বারবার যখন ভুল হতে থাকে, তখন তো প্রশ্ন উঠে যায় ভিত কিংবা প্রক্রিয়া নিয়েই। বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তিতে সাকিব আল হাসান তুলে ধরলেন সেই বাস্তবতা। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের মতে, টেকনিক্যালি আঁটসাঁট ব্যাটসম্যান খুব একটা নেই বাংলাদেশ দলে।
গত কয়েক টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের, বিশেষ করে টপ অর্ডারের টানা ব্যর্থতায় প্রসঙ্গটা উঠে আসছে। নিবেদন ও মানসিকতার ঘাটতির ব্যাপারটি তো আলোচিত বরাবরই, কিন্তু টেকনিক আর সামর্থ্যেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পিছিয়ে আছে কিনা কিংবা কতটা পিছিয়ে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে সাধারণত টেকনিকের বড় সমস্যা থাকে না। অনেক সময় কারও ছোটখাটো ঘাটতি থাকে বা খেলতে খেলতে টেকনিকে নড়চড় হয়ে যায়।
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭ উইকেটে হেরে যাওয়া অ্যান্টিগা টেস্টে দুই ইনিংসেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর অধিনায়ক সাকিব বললেন, সতীর্থ সব ব্যাটসম্যানের টেকনিকে অনেক ফাঁক দেখেন তিনি, ‘টেকনিক্যালি অনেক সমস্যা আছে। আমার মনে হয় না টেকনিক্যালি সাউন্ড ক্রিকেটার আমাদের খুব বেশি আছে। আমাদের দলে যারা আছে, সবারই অনেক টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। তবে একটা পথ বের করতে হবে যে কীভাবে রান বের করা যায়, কীভাবে ক্রিজে থাকা যায়। সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
অ্যান্টিগায় এই টেস্টে প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৪৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও দেখা যায়নি ঘুরে দাঁড়ানোর তাড়না। এবার ৬ উইকেট পড়ে ১০৯ রানে। গত কিছুদিন ধরেই এমন ব্যাটিং ধস বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সঙ্গী। গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে চমকপ্রদ জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে ক্রাইস্টচার্চে ২৭ রানে ৫ উইকেট হারায় দল। পরে ১২৬ রানে শেষ হয় প্রথম ইনিংস। এরপর মার্চ-এপ্রিলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পড়ে ১০১ রানে, দ্বিতীয় ইনিংসে দলের ইনিংস শেষ হয় স্রেফ ৫৩ রানে। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পড়ে ১২২ রানে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ রানে পড়ে ৬ উইকেট।
ব্যাটসম্যানদের এই টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধানে কোচিং স্টাফের সঙ্গে অধিনায়কের আলোচনা হয়েছে কিনা, এই প্রশ্নে সাকিবের সাফ উত্তর, দায়িত্বটি তার নয়, ‘এটা তো আমার আসলে আলোচনার বিষয় নয়। কোচেরই আলোচনা করার বিষয়। আমি যদি কোচিংও করাই, অধিনায়কত্বও করি, তাহলে তো সমস্যা। আমার যতটুকু কাজ, আমি ততটুকুতেই থাকলে ভালো হয়। আমার দায়িত্ব যতটুকু আছে, ততটুকু পালন করার চেষ্টা করব। বাকি যাদের যাদের যে অংশ আছে, তারা সবাই নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে সবার জন্য কাজটা সহজ হয়।’
মুশফিকুর রহিম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দলে থাকলে অ্যান্টিগা টেস্টে নিশ্চিতভাবেই খেলা হতো না নুরুল হাসান সোহানের। একাদশে তার জায়গা হতো না হয়তো ইয়াসির আলি চৌধুরি ফিট থাকলেও। অনেক সমীকরণে পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগিয়ে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াকু এক ইনিংস খেললেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। সোহানের ইনিংসের প্রায় সবটুকু উইকেটে থেকে দেখেছেন সাকিব। অধিনায়কের ভালো লেগেছে চাপের মধ্যে তার লড়িয়ে মানসিকতা। তাইতো মুগ্ধ সাকিব এখন সোহানকেই উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করালেন অন্যদের সামনে, ‘(সোহানের) ওই ইনিংস থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। নুরুল সত্যিই খুব ভালো খেলেছে। সে নিজেও চাপে ছিল। বলব না যে সে চাপে ছিল না। চাপে ছিল সে। তার পরও সে যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেছে, এতেও ফুটে ওঠে তার মানসিকতা যে তার সামর্থ্য কতটা। যে চ্যালেঞ্জ নুরুল নিয়েছে, অন্য কয়েকজন ব্যাটসম্যান একইভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে পরের ম্যাচে যেন ভালো খেলতে পারে।’
পরের টেস্টের আগে ব্যাটসম্যানরা কতটা শোধরাতে পারবেন নিজেদের, প্রশ্ন এখন সেটাই। সেন্ট লুসিয়ায় দ্বিতীয় টেস্ট শুরু আগামী শুক্রবার থেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন