বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল মিলে তিন হাজার ৯২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। কিন্তু পাওনা পরিশোধ না করেই চলতি বছর সর্বোচ্চ লাভ দেখিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি! বিমান বলছে, গত দুই বছরে তারা বেবিচকের কোনো ধরনের চার্জ বকেয়া রাখেনি। পরিশোধ করেছে জেট ফুয়েলের (পদ্মা অয়েল) সব খরচ। তবে, এর আগের বকেয়া পরিশোধের পরিকল্পনা নেই তাদের।
অন্যদিকে বেবিচক বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কাছে তাদের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাওনা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৯২ কোটি টাকা আটকে রেখেছে বিমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল মিলে তিন হাজার ৯২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। কিন্তু পাওনা পরিশোধ না করেই চলতি বছর সর্বোচ্চ লাভ দেখিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি। বিপুল অঙ্কের এই দেনা পরিশোধের চিন্তা ছাড়াই টানা দ্বিতীয় বছরের মতো লাভ দেখিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা নিট লাভ দেখায়। ২০২১-২২ অর্থবছরের আট মাসে (ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রতিষ্ঠানটি লাভ দেখায় ৩২৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৩২৪ কোটি টাকা মুনাফা করে। গত ১২ বছরের হিসাব করলে এটাই বিমানের সর্বোচ্চ মুনাফা। তবে, বেবিচকের দেনার বিষয়ে তথ্য নেই তাদের কাছে।
বিমানের সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বেবিচকের দেনা বাদ রেখে বিমানের লাভ-ক্ষতি হিসাবের কোনো সুযোগ নেই। একটি এয়ারলাইন্সের খরচের ৫০ ভাগই যায় বেবিচকের চার্জ ও তেলের দামের পেছনে। এই দেনা বাদ দিয়ে লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে গেলে সেটা কিন্তু জাস্টিফায়েড (ন্যায়সঙ্গত) হবে না। বুঝতে হবে তারা লাভটা টুইস্ট করছে। পৃথিবীর সব দেশের এয়ারলাইন্সগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন পাবলিকলি (সর্বসমক্ষে) প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা করা হয় না। সেক্ষেত্রে তাদের লাভ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
২০০৮ সালে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকার পাহাড়সম দেনায় পড়ে বিমান। ওই সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে ১২১৬ কোটি টাকার সারচার্জ মওকুফ পায় প্রতিষ্ঠানটি। বাকি ৫৭৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে দায়মুক্তি পায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
২০২১-২২ অর্থবছরের আট মাসে রেকর্ড পরিমাণ লাভের বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, সময়োপযোগী প্রণোদনা পেয়েছিলাম। আমরা তা যথোপযুক্ত কাজে লাগাতে পেরেছি। বিমানে সব ধরনের মিতব্যয়িতা অবলম্বন করা হয়েছে। এছাড়া বিমানের কিছু পাওনা ছিল, সেগুলো আদায় করা হয়েছে। এছাড়া টিকিট কারসাজি বন্ধে আমরা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছি। সেখান থেকেও টাকা আয় হয়েছে।
বিমানের বকেয়ার বিষয়ে বেবিচক পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিমান যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান, আমরা তাদের কেবল বলেই যাচ্ছি। আইন ও বিধি অনুযায়ী আমরা তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছি। তবে, তারা (বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ) বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন