ফেরির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার অবসান হওয়াই পদ্মা সেতুর প্রথম সুবিধা। আগামী ২৫ জুনের পর ঝড় হল কী বৃষ্টি? কুয়াশা আছে বা নেই, নদীর ঢেউ বাড়লো না কমলে? ডুবো চর জাগলো কিনা তা নিয়ে কোন চিন্তা মাথায় থাকবে না দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের। চিন্তা থাকবেনা ফেরির জন্য অপেক্ষার সময়ের। ঘাটে থাকবেনা ভিআইপি বিড়ম্বনা।
ফেরিতে উঠা বা নামার প্রতিযোগীতা। ঘাট ভাঙা বা নদীর ঘাট তৈরীর ঝামেলা। থাকবেনা নদী পাড় হবার যন্ত্রণা। ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাবার কষ্ট। লঞ্চ-স্পিডবোটে নদী পার হবার বাড়তি ঝুঁকি। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, যাত্রীবাহী বাস বা মালবাহী ট্রাক লাইনে দাড়িয়ে থাকবেনা। খরস্রোতা পদ্মা নদী হবে না ভয়ের কারণ। পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাবার সময় নদীর মুগ্ধতায় বিমহিত হবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। যাতায়াতে ৬-৭ ঘণ্টার পথ শেষ হবে এক ঘণ্টায়। খরস্রোতা পদ্মা নদী পাড়ি দিতে উৎসব-আয়োজনে যেখানে ভোগান্তি বাড়ে কয়েকগুণ। সেখানে আগামী ঈদুল আজহায় থাকবে না শত বছরের এই চিত্র। সবই হবে যেন রুপকথার গল্প। যা ভবিষ্যত প্রজন্ম শুধু শুনেই যাবে প্রমত্মা পদ্মার গল্প।
নদী পার হতে ফেরির অপেক্ষায় সড়কেই মৃত্যু হয়েছে রোগীর, সময় শেষ হয়ে গেছে পরীক্ষার্থীর, প্রসূতির সন্তান প্রসব হয়েছে সড়কেই- এমন অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী পদ্মার ওই পাড়ের জেলাগুলোর বাসিন্দারা। পদ্মার দুই পাড়ের ফেরি ঘাট যেখানে শত বছরের ভোগান্তির সাক্ষী, সেখানে হবে বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র। মানুষ সেখানে ঘুরতে যাবে একটু প্রশান্তির আশায়।
এ নিয়ে উচ্ছ¡সিত ওই অঞ্চলের জনগণ। তারা বলছেন, এই সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ২২ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হচ্ছে তাদের। ২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকে যাতায়াতের এই সংকট সমাধানের স্বপ্ন বুনেছেন তারা। সেই স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে ২৫ জুন। এ উপলক্ষে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুরসহ রাজবাড়ি, বরিশাল অঞ্চলে। সড়কপথসহ সব স্থাপনা সাজছে নতুন সাজে।
জনগণ বলছেন, আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। দীর্ঘদিনের এই অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। সব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছি আমরা এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে জানান দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মাসেতু চালু হচ্ছে, এই খবরে আমরা খুশি। আমাদের এই খুশির সংবাদের মূল কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে ও পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে বর্ণাঢ্য করতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
শরিয়তপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, পদ্মা নদী পারাপারের জন্য আগে তিন-চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো আমাদের। এখন সেটা কয়েক মিনিটেই পার হয়ে যেতে পারবো। নদীর পার হবার মানসিক যন্ত্রণা আর থাকবে না। তিনি বলেন, সেতুর ফলে এই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। আশপাশে শিল্প কারখানা হবে। কর্মসংস্থান হবে আমাদের জন্য।
মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা শুভ খন্দকার বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের মূল লাভ হলো- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। যাতায়াতে আগে অনেক ভোগান্তির শিকার হতাম আমরা। এখন আর সেটা হবে না। আগে আমাদের কাছে ঢাকা অনেক দূরে ছিল। এখন মাত্র ৬০ কিলোমিটার। কোনো বাধাবিঘ্ন ছাড়াই চলে যেতে পারবো। এটাই আনন্দের আমাদের কাছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন