প্রথম লেগের মতো ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় লেগেও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে মর্যাদার লড়াইয়ে জিতল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। গতকাল বিকালে কুমিল্লার ভাষা শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে দশজনের আবাহনী ৪-২ গোলে হারায় মোহামেডানকে। বিজয়ী দলের হয়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডরিয়েলটন গোমেজ দু’টি এবং কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস ও স্থানীয় ফিল্ডার ইমন মাহমুদ একটি করে গোল করেন। মোহামেডানের পক্ষে দুই গোল শোধ দেন মালির ফরোয়ার্ড অধিনায়ক সুলেমানে দিয়াবাতে ও স্থানীয় মিডফিল্ডার শাহরিয়ার ইমন। একই দিন রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত লিগের আরেক ম্যাচে বাংলাদেশ পুলিশ এফসি’র বিপক্ষে হেরেছে উত্তর বারিধারা ক্লাব।
নামের ভারে মোহামেডান-আবাহনী এখনও সমপর্যায়ের দল হলেও শক্তির বিচারে বর্তমানে অনেকটাই পিছিয়ে সাদাকালোরা। তারপরও দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বির লড়াই। স্বাভাবিকভাবেই দু’দলের সমর্থকদের মাঝে এ ম্যাচ নিয়ে সব সময়ই থাকে উত্তেজনা। কালও কুমিল্লায় এর ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি। মোহামেডানের হোম ভেন্যুতে আবাহনী দাপট দেখিয়েই জয় তুলে নিয়েছে। তবে সব কিছু ছিল ম্যাচের প্রথমার্ধেই। ৯০ মিনিটের ম্যাচের সব রস, উত্তেজনা ফুরিয়ে যায় প্রথম ৪৫ মিনিটেই। কারণ আবাহনী-মোহামেডানের মতো টান টান উত্তেজনার ম্যাচেও ফলাফল নিষ্পত্তি হয় প্রথমার্ধের ৬ গোলেই। মোহামেডানের বিপক্ষে এবারের মৌসুমে দুই লেগেই জিতল পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের আবাহনী। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটে অনুষ্ঠিত প্রথম লেগের ম্যাচে আবাহনী জিতেছিল ১-০ ব্যবধানে, আর দ্বিতীয় লেগে ৪-২ গোলে।
মর্যাদার লড়াইয়ে আবাহনীর বিপক্ষে নিজেদের হোম ভেন্যুতে কাল ম্যাচের প্রথম দশ মিনিট প্রায় কোনঠাসাই ছিল মোহামেডান। আবাহনী ফরোয়ার্ডদের একচেটিয়ে আক্রমণের মুখে অনেকটাই দিশেহারা দেখা যায় মোহামেডানের ডিফেন্ডারদের। বিশেষ করে আবাহনীর দুই বিদেশি কোস্টরিকান ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস এবং ব্রাজিলিয়ান ডরিয়েলটন গোমেজকে আটকানোর কোনো উপায়ই খুঁজে পাচ্ছিলেন না সুলেমানে দিয়াবাতেরা। ম্যাচ শুরুর ২ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে আবাহনী ম্যাচের চিত্রনাট্যটাই বদলে দেয়। ৮ মিনিটে কর্ণার থেকে সরাসরি গোল করেন আবাহনীর কলিন্দ্রেস (১-০)। দুই মিনিট পর দারুণ শটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ডরিয়েলটন (২-০)। ম্যাচের ১৮ মিনিটে মোহামেডান অধিনায়ক মালির ফরোয়ার্ড সুলেমানে দিয়াবাতে গোল করে দলকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন (১-২)। সাদাকালোরা যখন ম্যাচে সমতা আনার চেষ্টায় ব্যস্ত ঠিক তখনই ফের গোল পায় আবাহনী। ৪৩ মিনিটে বক্সের ভেতর কলিন্দ্রেসের ক্রসের বল মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেন গ্রিপে নিতে পারেননি। বলতার গ্রিপ থেকে ছিটকে গেলে ফিরতি বলে ইমন মাহমুদ শটে গোল করেন (৩-১)। প্রথমার্ধের যোগকরা সময়ে (৪৫+২ মিনিট) শাহরিয়ার ইমনের দুর্দান্ত গোলে আবার ম্যাচে ফেরার চেষ্টা মোহামেডানের (২-৩)। কিন্তু এর দুই মিনিট পরই (৪৫+৪ মিনিট) ডরিয়েলটনের গোলে ব্যবধান বাড়ায় আবাহনী (৪-২)। ম্যাচের ৮০ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে রেজাউল করিম রেজা মাঠ ছাড়লে দশজনের দলে পরিণত হয় আবাহনী। তাতে অবশ্য ক্ষতি হয়নি দলটির। সেই ফায়দা তুলে নিতে পারেনি মোহামেডান। ফলে শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলের হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে সাদাকালোরা। ১১ বছর পর মোহামেডানের হাল ধরলেও জয় দিয়ে শুরু করতে পারলেন না কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। এই জয়ে ১৫ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানেই থাকল আবাহনী। সমান ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠস্থানে মোহামেডান।
এদিকে রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পুলিশ কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে। তারা উত্তর বারিধারাকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে। পুলিশের হয়ে আফগানিস্তানের ফরোয়ার্ড আমিরউদ্দিন শরিফি দুটি ও ব্রাজিলিয়ান দানিলো অগস্তো একটি গোল করেন। বারিধারার হয়ে আইভরিকোস্টের ইউসুফ মরি বাম্বা ও উজবেকিস্তানের ইয়োগজেনি কচনেভ একটি করে গোল শোধ দেন। এই জয়ে ১৬ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানেই থাকল পুলিশ। সমান ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে উত্তর বারিধারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন