এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী তুর্কিমেনিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও হারল বাংলাদেশ। শনিবার বিকালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ বুকিত জলিল স্টেডিয়ামে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে তুর্কিমেনিস্তান ২-১ গোলে হারায় লাল-সবুজদের। প্রথমার্ধেই দু’দল একটি করে গোল করলেও ম্যাচের শেষ দিকে এসে তুর্কিমেনিস্তান জয়সূচক গোলটি পায়।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তুর্কমেনিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে ৫৪ ধাপ এগিয়ে। দলীয় শক্তিতেও তাদের চেয়ে বেশ পিছিয়ে লাল-সবুজরা। তবে শনিবার ম্যাচের শুরু থেকেই র্যাঙ্কিং ও দলীয় শক্তিকে আমলে না নিয়ে তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে সমানতালেই লড়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা। মাঠে নিজেদের সামর্থ্যরে সবটুকু ঢেলে দিয়ে অসাধারণ ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষ শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন। ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করে তুর্কমেনিস্তানকে ঘাবড়ে দেয় স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাববেরার দল। ক্যাবরেরা বাংলাদেশ দলের দায়িত্বগ্রহণের পর চার ম্যাচে এই প্রথম গোলের দেখা পায় লাল-সবুজরা।
ম্যাচ শুরুর আগে সাউন্ড বক্সে বেজে ওঠে ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালবাসি’। জাতীয় সঙ্গীত বাজার সঙ্গে সঙ্গে মাঠের ফুটবলারদের মতো গ্যালারিতেও লাল-সবুজের জার্সি গাঁয়ে জড়ানো কিছু দর্শক বুকে হাত রেখে ঠোট মেলাতে থাকেন। এ দৃশ্যে কুয়ালালামপুরের বুকিত জলির স্টেডিয়াম হয়ে উঠে যেন একখ- বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে চেপে ধরে তুর্কমেনিস্তান। তার সুফলও তারা পায় ৭ মিনিটেই। এসময় কর্ণার থেকে বক্সের মধ্যে তৈরী হওয়া জটলায় বল পেয়ে প্লেসিং শটে গাল করেন আলতিমিরাত আনাদুর্দি (১-০)। অবশ্য টানা তৃতীয় কর্ণার থেকে সফল হয় তুর্কমেনিস্তান। এর আগে দ্বিতীয় মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল মধ্য এশিয়ার দলটি। তবে শুরুতেই গোল হজম কওে কিন্তু ভড়কে যায়নি বাংলাদেশ। বরং দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের উপর। বল দখলে এগিয়ে থেকেই তুর্কমেনিস্তানের সীমানায় আক্রমণ চালাতে থাকেন জামাল ভূঁইয়ারারা। মিনিট পাঁচেক পর সেই গোল শোধ দেয় বাংলাদেশ। ম্যাচের ১২ মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের লম্বা থ্রোতে বক্সের মধ্যে হেড করেন রাকিব হোসেন। রাকিবের হেড গোলবাওে প্রবেশের মুখে তুর্কমেনিস্তানের গোলরক্ষক পাঞ্চ করে ফেরালে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মাথায় পড়ে বল। সেই বল দারুণ হেডে গোলে পরিণত করেনে ইব্রাহিম (১-১)। তুর্কমেনিস্তানের ডিফেন্ডার তাকে বাঁধা দিলেও ইব্রাহিম শেষ পর্যন্ত গোল করতে সফল হয়ে ম্যাচে সমতা আনেন। প্রথমার্ধে আরও দুইবার গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সফল হতে পারেনি। বল পজিশনে এগিয়ে থেকে জামালরা তুর্কমেনিস্তানের সীমানায় একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে। প্রথমার্ধেও শেষ দিকে সাজ্জাদ হোসেন সহজ সুযোগ মিস না করলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে পারতো বাংলাদেশ দল।
প্রথমার্ধের শুরুতে যেমন তুর্কমেনিস্তানকে দেখা গিয়েছিল আগ্রাসি ফুটবল খেলতে। দ্বিতীয়ার্ধেও তেমনটি দেখা গেছে। দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুতে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রন থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিল তারা। বল পজিশনেও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকে মধ্য এশিয়ার দেশটি। তবে শত চেষ্টা করেও দ্বিতীয় গোলের দেখা তারা পায়নি ম্যাচের ৭৬ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু পরের মিনিটে আর রক্ষা হয়নি। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে রক্ষণভাগের দূর্বলতায় দ্বিতীয় গোল হজম করে বাংলাদেশ। এসময় আলতিমিরাতের ক্রস থেকে আমানভ আরসালানের প্লেসিং শটে দ্বিতীয়বার এগিয়ে যায় তুর্কমেনিস্তান (২-১)। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে হঠাৎই তুমুল বৃষ্টি শুরু হলে মাঠ পিচ্ছিল হয়ে যায়। যে কারণে দুদলের খেলোয়াড়রা স্বাভাবিক নৈপূণ্য দেখাতে ব্যর্থ হন। তবে দ্বিতীয় গোল হজমের পর প্রানপোণ চেষ্টা করেও আর গোল শোধ দিতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ভালো খেলেও ২-১ গোলের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় জামাল-জিকোদের। আগামী মঙ্গলবার ‘ই’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক মালয়েমিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে লাল-সবুজরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন