শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

সাকিবের কাঁধেই টেস্ট ব্যাটন

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০২২, ১২:০৪ এএম

মুমিনুল হক আচমকা টেস্ট অধিনায়কত্ত ছাড়ার পর থেকে বাতাসে তার নামটিই ভাসছিলো জোরেশোরে। কোনো রোমাঞ্চ বা ঝুঁকির পথে পা না বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত অনুমিত পথই বেছে নিল বিসিবি। বাংলাদেশ টেস্ট দলের নেতৃত্বে ফেরানো হলো সাকিব আল হাসানকে। এই নিয়ে তৃতীয় দফায় জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব পেলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথমবার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই সময়ের ২২ বছর বয়সী সাকিব। দ্বিতীয় দফার নেতৃত্বও শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজে, ২০১৮ সালে। এবার ৩৫ বছর বয়সে ক্যারিবিয়ান সফর দিয়েই শুরু হচ্ছে তার নেতৃত্বের নতুন অধ্যায়।

ব্যাটিংয়ে মন দিতে মুমিনুল হক টেস্ট নেতৃত্ব ছাড়তে চাওয়ার পর তাকে সেই দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে বিসিবি। গতকাল বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন অধিনায়ক হিসেবে চূড়ান্ত হয় সাকিবের নাম। মুমিনুল অধিনায়ক থাকার সময় কোনো সহ-অধিনায়ক না থাকলেও এবার একজনকে সহ-অধিনায়ক করেছে বিসিবি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কিপার-ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস পেয়েছেন সেই দায়িত্ব।
সাকিবকে টেস্ট অধিনায়ক ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্নটিই হলো দায়িত্বের মেয়াদ নিয়ে। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের উত্তর, ‘পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত।’ অর্থাৎ, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের মতোই দায়িত্বের সুনির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই। বিসিবি সভাপতির নিজেরও জানা নেই, কত দিনের জন্য সাকিবের দায়িত্ব, ‘দিন হিসেবে আমরা সাধারণতৃ আমরা বলছি না কত দিনের জন্য (সাকিবদের দায়িত্ব)। কতদিন থাকবে (সাকিব), এটা বলা মুশকিল। সুনির্দিষ্ট মেয়াদ ওয়ানডেতে নাই, টি-টোয়েন্টিতে নাই, টেস্টেও নাই। আমরা তাকে করেছি, যতক্ষণ না... আমরা যেমন মুমিনুলকে কোনো টাইমফ্রেম দেইনি। ও টেস্ট ক্যাপ্টেন, এখন বলেছে থাকতে চায় না, সেজন্য সেখানে আরেকজনকে দিয়েছি। কেউ যদি সামনে না হতে চায় বা এরকম কোনো পরিস্থিতি হয় যে তাকে রাখা যাবে না, তখনৃ কিন্তু এরকম পরিস্থিতি আমরা আগেই অনুমান করব কেন?’
গত কয়েকদিনে বিসিবি পরিচালকদের কথায় অনেকটাই নিশ্চিত ছিল, সাকিবই পাচ্ছেন দায়িত্ব। তার ক্রিকেট বোধ ও নেতৃত্বগুণ নিয়ে কোনো প্রশ্নও কখনও ছিল না। সংশয় ছিল কেবল টেস্টে তাকে নিয়মিত পাওয়া নিয়ে। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০২০ সালে ফেরার পর সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগ পর্যন্ত দেড় বছরে স্রেফ তিনটি টেস্টে তাকে পেয়েছে দল। চোট-আঘাতের সঙ্গে পারিবারিক কারণ, ছুটি-বিশ্রাম মিলিয়ে বিভিন্ন সিরিজে তাকে পায়নি দল।
তবে বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ আগের দিন বলেছিলেন, সাকিব সবসময়ই টেস্ট খেলতে চান এবং টেস্ট ক্রিকেট খেলতেই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন। খালেদ মাহমুদের বক্তব্যের পর সাকিবের নেতৃত্বে ফেরাটা কেবল ছিল আনুষ্ঠানিকতা।
জাতীয় দলের নেতৃত্বে তার পথচলা শুরু হয় ২০০৯ সালের জুলাইয়ে। সেবার সহ-অধিনায়ক হয়ে তিনি গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তবে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনেই চোট পেয়ে ছিটকে যান। ওই টেস্টের বাকি সময় নেতৃত্ব দেন সাকিব। পরের টেস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতৃত্বে অভিষেকও হয়ে যায়।
প্রথম দফার নেতৃত্বের সময়টায় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা হিসেবে। দলও সাফল্য পায় কিছু, বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে। তবে ২০১১ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের ব্যর্থতা আর মাঠের ভেতরে-বাইরে নানা বিতর্কে সমালোচনার মধ্যে পড়েন সাকিব। অবশেষে ওই বছরের অগাস্টে জিম্বাবুয়ে সফরে দলের ব্যর্থতার পর নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাকে। ৭ বছর পর আবার টেস্ট নেতৃত্বে ফেরেন তিনি ২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে। এবার তার দায়িত্ব শেষ হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে, জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে নিষিদ্ধ হওয়ায়।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় দিশেহারা বিসিবি তখন অনেকটা বাধ্য হয়েই নেতৃত্ব চাপিয়ে দেয় মুমিনুল হকের কাঁধে। মুমিনুল নিজেও খুব প্রস্তুত ছিলেন না। পরে সাকিব নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেও অধিনায়ক রয়ে যান মুমিনুলই। কিন্তু গত কিছুদিনে ব্যাটিংয়ে বাজে ফর্মের কারণে তুমুল সমালোচনার মধ্যে ছিলেন মুমিনুল। নেতৃত্বের ভার তার ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলছে বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন বোর্ড সভাপতি থেকে শুরু করে বিসিবির পরিচালকরা। শেষ পর্যন্ত সেই মুমিনুলের কাছ থেকেই আবার দায়িত্ব পেলেন সাকিব, আরও একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগেই। সাকিবের নতুন দফার দায়িত্বে প্রথম টেস্ট আগামী ১৬ জুন থেকে, অ্যান্টিগায়।
সাকিবকে নিয়ে একটা বড় সংশয়ের জায়গা ছিল টেস্টে তাকে নিয়মিত পাওয়া নিয়ে। গত কয়েক বছরে বেশি কিছু টেস্টেই তাকে পাওয়া যায়নি নানা কারণে। গত মাসে স্বয়ং বিসিবি প্রধানই বলেন, সাকিব কোনটা খেলবেন বা খেলবেন না, তারা নিজেরাও তা নিশ্চিত নন। তবে এবার নিশ্চয়তা পেয়েই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন বিসিবি সভাপতি, ‘আমার সঙ্গে যা কথা হয়েছে, অবশ্যই (খেলবে)। আমার আগে অন্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শুধু আমি নই, অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওর সঙ্গে কথা বলে যেটা জেনেছি... এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর আমাদের জিম্বাবুয়ে সিরিজ আছে, সেই সিরিজটায় ও নিশ্চিত নয়। তবে এরপর যত সংস্করণে যত খেলা আছে, সব খেলবে ও।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর আগামী জুলাই মাসের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ে সফরে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। বিসিবি সভাপতি যা বললেন, তাতে সেই সিরিজে সাকিবকে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলো এখনই। অবশ্য জিম্বাবুয়ে সফরের কোনো ম্যাচ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বা ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ নয়। গুরুত্ব তাই কিছুটা কম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন