আগের ম্যাচে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ল এবার। ইমাম উল হক ও বাবর আজমের ফিফটির পর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং উপহার দিলেন মোহাম্মদ নওয়াজ। অনায়াস জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতে ওয়ানডে সিরিজ জিতল পাকিস্তান। গতপরশু রাতে মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের জয় ১২০ রানে। ২৭৫ রানের পুঁজি গড়ে ক্যারিবিয়ানদের তারা গুটিয়ে দেন স্রেফ ১৫৫ রানে। পাকিস্তানের হয়ে ৯৩ বলে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন অধিনায়ক বাবর। ৭২ বলে ৭২ রান আসে ইমামের ব্যাট থেকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল ক্ষতিটা অবশ্য করেন বাঁহাতি স্পিনার নওয়াজ। ১০ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন এ বাঁহাতি স্পিনার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দেন একাই। দেশের মাটিতে নওয়াজের চেয়ে কম রান দিয়ে ৪ বা এর বেশি উইকেট এর আগে নিয়েছেন পাকিস্তানের একজন স্পিনার- আব্দুল কাদির। আর নওয়াজের আগে পাকিস্তান বোলার হিসেবে ১০ ওভার বোলিং করেও ২০-এর চেয়ে কম রান দিয়েছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ, ২০১১ সালে। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল স্বাগতিকরা।
তাতেও আছে মাইলফলকের সুখ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই নিয়ে টানা ১০টি ওয়ানডে সিরিজ জিতল পাকিস্তান। এশিয়ান পরাশক্তিদের বিপক্ষে এই সংস্করণে ক্যারিবিয়ানরা সবশেষ সিরিজ জিতেছিল ১৯৯১ সালে, যখন ইমরান খান ছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। সেই সাথে এই জয়ে রান রেটে ক্যারিবিয়ানদের পেছনে ফেলে ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে চার নম্বরে উঠে এসেছে পাকিস্তান (৮০)। তাদের চেয়ে এগিয়ে আছে কেবল বাংলাদেশ (১২০), আফগানিস্তান (১০০) ও ইংল্যান্ড (৯৫)। আগামীকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ।
এই ম্যাচেও বেশকিছু রেকর্ড সঙ্গী হয়েছে বাবরের। ইমামকে নিয়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় যথারীতি আবারও বড় জুটি গড়ে তোলেন পাক দলপতি। ইমাম ৫২ বলে পূরণ করেন ফিফটি। এই সংস্করণে টানা ছয় ইনিংসে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১২০ রানের জুটি ভাঙে দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে ইমামের রান আউটে। ৬টি চারে গড়া তার ৭২ রানের ইনিংসটি। ওয়ানডেতে টানা চার ও সব মিলিয়ে আটটি শতরানের জুটি হলো ইমাম ও বাবরের। এই সংস্করণে পাকিস্তানের হয়ে তাদের চেয়ে বেশি শতরানের জুটি আছে কেবল মোহাম্মদ ইউসুফ ও ইউনিস খানের, ৯টি।
৬৭ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে বাবর ছুটছিলেন ওয়ানডেতে কুমার সাঙ্গাকারার টানা চার সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ডের দিকে। কিন্তু ২৩ রানের জন্য পারেননি তিনি। ৫ চার ও একটি ছক্কায় সাজানো ৭৭ রানের ইনিংস থামে স্পিনার আকিল হোসেনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি টানা ৯ ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়ার রেকর্ড অবশ্য ঠিকই গড়েন তিনি। পেছনে ফেলেন স্বদেশী জাভেদ মিয়াঁদাদকে, ৮টি।
গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করাচি টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে বাবর খেলেন ম্যাচ বাঁচানো ১৯৬ রানের অসাধারণ ইনিংস। লাহোরে পরের টেস্টে দুই ইনিংসে করেন যথাক্রমে ৬৭ ও ৫৫ রান। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতে তার রান ছিল ৫৭, ১১৪ ও অপরাজিত ১০৫। একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে করেন ৬৬ রান। এরপর তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম প্রথম দুই ওয়ানডেতে করলেন ১০৩ ও ৭৭।
১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত টানা ৮ ওয়ানডে ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এতদিন রেকর্ডটি ছিল মিয়াঁদাদের। অবশ্য এই সংস্করণে তিনি পঞ্চাশ স্পর্শ করেন পরের ইনিংসেও। ওয়ানডেতে টানা সবচেয়ে বেশি ৯ ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়ার বিশ্বরেকর্ড এখনও তারই। ওয়ানডেতে টানা ৮টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের পর তিনি খেলেছিলেন টেস্ট। সেখানে আর পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি। সব সংস্করণ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি টানা পঞ্চাশ ছোঁয়ার রেকর্ড তাই বাবরের। টানা সাত ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়ার কীর্তি আছে স্যার এভারটন উইকস, রাহুল দ্রাবিড়, কুমার সাঙ্গাকারা, মিসবাহ উল হক, ক্রিস রজার্স, কেন উইলিয়ামসন, লোকেশ রাহুল ও স্টিভেন স্মিথের।
ওয়ানডেতে এই নিয়ে টানা ৬ ইনিংসে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন বাবর। এই সংস্করণে মিয়াঁদাদের বিশ্বরেকর্ড ছোঁয়ার সুযোগ তাই এখনও তার সামনে আছেই। বাবর ছাড়াও টানা ৬টি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস আছে গর্ডন গ্রিনিজ, অ্যান্ড্রু জোন্স, মার্ক ওয়াহ, রস টেইলর, কেন উইলিয়ামসন, মোহাম্মদ ইউসুফ, ক্রিস গেইল, পল স্টার্লিং, শেই হোপ ও ইমামের।
এর আগে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিতে আরেক ইতিহাস গড়েন বাবর। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা তিন সেঞ্চুরির কীর্তি তিনি গড়েন দুইবার। টানা সবচেয়ে বেশি চার সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ডটা সাঙ্গাকারার। ২০১৫ বিশ্বকাপে এটি করে দেখান শ্রীলঙ্কান গ্রেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন