বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

কবিতাগুচ্ছ

| প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২২, ১২:১১ এএম

রকি মাহমুদ
জৌলুসহীন শ্রীহট্ট
নদী আমাদের প্রলুব্ধ করে একথা সর্বজন বিদিত
ঘরন্তর বর্ষার আগমন বার্তা সৃষ্টি করে নতুন উদ্দীপনা।
দেশী মাছের জলকেলি ধোলায় করে শিকারীর মগজ।
অথচ, এবার মৌসুম ছাড়াই প্লাবিত বসতভিটা, বিদ্যাপীঠ,
ধর্মালয়,কবরস্থান। ব্রহ্মপুত্র যেন আদর্শে মগ্ন উত্থিত যৌবনা
পতন নেশায় পেয়েছে যেনবা পরিণত দেহনী কুশিয়ারার
নিঃস্বতার তপ্ত তরঙ্গে ভাঙ্গনোমুখ তিস্তা, ধরলা, খোয়াই,সুরমা
প্রাচ্যের লন্ডন বিদগ্ধ শ্রীহট্ট জৌলুসহীন জলমগ্ন বধ্যভূমি
নিবিড় নিস্তব্ধ আব্দুল করিমের সুনামগঞ্জ,ক্ষতবিক্ষত নেত্রকোণা,হবিগঞ্জ। মুছে গেল গিরিবালার সুখ, সফুরার হাঁসের খামার, শত কৈবর্তের নৌকা পলকেই বিলীন শ্যামল বনানী, সোনালি ধান ক্ষেত, কৃষকের গোলা।

 


তুহীন বিশ্বাস
স্বপ্ন নয় সত্যি
স্প্যানে স্প্যানে স্বপ্ন-চূড়ায় আলোর ঝিলিক, দুই পাড়ের চিরস্থায়ী বন্ধনের স্বচ্ছ দৃষ্টান্ত স্পষ্ট,
অবাক তাকিয়ে পৃথিবী, উড়ছে ঝাণ্ডা গৌরবে, শত অভিযোগ অনুযোগ সব ধূলোয় লুটায়। গ্রামের করিম চাচা ফোকলা দাঁতে হেসে কয়- মুইও এইবার ঢাকা যামু পদ্মা সেতুর উপর দিয়া, মোগো গেদু এহন আইতে যাইতে শান্তি পাইবো।
শুনে গেদুর বউ মুচকি হেসে আঁচলে মুখ লুকায়। সাবাস বাংলাদেশ! তোমাকে সালাম জন্মভূমি, পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সেতু, স্বপ্ন নয় সত্যি।

 

মাসুদ চয়ন
বিরহী মেঘের সেদ্ধ প্রতিবিম্ব
থৈ থৈ অন্ধকারে প্রস্ফুটিত নাক্ষত্রিক ঢেউ,
সেই ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে মূর্ছিত চাঁদের জমায়িত কলঙ্কগুচ্ছ-
ঘাস ঝোপঝারের উদয় প্রান্তরে এক টুকরো বিরহী মেঘ জ্বলছে- ক্লান্তির নির্জন বেষ্টন মুমূর্ষু দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে-
সেই ক্লান্তির রন্ধনশালা বুকে নিয়ে আর কত পথ হাঁটা যায়! এভাবে অতিক্রান্ত হবে আলোক বর্ষ তবে কি! তবু চুপ প্রিয়তমা সুরেলা আলো? দেখা দেয়না ঝিঝি পোকার উপচয়ে-
রাতের নিতম্বে তন্দ্রাচ্ছন্ন দূর্বা ঘাসের বুকে নিজেকে সপে দিয়েছে মেঘ- চোখের তারায় স্বপ্ন ভঙ্গের প্রতিবিম্বগুলো প্রবল ঝলকানি হয়ে জ্বলছে -
কালগ্রাসী সংশয় ঘনীভূত হচ্ছে আরো, নীলাকাশ চুয়ে জল ঝরছেই-
চোখের কোটরে বিরহী শ্রান্ত প্রতিবিম্বটি সেদ্ধ হচ্ছে-

 


সোমা মুৎসুদ্দী
স্মৃতি ও নকশীকাঁথা
বাবার স্মৃতিগুলো নকশীকাঁথার মতো-
ফুটে আছে হৃদয় ক্যানভাসে
বাবার রোপণ করা গাছগুলো,
এখনো ছায়া দেয়, শান্তি দেয়,
এই ভরদুপুরের গরমে। যেন বাবা-ই ওদের দায়িত্ব দিয়েছিলো, আমাকে দেখভাল করার ! বাবা, ঐ আকাশেও কি কত-শত গাছ লাগিয়েছো ? করেছ সবুজ বনায়ন। তুমিহীন কেমন অগোছালো, এলোমেলো আমি ! ভাবতে পারিনা তোমার মতো, ঘটাতে পারিনা বোধের বিপ্লব। তুমিতো আমার কাছে সত্যিকারের হিরো, যে ভালোবাসতো মানুষ থেকে গাছ, গাছ থেকে প্রাণী।

 


রফিকুল নাজিম
চোখের জলে ব্যথা মুছে
কাঠগোলাপের শূন্যতা সবাই বুঝে না
এই যেমন বৃষ্টির অভাব বুঝে চৌচির জমিন
তৃষিত চোখজোড়া বুঝে প্রিয়জনের চোখের টান। তোমার চলে যাওয়ার দৃশ্য এঁকে রেখেছে এই মন শেষ বিকেলের ট্রেন, শূন্য প্ল্যাটফর্ম ও ভীড়ের শূন্যতা!
তোমার চলে যাওয়ায় পুড়ছে জারুলের বন, কৃষ্ণচূড়া ফুল, পরীবিলের সাত্ত্বিক মাছরাঙা পাখিটাও তোমার অভাবটা টের পায় আমার বুকের বাম অলিন্দ
সামাজিক দিনের শেষে নিঃসঙ্গ রাত নেমে আসে রোজ স্মৃতিগুলো বিষ ঢালে মনে; যন্ত্রণাগুলো আমাকে কাঁদায়।
সবাই বলে- চোখের জল নাকি ব্যথা মুছে,
কই- আমার বুকের ব্যথা মুছে না তো!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন