লর্ডসে ২৭৭, ট্রেন্ট ব্রিজে ২৯৯-এর পর এবারও প্রায় তিনশর কাছাকাছি (২৯৬) রান তাড়া করে জয়। টেস্টের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে যা পারেনি কোনো দল, তা-ই করে দেখাল ইংল্যান্ড। এক সিরিজে তিনবার আড়াইশর বেশি রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে জয়ের অনন্য কীর্তি গড়ল তারা! দাপুটে পারফরম্যান্সে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল নিউজিল্যান্ডকে।
কদিন আগে লাল বলের ক্রিকেটে যারা ধুঁকছিল, সেই ইংলিশদের দায়িত্বে অধিনায়ক বেন স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পথচলাটা শুরু হলো দুর্দান্তভাবে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট উপহার দিয়ে সফরকারীদের তিন ম্যাচেই উড়িয়ে দিল তারা। গতকাল হেডিংলি টেস্টের পঞ্চম দিন ইংল্যান্ডের জয় ৭ উইকেটে। তাতে সামনে থেকে অবদান রাখলেন ঘরের দুই ছেলে জনি বেয়ারস্টো ও সাবেক অধিনায়ক জো রুট।
তিন ম্যাচ সিরিজের শেষটিতে ২৯৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংলিশরা জয়ের মঞ্চ গড়েছিল আগের দিনই। ২ উইকেটে ১৮৩ রানে চতুর্থ দিন পার করার পরই বোঝা গিয়েছে, অলৌকিক কিছু না ঘটলে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেবে ইংল্যান্ড। ঘটেছেও ঠিক তাই। শেষ দিনে তাদের দরকার ছিল স্রেফ ১১৩ রান, হাতে ৮ উইকেট। বৃষ্টির হানায় প্রথম সেশন ভেস্তে যায়। পরে খেলা শুরু হলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। ১ উইকেট হারিয়ে বাকি রান তুলে ফেলে তারা স্রেফ ১৫.২ ওভারে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ৪৪ বলে ৭১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন বেয়ারস্টো। এক ছক্কা ও ১১ চারে রুট জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন ৮৬ রান নিয়ে। যেখানে রুটের ৬৮.৮০ স্ট্রাইকরেটের অপরাজিত ইনিংসটি যদি হয় দলের হাল ধরার পরিচায়ক, অন্য প্রান্তে তাহলে নিশ্চিতভাবেই ‘স্পিডবোট’ চালিয়েছেন বেয়ারস্টো- স্ট্রাইকরেট ১৬১.৩৬! যদিও ১২ চারে ৮২ রানের ঝড়ো ইনিংসে ভিতটা গড়ে দেন অলি পোপ।
নিজের ঘরের মাঠে বেয়ারস্টোর ইনিংসটি নিশ্চিতভাবেই টেস্টে পাল্টে যাওয়া ইংল্যান্ডের ‘সাইনবোর্ড’ হয়ে থাকবে। এর পাশাপাশি ওলি পোপের কথা না বললে অন্যায়ই হয়। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫১.২২ স্ট্রাইকরেটের এই ব্যাটসম্যান ৮২ রান করেছেন ৭৫.৮২ স্ট্রাইকরেটে। ইংল্যান্ডও ৭ উইকেটের জয়ে টেস্টে নিজেদের রেকর্ড বইয়ের একটি জায়গা ওলট-পালট করেছে। টেস্টে এটি ইংল্যান্ডের সপ্তম সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নজির। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মাইকেল ব্রেসওয়েল ও টিম সাউদি।
জয়ের পর এই পাল্টে যাওয়ার কথা সরাসরি বলেননি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক রুট। কিন্তু কথায় ইঙ্গিতটা বোঝা গেল, ‘মনে হচ্ছিল, ৫০ ওভারের ম্যাচ। সে (বেয়ারস্টো) বেশ ভালো মেরে খেলেছে। অসাধারণ এক খেলোয়াড়। এই সিরিজে অন্যতম সেরা বিষয় হলো, খেলোয়াড়েরা কীভাবে খেলবে সে ব্যাপারে ক্রমশ আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে। আসলে উপভোগ করতে না পারলে খেলে কি লাভ? আমার মনে হয়, গত কয়েক সপ্তাহে দল যেভাবে খেলেছে তাতে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট এবং পরের সিরিজ নিয়েও বেনের (স্টোকস) যে পরিকল্পনা আছে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।’ ভারত, সাবধান! টেস্টের এই ইংল্যান্ড কিন্তু ভয়ংকর!
রুটের জায়গায় অধিনায়ক হলেন স্টোকস। ক্রিস সিলভারউডের জায়গায় কোচ হলেন ম্যাককালাম। তখন গুঞ্জন উঠেছিল, স্টোকস-ম্যাককালামের এই ইংল্যান্ড টেস্ট খেলার ধরন পাল্টে দিতে পারে, ২০১৫ বিশ্বকাপের পর ঠিক যেভাবে ওয়ানডেতে খেলার ধরন খোলনলচে পাল্টে ফেলেছিল এউইন মরগানের ইংল্যান্ড। স্টোকস ও ম্যাককালাম জুটি নিজেদের প্রথম মিশনেই ধারনাটা দিয়ে দিলেন- টেস্ট ক্রিকেটকে পাল্টে ফেলার ‘সাইনবোর্ড’ হতে পারে এই ইংল্যান্ড!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন