সেন্ট লুসিয়ায় চলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬৪.২ ওভারে ২৩৪ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ইনিংস আরও অনেক বড় হতে পারত যদি বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের শিকার না হতো টাইগাররা। ছন্দে থাকা আনামুল হক বিজয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর আউট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মনে যথেষ্ট প্রশ্নের অবকাশ আছে। এই দুজন এলবির ফাঁদে আউট হয়েছে এমনটাই লেখা থাকবে স্কোরবোর্ডে। কিন্তু এর পিছনের কাহিনী বেশ বিতর্কিত।
গত মার্চ-এপ্রিলে সাউথ আফ্রিকা বনাম বাংলাদেশের ডারবান টেস্ট শেষে সাকিব আল হাসান একটা টুইট করেন। যেখানে তিনি কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় টেস্টে আবারও নিরপেক্ষ আম্পায়ারিংয়ে ফিরে আসার জন্য আইসিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কারণ সেই টেস্টে দুই সাউথ আফ্রিকান আম্পায়ার মারিস এরাসমাস ও এড্রিয়ান হোল্ডস্টোক যে ধরণের পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং করেছিলেন, তা দেখে গোটা ক্রিকেট বিশ্বই নড়েচড়ে বসে। তবে আপায়ারের সিদ্ধান্ত যে কেবল সেই সিরিজেই বাংলাদেশের বিপক্ষে এতো বাজেভাবে গিয়েছিল তা নয়। টাইগাররা টেস্ট ক্রিকেট শুরু করার পর থেকেই কম-বেশি এমনটা হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়টা আসতে পারত জিম্বাবুয়েকে হারানোরও দেড় বছর আগে যদি অশোকা ডি সিলভা চরম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত না দিত মুলতান টেস্টে। সেই একই বছর মাইকেল ভনের ইংল্যান্ডের সাথে ঢাকা টেস্টও ড্র করা অসম্ভব হয়ে যায়, ওই লঙ্কান অশোকার ভুল সিদ্ধান্তে। ২০১২-১৩ থেকে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয় রিভিউ সিস্টেম। তখন ধারনা করা হচ্ছিল এবার বাংলাদেশের দুঃখের দিন ফুঁড়বে। তবে রিভিউ সিস্টেমে কিছু যাদি-কিন্তুর মারপ্যাচ আছে। যেমন আম্পায়ার্স কল। একটা ৫০-৫০ চান্স আম্পায়ার্স কলের কারণে পক্ষে বা বিপক্ষে চলে যেতে পারে। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষের মিরপুর টেস্টে প্রথম জয় পায় টাইগাররা। তবে সেই প্রথমের স্বাদ আসতে পারত সিরিজের প্রথম ম্যাচ চট্টগ্রাম টেস্টেই। সেই ম্যাচের ১ম ইনিংসে ইংলিশরা ২১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর মঈন আলী খেলেন ৬৮ রানের এক ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস, তবে ৩ বার আম্পায়ার্স কল তার পক্ষে যায়। চাইলে অতীতের আরও অনেক উধহরণ দেওয়া যায়।
এবার লক্ষ্য করা যাক চলমান সেন্ট লুসিয়া টেস্টের প্রথম দিনে। কেমার রোচের একই ওভারে পরপর দুবার মাহমুদুল জয়কে আউট দেখান নিরপেক্ষ আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংঅর্থ। আর রিভিউতে দেখা যায় দুবারই বল স্টাম্প মিস করছে। লাঞ্চের পরে সবাই নতুন করে শুরু করলেও দুই আম্পায়াররা ছিলেন পুরোনো রূপে । ৩৪তম ওভারে অভিষিক্ত অ্যান্ডারসন ফিলিপের লো হয়ে আসা একটা বল দারুণ খেলতে থাকা আনামুলের পায়ে লাগলে স্বাগতিক আম্পায়ার জোয়েল উইলসন আঙুল তুলতে মোটেই দেরি করেন নি। তবে রিভিউতে দেখা যায় ইম্প্যাক্ট অফস্টাম্পের বাহিরে কিন্তু আম্পায়র্স কলে কাটা গেলেন বিজয়। এবার দৃশ্যপটে ইলিংঅর্থই। এরপরের ওভারেই নাজমুল শান্ত পরাস্থ হন কাইল মেয়ার্সের বলে। আবেদনের সাথে সাথেই ইংলিশ আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিলেন। রিভিউতে দেখা গেল অনেক হাউটে থাকা মেয়ার্সের করা বলটি একদম লেগস্টাম্প দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় বেলে চুমু খাচ্ছে। আবারও আম্পায়ার্স কলের ফাঁদ। এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরূপ পরিবেশের সাথে বিশাল প্রতিপক্ষ হয়ে ছিলেন দুই আম্পায়ারও।
আম্পায়াররা ইচ্ছে করে এমনটা হয়ত করেন না। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলোতো বাংলাদেশের বিপক্ষেই যাচ্ছে বহুদিন ধরেই। এমনিতেই আমরা টেস্ট ধুকতে থাকা দল, এরসাথে যদি এসব সমস্যা প্রতিনিয়ত থাকে তাহলে সেটা ৫ দিনের ক্রিকেটে ভালো করার অন্তরায়। প্রতি সিরিজ শেষেই টিম ম্যানেজার, কোচ এবং ক্যাপ্টেন সিরিজ রিপোর্ট লেখেন। সেখানে এই ব্যাপারগুলো অবশ্যই থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে এতোদিন ধরে মোকাবেলা করে আসা এই সমস্যাগুলো কি বিসিবি সঠিকভাবে জানাতে পারছে আইসিসি সভাগুলোতে? কারণ মাঠের সাথে সাথে ক্রিকেট যে কূটনীতিরও খেলা!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন