রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

এবার রফতানি হচ্ছে কুমিরের গোশত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ মোবাশ্যারুল ইসলাম সবুজ, ভালুকা (ময়মনসিংহ) : উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় এলাকায় রেপটাইলস ফার্ম লিঃ-এর বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা কুমির প্রকল্প থেকে চামড়া রপ্তানির পর এবার কুমিরের মাংস রপ্তানির বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে জাপানে চামড়া রপ্তানির মাধ্যমে কুমির চাষে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বার উন্মোচন প্রতিষ্ঠানটি।
প্রায় ১২ বছর পূর্বে ভালুকা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭কি. মি. অদূরে উপজেলার ভরাডোবা-সাগরদীঘি সড়কে উথুরা ইউনিয়নের হাতীবেড় গ্রামে রেপটাইলস ফার্ম লিঃ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন পর্যন্ত জাপানে ২০১৪ সালে ৪৩০ ও ২০১৫ সালে ৪০০ চামড়া রপ্তানি হয়েছে। এ পরিমাণ বৃদ্ধি করে বছরে প্রায় দু’হাজার করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। চামড়ার পাশাপশি খুব শীঘ্রই মাংস রপ্তানির বিষয়টিও চিন্তা-ভাবনা চলছে। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৫ মে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে খামারটি প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইটিইএস-এর অনুমোদন লাভ করে। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়া থেকে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি পুরুষ এবং ৬০টি মাদী কুমির আমদানি করে প্রকল্পটি। ২২ ডিসেম্বর কুমিরগুলোকে অবমুক্ত করার মাধ্যমে খামারের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম অবমুক্তির সময় কুমিরগুলোর বয়স ছিল গড়ে ১০-১৪ বছর, লম্বায় ছিল ৭-১২ ফুট। দু’বছর পর ২০০৬ সনের আগস্ট মাসে খামারে প্রথম দুটি মাদী কুমির ডিম দেয়া শুরু করে। শুরু হয় প্রজনন উৎপাদন প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে বংশ বিস্তার করে খামারে প্রায় ৮০০ কুমিরে উন্নীত হয়। বিদেশে কুমির রপ্তানির চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে ২০০৯ সালের অক্টোবরে জার্মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয়। জার্মানের হাইডেল বার্গ ইউনিভার্সিটি কুমিরের শরীরের অংশ বিশেষ থেকে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক মেডিসিন আবিষ্কারের জন্য রেপটাইলস ফার্ম লিঃ সাথে কুমির আমদানি করার জন্য চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। পরের বছর ২০১০ সালে খামারের রপ্তানিযোগ্য প্রায় ৩০০ কুমিরের মধ্য থেকে ৬৯টি কুমির জার্মানে রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি ২৩১টি কুমির ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া চালানো হয়। জার্মানিতে ৭০ লাখ টাকায় ৬৯টি কুমির বিক্রয়ের মাধ্যমে কুমির চাষে প্রথম লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি কুমির রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় প্রথমবারের মতো নাম লেখায় বাংলাদেশ। রেপটাইল ফার্মের শুরুর কাহিনীটা ছিল এমন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুমিরের চামড়া, হাড়, মাংস, দাঁত ইত্যাদি বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। কুমিরের গড় আয়ু শত বছর । আমদানিকৃত কুমিরের মধ্যে খামারটিতে বর্তমানে ২৫টি পুরুষ কুমির রয়েছে। প্রতি মাসে বড় কুমিরদের খাদ্য চাহিদা প্রায় ২ টন মাংস। বন্য অবস্থায় ১০/১২ বছর বয়সে এবং ফার্মে ৬/৭ বছর বয়সের একটি স্ত্রী কুমির বছরে একবার (এপ্রিল-মে ) মাসে ৪০ থেকে ৫০টি করে ডিম দেয়। ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটতে শুরু করে। রয়েছে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটানোর ব্যবস্থাও। হাতিবেড় প্রকল্পটিতে বর্তমানে ৪০টি পুকুর এবং ১০টি হ্যাচারি রয়েছে। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার সারওয়াত কুমির ফার্ম থেকে দেড় কোটি মূল্যের ৪০টি ব্রিডার কুমির ক্রয় করা হয়েছে। খামারে এখন ৬০টি মা কুমির বিদ্যমান। পাশাপাশি খামারে উৎপাদিত ছোট-বড় মিলে প্রায় ২ হাজার কুমির রয়েছে। যেগুলোর দৈর্ঘ্যে তিন থেকে সাড়ে ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, কুমিরের কোনো কিছুই ফেলে দেয়ার নয়। চামড়া থেকে শুরু করে মাংস, দাঁত ও হাড় সব কিছুই বিক্রয়যোগ্য এবং প্রচুর চাহিদাসম্পন্ন। চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি ও থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যে কুমিরের মাংসের চাহিদা। বাংলাদেশ ছাড়াও বর্তমানে ব্যাংকক, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া চীনসহ অর্ধশত দেশে কুমিরের চাষ হচ্ছে।
প্রকল্প ম্যানেজার ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ সাংবাদিকদের জানায়, ২০০৪ সালে এটি দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে কুমিরের প্রজনন শুরু করে। ২০১৪-১৫ অর্থ-বছর থেকে তারা কুমিরের চামড়া রপ্তানি শুরু করে। শুরুতে খামারে দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেয়া হলেও এখন প্রজননের স্বার্থে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন