সরকার প্রতিবছরই ছয়টি জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে। এর মধ্যে ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া রোগীকে চিকিৎসা ব্যয় দেওয়া হয়। সম্প্রতি নীলফামারীর ছয় উপজেলায় জেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ২০২ জন রোগীকে ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু এই সহায়তার চেক তাদের হাতে আসার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন ৩২ রোগী।
দুরারোগ্য এসব রোগে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা আর্থিক সহায়তার চেক পেতে ফের সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করেছে। আবেদনপ্রক্রিয়া গ্রহণ করছে সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারীর ছয় উপজেলায় চলতি অর্থবছরে দুরারোগ্য রোগীদের আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে ২০২ জনের নামে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তার চেক অনুমোদন করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এই চেকগুলো গত মে মাসের ১৫ থেকে ২৪ তারিখে জেলার ছয় উপজেলায় রোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কিন্তু ওই চেক আসার আগেই সদর উপজেলার ৭ জন, সৈয়দপুরে ৮ জন, ডিমলায় ৮ জন, কিশোরগঞ্জে ২ জন, ডোমারে ২ জন ও জলঢাকা উপজেলায় ৫ জন মৃত্যুবরণ করেন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পশ্চিম বেলপুকুর এলাকার প্রয়াত ছকি মামুদের স্ত্রী আবেজা খাতুন দীর্ঘদিন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এক মাস আগে মৃত্যুবরণ করেন। তার মেয়েজামাই টগর আলী বলেন, আমার শাশুড়ির চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হইছে। টাকা না থাকায় শেষ সময় সুচিকিৎসা না পেয়ে তিনি মারা যান। উপজেলায় আবেদন করেছিলাম। সেই অনুদানের চেক আসতে আসতে উনি মারা গেলেন। ওনার চিকিৎসার জন্য আমাদের জমি-বাড়ি বিক্রি করাসহ অনেক ধার-দেনা হয়েছে, এখনো শোধ করতে পারি নাই। সরকার থেকে যে টাকাটা বরাদ্দ হয়েছে, সেটা পেলে পরিবারের অনেকটা উপকার হবে।
জেলা সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ভাটিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম দীর্ঘদিন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চার মাস আগে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমাদের সংসারে অন্ধকার নেমে আসে। সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। স্বামীর চিকিৎসায় সব শেষ করে দিছি। সমাজসেবা থেকে টাকা পাওয়ার আগেই উনি মারা গেলেন, আবার নতুন করে আবেদন করেছি, টাকাটা পেলে আমাদের খুব উপকার হবে।
সৈয়দপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, নীলফামারী সদরে ৭ জন ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৮ জন রোগী সরকারি অনুদান পাওয়ার আগেই মারা যায়। যেহেতু চেকগুলো রোগীদের নামে ইস্যু হয়ে থাকে, তাই তাদের পরিবারের কেউ এই চেকের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবে না। সে জন্য আমরা নতুন করে মৃত্যুবরণকারী রোগীর নমিনিদের নামে চেক ইস্যুর জন্য আবেদন গ্রহণ করছি। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নমিনির নামে চেক প্রদান করা হবে।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এমদাদুল হক প্রামাণিক বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে মারা যাওয়া রোগীর স্বজনদের নমিনি করে নতুন করে চেক ইস্যু করে প্রদান করা হবে। আমরা প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করব, যাতে এসব রোগীর সার্বিক বিষয়ে জানতে পারি। অধিক অসুস্থ রোগীদের তথ্য পেলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে পারব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন