শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইনকিলাব বর্ষ শুরু সংখ্যা

দ্বাদশ ওআইসি সম্মেলনে মাওলানা এম এ মান্নান

মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

১৯৮১ সালের ৩০ মে শনিবার। স্থান জর্দানের রাজধানী আম্মানে অবস্থিত বিখ্যাত হোটেল শেরাটন। সেখানে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) বাগদাদগামী তার বিরাট প্রতিনিধি দলসহ অবস্থান করছিলেন। তারা সবাই আমন্ত্রিত ছিলেন ইরাক সরকারের ধর্ম ও ওয়াকফ এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। আগের দিন অর্থাৎ ২৯ মে শুক্রবার হযরত মাওলানা তার প্রতিনিধি দলসহ ঢাকা হতে কুয়েত এবং সেখান হতে দিন শেষে আম্মানে পৌঁছেন। উদ্দেশ্য, ১ জুন থেকে বাগদাদে অনুষ্ঠেয় ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বাদশ সম্মেলনে যােগদান করা। ইরাক সরকারের আমন্ত্রণও ছিল এই ঐতিহাসিক ওআইসি সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য। হযরত মাওলানার নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দলের মধ্যে তার ছোট ছাহেবজাদা সালাহউদ্দীন (শাহীন)সহ অনেক খ্যাতনামা উলমায়ে কেরাম, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ প্রভৃতি নানা পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ছিলেন, তারা হচ্ছেন ছারছীনার বিখ্যাত পীর হযরত মাওলানা আবু জাফর মােহাম্মদ সালেহ (রহ.), একই মাদরাসার শিক্ষক উপমহাদেশের প্রখ্যাত মোহাদ্দেস হযরত মাওলানা নিয়াজ মোহাম্মদ মাখদুম খোতানী (রহ.), মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আসাফুদ্দৌলা রেজা, বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার উবায়দুল হক, বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) প্রতিনিধি গোলাম রসুল মল্লিক প্রমুখ। এতদ্ব্যতীত ঢাকাস্থ ইরাকী দূতাবাসের পক্ষ থেকে ছিলেন প্রতিনিধি দলের সাহায্যকারী হিসেবে দূতাবাসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরী। তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে আম্মানের শেরাটন হোটেলে অবস্থানের ব্যবস্থা করে ঐ রাতেই আম্মানস্থ ইরাকী দূতাবাসে চলে যান। প্রতিনিধি দলের রাত অতিবাহিত হয় এ হোটেলে।

প্রায় চল্লিশ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলটি দ্বাদশ ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন ২৯ মে শুক্রবার সকালে এবং আম্মানে একরাত একদিন অবস্থানের পর আম্মানে হতে বাগদাদ যাত্রা করে শনিবার সন্ধ্যা বেলায়। বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের নিয়ে আসা হয় বাগদাদ নগরীতে। প্রতিনিধি দলকে বাগদাদ নগরীর তিনটি সুপ্রসিদ্ধ হোটেলে উঠানো হয়। দারুস সালাম, মনসুর মিলিয়া ও বাগদাদ টাওয়ারে। শেষোক্ত হোটেলে দ্বাদশ ইসলামী সম্মেলন সংস্থার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে আগত পর্যক্ষেক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হযরত মাওলানা এম. এ. মান্নান, ছারছীনার পীর সাহেব, হযরত খোতানী হুজুর, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাওলানা কাসেমী এবং আরো অনেকে এখানে ওঠেন। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত তিন শতাধিক পর্যবেক্ষক প্রতিনিধির অধিকাংশের বিরাট সমাবেশ ঘটে বাগদাদ টাওয়ারে। এখানে আসার পর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে মাওলানা এম. এ. মান্নানের জন্য একটি আলাদা কক্ষসহ টেলিফোনের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।

বিদেশি হোটেলে অবস্থান করেও হযরত মাওলানা অতিথি আপ্যায়নে তার নিজ বাড়ি ঘরের মতো রাজকীয় আচারআচরণ অক্ষুণ্ন রাখেন। প্রায় লক্ষ করা গিয়েছে, হোটেলের কোনো কক্ষ হতে কিংবা বাইরের কোনো গেস্ট তার সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি কাউকে আপ্যায়ন না করে বিদায় দিতেন না, তিনি হোটেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগে চা-নাশতার অর্ডার দিতেন। মাওলানা সাহেব তার এ স্বভাবসুলভ আচরণ ও আপ্যায়ন অভ্যাসের কঠোর অনুসারী ও একে আত্মমর্যাদা মনে করতেন। ৩১ মে রবিবার এইদিন প্রথমবারে মতো মাওলানা এম. এ. মান্নান প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিয়ে হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করতে গমন করেন। সেখানে আসর হতে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত আমরা অবস্থান করি। বাগদাদে বিভিন্ন কর্ম উপলক্ষে অবস্থানরত বহু বাংলাদেশি এ সময় মাজারে আসেন। সাধারণত আসরের সময় তাদের সমাগম হয়ে থাকে।

ইসলামিক পপুলার কনফারেন্স
১৯৮১ সালের ১ জুন থেকে ৬ দিনব্যাপী বাগদাদে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বাদশ সম্মেলন বাগদাদের ইতিহাসের এক স্মরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা। কেননা এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রবর্গ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান-সংস্থার তিন শতাধিক পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি। ইরাকের নজফে আশরাফের আল্লামা শায়খ আলী কাশেফুল গিতার নেতৃত্বে গঠিত ইরাকের নানাস্থানের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদের ২২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বানে তারা বাগদাদ ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই সময়ে একই স্থানে এই বিপুলসংখ্যক ইসলামী চিন্তাবিদের একত্রে সমাবেশ ছিল এক বিরল ঘটনা। ওআইসির সাধারণ রেকর্ডপত্র ও দলিলদস্তাবেজে এর পূর্ণ বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে কেবল এতটুকু বলে রাখতে চাই যে, ওআইসি’র এই দ্বাদশ সম্মেলন উপলক্ষে বাগদাদে উপস্থিত পর্যবেক্ষক, প্রতিনিধিবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল বাগদাদকেন্দ্রিক পপুলার ইসলামিক কনফারেন্স, যার প্রথম সম্মেলন বাগদাদেই অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালে। বাগদাদে কেন পপুলার ইসলামিক কনফারেন্স সংস্থা গঠন করা হয়েছিল? এ প্রশ্নের জবাব দীর্ঘ, যা বলা এখন নিষ্প্রয়োজন। তবে এর প্রতিষ্ঠালগ্নে যেমন মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.)-এর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল, তেমনি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে যখন এর প্রথম সম্মেলন বাগদাদে অনুষ্ঠিত হয়, তখন থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি এর কার্যকর কমিটি ও উপকমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে প্রায় প্রত্যেক সম্মেলন ও অধিবেশনে যোগদানের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। অর্থাৎ ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে তার কর্মকান্ড ছিল উল্লেখযোগ্য।

আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি মুসলিম বিশ্বের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে প্রস্তাবিত পপুলার ইসলামী কনফারেন্স বা সম্মেলনে প্রয়োজন ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে উপস্থিত উলামা প্রতিনিধিগণ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হযরত মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.)ও এই সমাবেশে আরবিতে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এভাবে গঠিত হয়ে যায় বাগদাদকেন্দ্রিক পপুলার ইসলামিক কনফারেন্স সংস্থা। অতঃপর গঠিত হয় কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটি। হযরত মাওলানাকে কার্যকর কমিটিসহ অধিকাংশ কমিটির সদস্য করা হয়। বাগদাদে অবস্থানকালে কার্যকর কমিটিসহ অন্যান্য কমিটির অধিবেশনগুলোতে তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। একটি অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্বও করেন। পপুলার কনফারেন্সের প্রতিষ্ঠাকালে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পবিত্রস্থান ও ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলী পরিদর্শন
ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৬ দিনব্যাপী দ্বাদশ সম্মেলনের সমাপ্তি ও বাগদাদকেন্দ্রিক ইসলামিক পপুলার কনফারেন্সের প্রতিষ্ঠা তথা প্রথম সম্মেলন উদ্বোধন ছিল বাগদাদে এ সময়কার যুগান্তকারী ঘটনা। এসব কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ইরান, ইরাক ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ বন্ধে ইসলামী বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত ব্যাপকভিত্তিক বাস্তব কর্মসূচী গ্রহণসহ ইসলামী বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলীর সমাধান এবং নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় উদ্ভাবন করে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সম্মেলন শেষে পর্যবেক্ষক ও প্রতিনিধিবর্গের জন্য ইরাকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পবিত্রস্থান ও ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলী পরিদর্শনে বাগদাদ কর্তৃপক্ষের প্রণীত কর্মসূচী অনুযায়ী হযরত মাওলানার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যেসব স্থান সফর করেন তার ইতিহাস-পরিচিতি তথা পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরা এখানে সম্ভব নয়।
গর্বিত ঐতিহ্যের অধিকারী মানব সভ্যতার লালনভূমি এবং পবিত্র স্মৃতিধন্য প্রাচীনতম ইরাক ভূখণ্ডের নানাস্থানে যুগে যুগে আবির্ভাব ঘটেছে অসংখ্য মহামানব, মহাপুরুষ, প্রথম মানব, মানবী যথাক্রমে হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) থেকে শুরু করে সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত বহুজনের জন্ম, জীবন ও পদচারণা এবং জানা-অজানা। অনেকেই চিরশায়িত রয়েছেন এ ভূগণ্ডের আনাচে কানাচে। কুফায় মসজিদে আম্বিয়া নামক যে মসজিদটি এখনও বিদ্যমান সেখানে বিভিন্ন যুগের নবী-রাসূলগণ ইবাদত করতেন বলে জানা যায়।

ইসলামযুগে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) কর্তৃক কুফা নগরী স্থাপিত হওয়ার পর হিজরী সপ্তদশ হিজরী সাল থেকে সাহাবায়ে কেরাম সেখানে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন। কুফাসহ ইরাকের বিভিন্ন স্থানে সাহাবীদের সংখ্যা ৬শ’ কিংবা সহস্রাধিক বলে কোনো কোনো বর্ণনা হতে জানা যায়। বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ৭০ জন সাহাবী কুফায় বসবাস করতে থাকেন। বায়াতে রেদওয়ানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিনশ’ সাহাবীও কুফায় অবস্থান করেন। তাদের মধ্যে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লে যোগ্য। চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.)-এর শাহাদাৎ পর্যন্ত তার খেলাফত আমলে আরো অনেক সাহাবী কুফা, কারবালা, নজফ, বসরা, বাগদাদসহ ইরাকের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেছিলেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। মোট কথা, নবী-রাসূলগণের নিদর্শনাবলী, সাহাবায়ে কেরাম, ইমাম, ফকীহ, মোহাদ্দেস, আউলিয়া, মাশায়েখ, খলিফা, কবি-সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, মাদরাসা, মসজিদ, মাজার, মিনার, গম্বুজ, রণাঙ্গন, স্থাপত্যকীর্তি প্রভৃতি প্রাচীন ও ধর্মীয় নিদর্শনাবলীর এক বিশাল সমাহার এই ভূখণ্ডে।

বাগদাদে অবস্থানকালে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অনেকেই হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর নেতৃত্বে ইরাকের বর্ণিত নিদর্শনাবলী, পবিত্র স্থান, মাজার ও ঐতিহ্যকীর্তির গুরুত্বপূর্ণ সামান্যই পরিদর্শনের সুযোগ লাভ করেছেন। এভাবে সমাপ্ত হয় প্রতিনিধি দলের স্মরণীয় বাগদাদ সফর।

বাগদাদ হতে বিদায়কালীন ঘটনাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মাওলানা মান্নানের বলিষ্ঠ ভূমিকায় অনেকেরই পবিত্র খানা-ই কাবায় গিয়ে উমরাহ পালন ও রওজা মোবারক জিয়ারতের সৌভাগ্য হয়েছে। বাগদাদ সফরকারী প্রতিনিধি দলের টিকিট ছিল ঢাকা-বাগদাদ ও বাগদাদ-ঢাকার। নির্ধারিত সময়ে সকলের দেশে প্রত্যাবর্তন করার কথা বাগদাদ হতে ঢাকায়। এরই মধ্যে কেউ কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলেন জেদ্দা হতে ঢাকা টিকিট পরিবর্তন করতে পারলে তারা উমরাহ পালন করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে প্রতিনিধি দলের নেতা মাওলানা মান্নানকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি বাগদাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। প্রথমে অনুকূল সাড়া পাওয়া গেল না। কেননা সকলের ভিসা হচ্ছে বাগদাদের। সউদী দূতাবাসের আলাদাভাবে ভিসা নিতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে তা সম্ভব নয়। আবার এমনও শোনা গেল যে, বেশি লোকের টিকিট পরিবর্তন করা যাবে না; অল্প কয়েকজনের করা যেতে পারে। মাওলানা সাহেব বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে দেনদরবার করতে থাকেন। অবশেষে কর্তৃপক্ষ সকলের টিকিট বাগদাদ হতে জেদ্দা-ঢাকা করতে সম্মত হলে মাওলানা সাহেব বাগদাদস্থ সউদী দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে সউদী ভিসার ব্যবস্থা করেন। মাওলানার একান্ত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ফলে একটি জটিল সমস্যার সমাধান হয়ে যায় এবং সকলে স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে, মাওলানা মান্নান কেবল দেশে নয়, বিদেশেও তার অসামান্য প্রভাব রয়েছে। কেননা, বাগদাদ সফরকারী এই প্রতিনিধি দলের কেউই প্রথমে কল্পনাও করতে পারেনি উমরাহ পালনের সৌভাগ্য অর্জনের কথা। অথচ মাওলানা সাহেব অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এমন সুরাহা বের করে দিলেন যে, সকলেই অবাক-বিস্মিত হওয়ার সাথে সাথে পরম আনন্দিতও হলেন।

আবার আম্মান হয়ে
যেহেতু আমাদের বাগদাদে আসতে হয়েছিল, প্রত্যাবর্তনও করতে হবে আম্মান হয়ে। তাছাড়া উমরাহ করার জন্য জেদ্দা আসতে হবে বিধায় আম্মান রুটও ঠিক থাকল। বাগদাদকে বিদায় জানিয়ে আম্মানের উদ্দেশে যাত্রা করি ৭ জুন। রাতে আম্মানের একটি হোটেলে রাতযাপনের পরে সকালে অবশিষ্ট সময়ে মাওলানা সাহেব জর্ডানে তার এক পরিচিত মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করলে কর্মকর্তারা ব্যবস্থা করে দেন। মন্ত্রীর সাথে কিছুক্ষণ মাওলানার আলাপ আলোচনাকালে মন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন, আমরা আম্মানের কী কী দর্শনীয় স্থান দেখতে চাই? সময়ের হিসাব করে দেখা গেল এই অতি স্বল্প সময়ে একাধিক স্থান পরিদর্শন করা সম্ভব নয়। মাওলানা সাহেব বললেন, তুলনামূলকভাবে আসহাবে কাহাফের গুহা কিছুটা নিকটবর্তী, আমরা সেখানেই যেতে চাই। মন্ত্রী সাহেব সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ও গাইডের ব্যবস্থা করে দিলেন। এখানে বলে রাখা দরকার যে, আম্মান সফর করা আমাদের সফরসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ঘটনাচক্রে আম্মান হয়েই আমাদের আসা যাওয়া করতে হয়েছে। আম্মানে আসহাবে কাহাফের গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে তখন থেকে ১৮ বছর আগে। নতুন আবিষ্কৃত এই গুহার যে ঐতিহাসিক বিতর্কিত বিবরণ বিভিন্ন তাফসিরী ভাষ্য ও ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে বিদ্যমান মাওলানা সাহেবের তা ভালই জানা ছিল। এই গুহা সম্পর্কে জর্ডানী মন্ত্রীর বর্ণনা শুনে তিনি তা দেখার জন্য অধিক আগ্রহী হওয়ায় মন্ত্রী সাহেব দ্রুত সেই ব্যবস্থা করে দিলেন। পরবর্তী যাত্রা ছিল আমাদের সউদী আরবে হারামাইন শরীফের উদ্দেশে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন