বেনাপোল অফিস : বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে ব্যবহৃত চারটি ক্রেনই নষ্ট হওয়ায় আমদানিকৃত মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় গত কয়েকদিন ধরে এ বন্দরের নষ্ট চারটি ক্রেন এখনো মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। যে কারণে বন্দরে শত শত পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে আছে বন্দরে। সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করেও আমদানিকৃত পণ্য নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ আমদানিকারকেরা।
সরেজমিন তদন্ত করে দেখা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারি পণ্য লোড-আনলোড করতে পাঁচটি ক্রেন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র চারটি ক্রেন। এর মধ্যে গত দেড়-দুই মাস ধরে বড় দু’টি ক্রেন নষ্ট হয়ে আছে। বাকি দু’টি ক্রেন কোনোরকম সচল থাকলেও এর মধ্যে একটি ক্রেন গত ৮-১০ দিন আগে নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি একটি ক্রেন কাজ করলেও সেটিও নষ্ট হয়ে পড়েছে।
ফলে বেনাপোল স্থল বন্দরে ব্যবহৃত চারটি ক্রেনই এখন নষ্ট। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বন্দরের ঠিকাদার কোম্পানির দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরে সকল প্রকার ভারি পণ্য লোড-আনলোড একেবারই বন্ধ হয়ে রয়েছে। এ কারণে বন্দরের প্রায় দুই-তিনশ’ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
ক্রেন নষ্ট হওয়াতে বেনাপোল বন্দরের ইকুইপমেন্ট ঠিকাদার কোম্পানি মেসার্স এসআইএস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম (জেভি) এর অফিসে তালা মেরে সকল কর্মকর্তা পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। অফিসের সবাই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন। বেনাপোল স্থলবন্দরের ১২ নং সেডের সামনে বন্দরের গ্যারেজের ক্রেন ম্যাকানিক জয়নাল জানান, ক্রেনের যন্ত্রপাতি না পেলে কিভাবে নষ্ট ক্রেন ঠিক হবে। তিনি জানান, ক্রেনের যন্ত্রপাতি পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে ক্রেন ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না।
ক্রেনচালক মিলন হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষ ক্রেন ঠিক না করলে আমরা কি করব। ক্রেনের কাসপেট, কপারড্রাম, ব্রেকসহ অনেক সমস্যা রয়েছে, যা ঠিক করতে সময় লাগবে। তারা জানান, ৬৫ মেট্রিকটন ও ৪০ মেট্রিকটনের দু’টি ক্রেন এক-দেড় মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সময় মতো বন্দর থেকে পণ্য খালাশ করতে না পারায় বন্দরে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পণ্যজট। সব মিলিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, বেনাপোল বন্দরের অবস্থা খুবই করুন। ক্রেন নষ্ট হওয়াতে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল বন্দর অচল হওয়ার উপক্রম। তিনি অবিলম্বে নষ্ট ক্রেন মেরামতের জন্য দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে জানান তিনি।
বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম জানান, স্থল বন্দরের ক্রেন নষ্ট হওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, বেনাপোল স্থল বন্দরে কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে আরও বেশি ক্রেন ও ফরকিপ সরবরাহের প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র সেন (উপ-সচিব) এ প্রতিনিধিকে জানান, ক্রেন নষ্টের বিষয়টি বন্দর চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। বন্দরে ঠিকাদার কোম্পানির পাঁচটি সচল ক্রেন দেয়ার কথা থাকলেও তারা চারটি ক্রেন দিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে সব কয়টি ক্রেন নষ্ট হয়ে গেছে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, এ বন্দরে আগে ভারি পণ্য কম আসত, এখন ভারি পণ্য বেশি আসাতে ক্রেনের প্রয়োজনীয়তা বেশি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে বেনাপোলে বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের কয়েকজন নেতা দু-একদিনের মধ্যে ক্রেন ঠিক না হলে বেনাপোল পোর্ট অচল হয়ে পড়বে বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন