বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

পদ্মা-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত। মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর ও গাইবান্ধায় পানি বৃদ্ধিতে ভাঙন কবলে পড়েছে। আমাদের সংবাদদাতার তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনা নদী তীরবর্তী আলোকদিয়া, চরশিবালয়, ত্রিশুন্ডি, আজিমনগর, লেছড়াগঞ্জ, কাঞ্চণপুর এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীপন যাপন করছে। প্রতি দিনই ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। এদিকে নদী পাড়ের শতশত মানুষ নির্ঘুমে দিনাপাত করছে। অপর দিকে নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে।
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আমজান হোসেন জানান, মুন্সিকান্দির প্রায় ৪০০ শত পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। জোতকাশি, ইসলামপুর, বাশাইল, কুটিরহাট, রাহাতপুর, কাশিদয়ারামপুরসহ পুরো চরাঞ্চলে চলছে ভাঙনের তান্ডবলীলা। যে কোনো সময় বাঘুটিয়া বিকেএস হাই স্কুল, বাঘুটিয়া বাজার, ইসলামপুর মাদরাসা, মসজিদসহ পুরো এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। এখনও জিও ব্যাগ বস্তা ফেলে ও স্রোতের গতি পরিবর্তন করে ভাঙন কবলিত এলাকা রক্ষা করা সম্ভব। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট এলাকা রক্ষার দাবি জানান। অপর দিকে হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি, বৌদ্দকান্দি, মোহাম্মদপুর, গোপীনাথপুর ইউনিয়নের উজানপাড়া, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কালকির চর, হারুকান্দির ব্রামণকান্দাসহ চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। শতশত মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। দুদিন আগে আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা আশ্রায়ণ প্রকল্পের ১০টি ঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
আজিমনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন জানান, হাতিঘাটা এলাকায় পদ্মা ভাঙনে গত এক সপ্তাহে পূর্ব পাড়ার আশ্রয় প্রকল্পের ১০টি ঘরসহ পাঁচটি বাড়িও পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে চরাঞ্জল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। একদিকে ব্যাপক নদী ভাঙন অপরদিকে বন্যার আশংকায় নদী তীরের মানুষ চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, দেশের মধ্যাঞ্চলীয় শরীয়তপুরে বন্যার পানিতে চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মার নদীর পানি বিপৎসীমা ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। এর ফলে জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা মেঘনা নদী বিধৌত এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহেল বলেন, টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে। তবে এখনো বন্যা বলা যাবেনা।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী এবং গজারিয়া উপজেলায় বর্ষার শুরুতে পদ্মা ও মেঘনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। টংগীবাড়ী উপজেলার সরিষাবণ, ছাতক, কান্দাপাড়া, পুুর্ব হাসাইল ও তার আশেপাশের এলাকার পদ্মা নদীর স্রোতে এবং বাতাসে ভাঙন শুরু হয়েছে। গজারিয়া উপজেলার নয়নাগর, গোয়ালগাঁও ও চর বলাকী কালিপুরা এবং ইসমানিচর এলাকায় মেঘনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ছাতক গ্রামের মো. শাহিন বলেন, এর আগে ৭ বার আমাদের বাড়ি নদীতে ভাঙছে। এবার আবার আমার এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। মানুষ ভাঙ্গনকবলিত স্থান হতে দ্রুত ঘরবাড়ি সড়িয়ে নিচ্ছেন। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বাতাস এবং প্রচন্ড স্রোতের তিব্রতায় এ ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাংগন এলাকায় ভাংগন রোধে জিও ব্যাগ ফেলছে।
আনোয়ার জাহিদ ফরিদপুর থেকে জানান, ফরিদপুরে ভাঙন ঝুঁকিতে ৩৫০টি পরিবার। পদ্মার পানি দ্রুত বৃদ্বি পাওয়ায় পদ্মার প্রধান শাখা নদী আড়িয়াল খাঁ, মধুমতির পানি বাড়ছেই। পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফরিদপুরে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। ফলে নদী রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
পদ্মা নদী বেষ্টিত ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী এলাকায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। লোহারটেক কোলের সংযোগ বাঁধেও দেখা দিয়েছে ভাঙন।
এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে অস্তিত্ব সংকটে পরার সম্ভাবনা রয়েছে সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়টি। সেই সঙ্গে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকার প্রায় ৩৫০ পরিবার। গতকাল বুধবার চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা গণমাধ্যমকে ভাঙনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভাঙন এলাকায় কিছু বস্তা পানির স্রোতে ভেসে গেছে। তবে, সেখানে পুনরায় বালুর বস্তা ফেলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার ওই স্থানে ভাঙন দেখা যায়। এতে চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামের নদীর বাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বালুভর্তি জিও ব্যাগের ডাম্পিংকৃত প্রায় ১০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদী ও লোহারটেক কোলের সংযোগ স্থলে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। এরপরই বালুভর্তি ডাম্পিংকৃত জিওব্যাগ নদীতে তলিয়ে যেতে থাকে। বাঁধের কাজ শুরু হওয়াতে তাদের আশা ছিল আর হয়তো ভাঙবে না। কিন্তু হঠাৎ ভাঙন দেখা দেওয়ার পর চিন্তায় পড়ে গেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে চর হরিরামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ভাঙনরোধে কাজ চলছে। সবুল্লা শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামে ২০০ মিটার স্থায়ী বাঁধের কাজটি পুরোপুরি সম্পন্ন করা যায়নি। এবছর পূর্ব সতর্কতামূলক প্রকল্প এলাকা ঢালু করে তার ওপর জিও ব্যাগের ডাম্পিং করা হয়েছে। ওই স্থানে ভাঙনের খবর পেয়েছি। পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি গণমাধ্যম কে জানান।
গাইবান্ধা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গাইবান্ধার সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সে.মি. উপর দিয়ে এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে ৪ সে.মি. কমে বিপদসীমার ৩৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের কষ্ট দিন দিন বেড়েই চলছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক পরিবার পানি থেকে রক্ষা পেতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত ৪ উপজেলার ১১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি ওঠায় পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন