অর্ণব ম্লান হাসলো।
রাবেয়া তামান্নার বিয়ের কার্ডটি পড়লো। বেশ ভালো ঘরে বিয়ে হচ্ছে তামান্নার এই ঘটনা জেনে অর্ণবের মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। বিয়ের কার্ডটিও সে ছুঁয়ে দেখলো না। চুপচাপ বসে আছে সোফায়। রাবেয়া বলল গায়ে হলুদে তো নাচতে হবে তোকে সাদেক বলে গেল যে। অর্ণব ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। কিন্তু সে হাসিতে প্রাণ ছিল না। বেশ মলিন দেখাচ্ছিল অর্ণবের মুখটি। রাবেয়া হেসে বলল, বিয়ের কার্ডটি পড়ে দেখ না একবার। সাদেক এত আগ্রহ নিয়ে দিয়ে গেছে। অর্ণব নিরস কণ্ঠে বলল, এখন রেখে দে আপা। পরে পড়বো।’ রাবেয়া পাল্টা প্রশ্ন করে, পরে সত্যি সত্যি পড়বি তো চেহারাতে বিরক্তিকর ভাব এনে অর্ণব বলল, এতো কথা বলিস কেন আপা! ভাল্লাগে না! রাবেয়া বলল, ভালো কেন লাগে না আমি জানি সব। অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকায় অর্ণব। তারপর রাবেয়া বিয়ের কার্ডটিতে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, সেদিন তোর ড্রয়ার খুলে কিছু চিঠি পেলাম, যেগুলো তুই তামান্নাকে লিখেছিলি। কিন্তু দ্বিধার কারণে কখনো মেয়েটাকে দিতে পারিসনি। সবকথা চিঠিতে কত সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছিস। তামান্নাকে আমারও পছন্দ। তোর সঙ্গে মানাতো বেশ। কিন্তু ওরা ধনী মানুষ। আমাদের মত মধ্যবিত্তের ঘরে তারা কখনো তামান্নাকে দিবেন না।
অর্ণবের চোখ ভিজে এলো। উঠে চলে যায় এক দৌড়ে। তারপর নিজের ঘরে এসে ড্রয়ার খুলে তামান্নাকে লেখা চিঠিগুলো বের করে। অনেক রাত জেগে মনের মাধুরি মিশিয়ে তামান্নাকে লিখেছে চিঠিগুলো, কিন্তু সাহসের অভাবে কখনো সেগুলোর একটিও দিতে পারেনি। পরম যত্নে তুলে রেখেছে ড্রয়ারের গোপনে। বন্ধু সাদেকের বোন তামান্নাকে কখন যে মনের ছোট্ট মন্দিরের রাণী করে ফেলেছে, বুঝতেই পারেনি অর্ণব।
সেই তামান্নারবিয়ে ঠিক হয়েছে অন্যত্র। অর্ণব চিঠিগুলো কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেললো। সিলিং ফ্যানের বাতাসে চিঠির ছেঁড়া কাগজের টুকরোগুলো উড়তে লাগলো সারাঘরে। অর্ণব বুঝে গেল সব চাওয়া কখনো কখনো পাওয়া হয় না, না পাওয়ার গোপন এক তৃষ্ণা নিয়ে সারাটি জীবন শুধুই স্রোতে ভাসতে হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন