শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

ইনিংস পরাজয় এড়ানোর স্বস্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের চিত্র অনেকটা পরিষ্কার স্কোরবোর্ডে তাকালেই। ব্যাটসম্যানদের বাজে পারফরম্যান্সে ভুগেছে দল, বোলাররা চেষ্টা করেছেন দলকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখতে। বোলারদের পারফরম্যান্সে খুবই খুশি রাসেল ডমিঙ্গো, বিরক্ত তিনি ব্যাটসম্যানদের আলগা শটের মহড়ায়। বাংলাদেশ কোচের মতে, বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাস এখন তলানিতে।
টেস্টের প্রথম দিনে প্রথম সেশনে ৪৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর সেখান থেকে আর উদ্ধার হয়নি দল। প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া দল কী আর ম্যাচে টিকতে পারে! বোলাররা তবু চেষ্টা করেছেন। ক্রমশ সহজ হয়ে আসা উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস আটকে রেখেছেন তারা ২৬৫ রানে। ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়েছে দ্বিতীয় ইনিংসেও। টপ ও মিডল অর্ডার ব্যর্থ এবারও, ১০৯ রানের মধ্যে পড়েছে ৬ উইকেট। এরপর সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসান সোহানের ১২৩ রানের জুটিতে কিছুটা মুখ রক্ষা হয়। তবে শেষ ৪ উইকেট পড়ে যায় আবার ১৩ রানেই।
জয়ের জন্য শেষ ইনিংসে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৮৪ রান। এই পুঁজি নিয়েও বোলাররা লড়াই কম করেনি। সৈয়দ খালেদ আহমেদের দারুণ বোলিংয়ে ৯ রানে ৩ উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। পরে অবশ্য তারা দিন শেষ করে ৩ উইকেটে ৪৯ রানে। জয়ের জন্য গতকাল চতুর্থ দিনে তাদের প্রয়োজন ছিল ¯্রফে আর ৩৫ রান। আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিতে মাত্র ২৬ মিনিট লেগেছে স্বাগতিকদের। ৭ ওভারেই প্রয়োজনীয় রান তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৮৫ রানের লক্ষ্যে নেমে খালেদ আহমেদের তোপে ৯ রানে ৩ উইকেট হারালেও পরে আর কোন বিপর্যয় আসেনি। ২২ ওভারে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় তারা। ছক্কায় খেলা শেষ করে দেওয়া ওপেনার জন ক্যাম্পবেল দলকে জেতাতে ৬৭ বলে করেন ৫৮ রান। ৫৩ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন জার্মেইন ব্ল্যাক উড। দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল ক্যারবিয়রা। আগামী ২৪ জুন সেন্ট লুসিয়ায় হবে অপর টেস্ট।
বাংলাদেশ ম্যাচটিতে ম‚লত লাগাম হারিয়ে ফেলে প্রথম ইনিংসেই। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিক পেসারদের তোপে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং। একমাত্র অধিনায়ক সাকিব করতে পারেন ফিফটি। তবু বাংলাদেশ আটকে যায় ১০৩ রানে। জবাবে ধৈর্য্য নিয়ে খেলে ২৬৫ রানের পুঁজি পায় ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দল। বাংলাদেশের পেসাররা পুরো ম্যাচেই দারুণ চাপ বজায় রাখেন, অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকে পাওয়া যায় সেরা ছন্দে। তবে ফিল্ডারদের কাছ থেকে তেমন সমর্থন মেলেনি।
১৬২ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও আরেক দফা ব্যাটিং বিপর্যয়। আবারও টপ অর্ডার তাকে আসেনি তেমন কোন অবদান। রান খরা প্রলম্বিত করেন মুমিনুল হক আর নাজমুল হোসেন শান্ত। ছন্দে থাকা লিটন দাস এই ম্যাচে ছিল নিষ্প্রভ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে এগিয়ে আসতে দেখা যায় সাকিবকে। নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে ১২৩ রানের জুটি ইনিংস হার এড়ান তিনি। দুজনেই করেন ফিফটি। ইনিংস হার এড়ালেও তাদের পক্ষে দলকে জেতার মতন অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। প্রথম টেস্ট জিতে দুই ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে যেতে কোন সমস্যাই হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
তবে আগের দিনই বাংলাদেশ দলের পার্ফরম্যান্স নিয়ে যে কথা বলেছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, ম্যাচ শেষে সেটিই হয়ে থাকল শেষ কথা। তৃতীয় দিনের বিশ্লেষণে বাংলাদেশের কোচের কণ্ঠে ব্যাটিং নিয়ে যে হতাশা। প্রথম ইনিংসে ৬ জন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন শ‚ন্য রানে। তামিম ইকবালের মতো অভিজ্ঞ ওপেনার দুই ইনিংসেই থিতু হওয়ার পর আউট হয়েছেন আলগা শটে। বড় ভরসা লিটন দাস দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছেন বাজে শট, একই ইনিংসে দেড়শ বল খেলার পর উইকেট বিলিয়ে এসেছেন তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
টানা ব্যর্থতার চক্রে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকের ব্যাট কথা বলেনি এই টেস্টেও। সব মিলিয়ে ব্যাটিংয়ে দল আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগেছ বলে মনে করেন রাসেল ডমিঙ্গো, ‘(ব্যাটিং) মোটেও ভালো নয়, দুই ইনিংসেই। খুব বেশি আলগা আউট, ব্যাটিংয়ে বাজে সিদ্ধান্ত খুব বেশি। প্রথম ইনিংসে মোটে ১০৩ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৫ ৃএর বেশি করতেই হবে। এটাই ম‚ল কথা, আলগা আউট অনেক বেশিই হয়ে গেছে। ওদের সবার আত্মবিশ্বাস এখন তলানিতে। আমাদের কয়েকজন বড় ক্রিকেটার, মুমিনুল, শান্ত... ওদের কয়েকজনের আত্মবিশ্বাস এখন তলানিতে। ক্রিকেটে আত্মবিশ্বাস অনেক বড় ব্যাপার। এই মুহ‚র্তে ব্যাটিং লাইন আপের আত্মবিশ্বাস নেই খুব একটা।’
বোলিং দুই ইনিংসেই ছিল যথেষ্ট গোছানো। প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ নেন ৪ উইকেট, ইবাদত হোসেন ও খালেদ নেন দুটি করে। খালেদ দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনটি উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। বোলারদের প্রচেষ্টায় কোনো ঘাটতি দেখেন না কোচ, ‘বোলাররা দুই ইনিংসেই অসাধারণ বল করেছে। প্রথম ইনিংসে যেভাবে বোলিং করেছে, এতটা ভালো কমই দেখেছি। এই পিচে ২৬০ রানে ওদেরকে আটকে রাখা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। বোলারদের পারফরম্যান্সে তাই আমি গর্বিত।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১০৩ ও দ্বিতীয় ইনিংস : ২৪৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৬৫ ও দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৮৪, আগের দিন ৪৯/৩) ২২ ওভারে ৮৮/৩ (ক্যাম্পবেল ৫৮*, বø্যাকউড ২৬*, মুস্তাফিজ ০/৭, খালেদ ৩/২৭, মিরাজ ০/১০, ইবাদত ০/৩০, সাকিব ০/৩, শান্ত ০/১০)। ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : কেমার রোচ। সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে উইন্ডিজ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন