ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম মাহফুজুর রহমান বলেছেন, জনতা ব্যাংক একসময় উল্টো দিকে হেটেছে। কিন্তু গত তিন বছরে ব্যাংকের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। এই কৃতিত্ব আমরা নিতে চাই না। এজন্য আমি ব্যাংকের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দেব। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় এই উন্নতি ঘটেছে। বড় ঋণে না গিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, দেশে সম্প্রতি ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। এই খাতে ঋণ বিতরণ পেলে খাতটি আরও বড় হবে। রোববার (২৬ জুন) জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ১৫ তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সভাপতির বক্তব্যে ড. এস এম মাহফুজুর রহমান এসব কথা বলেন। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এমডি এন্ড সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং ব্যাংকের পরিচালক অজিত কুমার পাল এফসিএ, কে এম সামছুল আলম, মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, মো. আব্দুল মজিদ, রুবীনা আমীন ও মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক মো. হুমায়ূন কবীর, ব্যাংকের ডিএমডি মো. আব্দুল জব্বার, শেখ মো. জামিনুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, মো. কামরুল আহছান এবং সিএফও মো. নুরুল আলম এফসিএমএ, এফসিএ, কোম্পানী সচিব এমএইচএম জাহাঙ্গীরসহ মহাব্যবস্থাপকরা এজিএমে উপস্থিত ছিলেন। এজিএম শুরুর আগে ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্যাংক ভবনে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ১৯৭২ সালের ২৪ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে লিখে জনতা ব্যাংকের নামকরন করেন।
এমডি এন্ড সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকান্ডে আর্থিক ফলাফলের বিস্তারিত বিবরনসহ ভবিষ্যত কর্মপন্থা তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমান শতকরা ২৩ দশমিক ৩৩ ভাগ বেড়ে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংকের ইপিএস (শেয়ার প্রতি আয়) ২০২০ সালে ছিল ৬৪ পয়সা ২০২১ সালে তা ২০ গুন বেড়ে দাঁড়ায় ১২ টাকা ৯৮ পয়সা। ঋণ ও অগ্রীমের পরিমান ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ বেড়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে বিগত বছরের চেয়ে পরিচালন মুনাফা ২২ কোটি টাকা বেড়ে এবার এক হাজার দুই কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আর নিট মুনাফা অর্জিত হয়েছে ৩০০ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। অথচ গত বছর এ মুনাফার পরিমান ছিল ছিল ১৪ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। কৃষি খাতে বিতরনকৃত ঋণ ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা এবং এসএমই খাতে ঋণ ১১ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিনিয়োগ খাতে শতকরা ৩৪ দশমিক ০৯ ভাগ প্রবৃদ্ধিসহ অর্জিত হয়েছে ৩৬ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি সিকিউরিটিজ খাতে ৩০ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। মোট সম্পদ ১৯ দশমিক ৭৭ ভাগ বেড়ে ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সভায় মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ জানান, জনতা ব্যাংকের শ্রেনীকৃত ঋণ ২২ দশমিক ৬৯ হতে ১৭ দশমিক ৬১ ভাগে নেমে ১২ হাজার ৩১৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। শ্রেণীকৃত ঋণ হতে ২৮৩ কোটি এবং অবলোপনকৃত ঋণ হতে ৮৭ কোটি টাকাসহ মোট ৩৭০ কোটি টাকা নগদ আদায় সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে তদারকি বৃদ্ধি ও ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় বছর শেষে শ্রেণীকৃত ঋণ ক্রমান্নয়ে আরও কমে আসবে। আমদানি খাতে ৪৭ দশমিক ৭০ ভাগ এবং রপ্তানি খাতে ৮৪ দশমিক ০১ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ৫১ টি থেকে কমে ৩৯ টি শাখায় দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক বাবদ জনতা ব্যাংক সরকারি কোষাগারে মোট ৯০৬ কোটি টাকা জমা করেছে। আগের বছর জমার পরিমান ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। এছাড়া জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ১১৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। যা পূর্ববর্তী বছর ছিল ১৯ কোটি টাকা। আমাদের প্রতিটি ব্যাংক কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সঙ্কটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আর্থিক খাত পুনরুজ্জীবিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিগত বছরের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো কাটিয়ে জনতা ব্যাংক ২০২২ সালে আরও সাফল্যে দেখাবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন