সব বিদেশি কোম্পানির শাখা অফিস, লিয়াজো অফিস কিংবা প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এখন থেকে বাধ্যতামূলক ভ্যাট নিবন্ধন করতে হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিলে ভ্যাট আইনের সংশোধন করে এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শাখা অফিসের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে স্যামসাং ও জেনারেল ইলেকট্রিকের মতো বৈশ্বিক বহু প্রতিষ্ঠান। টার্নওভার মূল কোম্পানির অ্যাকাউন্টসে যোগ হওয়ায় এতোদিন ভ্যাট নিবন্ধন করা বা বাংলাদেশে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (বিআইএন) নিতে হয়নি তাদের। তবে এখন থেকে বিদেশি সব কোম্পানির শাখা অফিসকেও ভ্যাট নিবন্ধন করতে হবে। এতে বিদেশি প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ও লিয়াজো অফিসের কেনাকাটার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট আহরণ সহজ হবে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে দেশে কার্যক্রম পরিচালনাধীন বিপুল সংখ্যক বৈশ্বিক এনজিও প্রকল্প, কোম্পানির লিয়াজো ও শাখা অফিসের কার্যক্রমকে নজরদারির মধ্যে আসবে বলে মনে করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসক নীতি) কাজী ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিদ্যমান ভ্যাট আইনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শাখা বা লিয়াজো অফিসের নিবন্ধনের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান মূল প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মার্কেটিং, প্রচার-প্রচারণা ও বাজার সম্প্রসারণে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে নিবন্ধন না থাকায় তাদের ভ্যাট আদায়ের সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছিল না। এনবিআর’র নতুন সংশোধিত ভ্যাট আইনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মধ্যে কোনো ধরনের পণ্য বা সেবার সঙ্গে যুক্ত হলেই সব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে। আইনে বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রযোজ্য হয় এমন পণ্য বা সেবা সরবরাহ-আমদানি করলে, কোনো টেন্ডারে অংশ নিলে, আমদানি-রফতানি ব্যবসায় যুক্ত হলে, বিদেশি কোনো কোম্পানি শাখা বা লিয়াজো অফিস নিলে বা ভ্যাট এজেন্টস হিসাবে কাজ করলে তাদের নিবন্ধন নিতে হবে। এর আগে ২০২০ সালে বিদেশি কোম্পানি হিসাবে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, অ্যামাজনসহ টেক জায়ান্টদের বাংলাদেশে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে এনবিআর। ওই কোম্পানিগুলো এখন দেশে নিয়মিত ভ্যাট রিটার্নও দিচ্ছে।
বাংলাদেশে ভ্যাট আইন নিয়ে পরামর্শ দেয় এমন একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালে বিদেশি কোম্পানিকে ভ্যাটের আওতায় আনতে এনবিআর যে আইন করেছে তা মূলত ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নতুন সংশোধনীতে সব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যারা শাখা বা লিয়াজো অফিসের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের করের আওতায় আনা হলো। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বড় অংশের বাংলাদেশে টার্নওভার নেই। মূল অফিস থেকেই সব বিক্রি নিয়ন্ত্রিত হয়। দেশে কেনা-কাটার ওপর যে ভ্যাট প্রযোজ্য হয় সেটাও তারা সাধারণ ক্রেতা হিসাবে পরিশোধ করছেন। তবে এখন থেকে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হলো বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন